::: মোঃ শামছুল আলম চৌধুরী :::
জীবনের অনেক কিছুই মাঝে মাঝে কাকতালীয় হয়ে থাকে। কাকতালীয় হলো একটি ঘটনার সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত বা অনির্বাচিত কোন ঘটনা কিংবা তথ্যের সংমিশ্রন যা বারংবার ঘটে থাকে। অথবা কোন রকম যোগসূত্র ছাড়াই অনেক সময় এমন দুই বা ততোধিক ঘটনা ঘটে যার মধ্যে বিষ্ময়কর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মূলতঃ কাক ও তালের গল্প থেকেই কাকতালীয় বিষয়টি প্রচলিত হয়ে আসছে। কোন এক তাল গাছে বসে ছিল কাক, কাকটি হঠাৎ উড়ে গেল আর তখনি কিনা প্রমান সাইজের একটি তাল মাটিতে পড়ে গেল। মানুষ ভেবে ছিল কাকের খোঁচাতে হয়তো তালটি পড়ে ছিল। আসলে কি তাই! বাস্তবে ছোট্ট কাকটির পক্ষেই কখনও বড় তালটিতে মাটিতে ফেলে দেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এটি নিয়ে কল্পকাহিনীর তৈরি হতে বিলম্ব হয়নি তাই সেই থেকে কাকতালীয়ের উদ্ভব। এই কাতালীয় শব্দটিকে ইংরেজীতে Coincidence বলে।
আপনার জীবন নিয়েই যদি আপনি বিশ্লেষণ করতে থাকুন তাহলে দেখবেন এভাবে অনেক কাকতালীয় ঘটনা আপনার জীবনে রয়েছে। নিজের কথাই বলছি। অতিমাত্রায় মরিচ আমার অপছন্দের একটি খাদ্য। আস্ত মরিচের একটি কিংবা যদি এর কোন অংশ থাকে তবে তা ঘুরে-ফিরে আমার থালাতেই আসবে। কদ্দিন পূর্বেই আমার ছোট্ট নাতি তার থালায় মরিচ দেখতে পেয়ে বলল নানা “তোমার মরিচ আমার কাছে চলে এসেছে”। আমি বললাম “আমার কাছে বাকী অংশটি আছে”। সে বলল “এটি নিয়ে নাও তাতে পুরোটাই পাবে”। আমিওতো তোমার মত মরিচ খেতে পারিনা। শিশু ছেলেটি এমনিতেই খুবই বুদ্ধিমান আমার সাথে রসিকতা করাই ওর আনন্দ। এই হলো কাতালীয় মরিচ প্রাপ্তি।
ইতিহাসের সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য কাকতালীয় গঠনাটি ঘটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন এবং প্রেসিডেন্ট জন ফিতজেরাল্ড জ্যাক কেনেডি ছিলেন যথাক্রমে ১৬ ও ৩৫ তম প্রেসিডেন্ট। লিংকন ১৮৪৬ সালে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে নির্বাচিত হন এবং সরাসরি রাজনীতির ক্ষমতায় আসীন হন। আর কেনেডিও ঠিক ১০০ বছর পর ১৯৪৬ সালে একইভাবে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে লিংকন এবং কেনেডি প্রেসিডেন্টও হন ১০০ বছরের ব্যবধানে যথাক্রমে ১৮৬০ এবং ১৯৬০ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। Lincoln এবং Kannedy লিখতে উভয়টিতে সাতটি অক্ষরে প্রয়োজন হয়। উভয়ের প্রেসিডেন্টের উভয় একজন করে পুত্রসন্তানের মৃত্যু ঘটে। কাকতালীয় ভাবে তাঁদের মৃত্যুর উপাখ্যান আরো করুন। উভয়ের মৃত্যু ঘটে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ঘাতকের গুলি। উভয় প্রেসিডেন্টের এই গুলিও মাথার পেছনে আঘাত হানে। অস্ত্রটি ছিল টেলিস্কোপযুক্ত .২২ বোর রাইফেল। দিনটিও ছিল শুক্রবার। লিংকনের ঘাতক মূল নাম ছিল Wilkes ও কেনেডির ঘাতকের মূল নাম oswald। দুইজনের নামেই ছয়টি করে অক্ষর রয়েছে। লিংকনকে ও গুলি করা হয় একটি থিয়েটার হলে এবং গুলি করে ঘাতক একটি গুদামে পালিয়ে যায়। আর কেনেডিকে গুলি করা হয় একই গুদাম থেকে এবং গুলির পর ঘাতক ঢুকে পড়ে একটি থিয়েটার হলে। লিংকনের ও কেনেডির মৃতুর পর তাদের স্থলাভিষিক্ত হন অ্যানড্রে জনসন ও লিনদন বেনিস জনসন নামে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্টগণ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আব্রাহাম লিংকন এবং জন এফ কেনেডিই মূলত সেই ব্যক্তি, যাঁরা ১০০ বছরের ব্যবধানে আমেরিকান বাসিদেরকে অনেক সেবা দিয়ে আমেরিকাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ঘটনা পরম্পরায় অদ্ভুত মিল রয়েছে বলেই, এই হলো কাকতালীয়।
আবার ধরুণ চাকুরি জীবনের কথা। পদোন্নতির সময়ে কখনেই নিজের কর্মস্থলে থাকতে পারি নাই। ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ তারিখে সিনিয়র সহকারী কমিশনার (সিনিয়র সহকারী সচিব) হলাম। কর্মস্থল ছিল নেত্রকোনায় কিন্তু আমি পদোন্নতির দিন ছিলাম ঢাকায়। ২১ এপ্রিল ২০০৫ তারিখ উপ-সচিব পদে পদোন্নতি হলেও সেদিনও আমার কর্মস্থল জামালপুর ছেড়ে ঢাকায় ছিলাম। এভাবে যুগ্ম-সচিবের সময় চট্টগ্রামে কর্মস্থল থাকলেও পবিত্র রমজানের দিনে ১৮ জুলাই ২০১৩ তারিখে বান্দরবানের পথে ভ্রমণরত ছিলাম। তেমনি সর্বশেষ বাড়ী থেকে ঢাকায় ফির ছিলাম গাড়ীতে সংবাদ পেলাম অতিরিক্ত সচিবের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির। দিনটি ছিল ০৯ ফ্রেব্রুয়ারি ২০২৫। এভাবে বারবার কর্মস্থলের বাহিরে থেকে পদোন্নতির সংবাদ প্রাপ্তি যা কাকতালীয়েরই নামান্তর।
লেখক পরিচিত :
মোঃ শামছুল আলম চৌধুরী
অতিরিক্ত সচিব (অব:)
বিশেষ সংবাদদাতা, গোপালপুর বার্তা।