::: মোঃ আশরাফুল আলম :::
সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন (শুক্রবার) হলো অন্যতম। জুমা হলো আরবি শব্দ। যার অর্থ হলো একত্রিত হওয়া বা সমবেত হওয়া। মহান আল্লাহ তায়ালা ‘জুমা’ নামে স্বতন্ত্র একটি সূরাও নাযিল করেছেন। তাতে জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। এই জুমার দিনেই পৃথিবীর ইতিহাসের এমন কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটবে। যা কুরআন এবং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ সবদিক বিবেচনায় দিন সমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। তাই মুসলমানগণ জুমার দিনকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ তায়ালা জুমার নামাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি, নামাজ শেষ হলে আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) অনুসন্ধান করারও তাগিদ দিয়ে বলেন:
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوٓا إِذَا نُودِىَ لِلصَّلٰوةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلٰى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
অর্থঃ “হে মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা করো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝো।” [সূরা জুমুআহঃ আয়াত নং ৯]
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَانتَشِرُوا فِى الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থঃ “অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) তালাশ করো ও আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।” [সূরা জুমুআহঃ আয়াত নং ১০]
উল্লেখিত আয়াত দ্বয় আমাদেরকে এটাই শিক্ষা দেয় যে, যখনই মুয়াজ্জিন নামাযের জন্য আহ্বান করবে তখনই সকল কাজ বর্জন করে আল্লাহ স্বরণে মসজিদের দিকে অগ্রসর হতে হবে। কোনো প্রকার অবহেলা, অজুহাত চলবে না। নামাজ শেষ হলেই পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে হবে আল্লাহর অনুগ্রহ অর্থাৎ রিজিক অন্নেষণ করতে। যদি আমরা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে পারি তবেই মিলবে ইহলৌকিক এবং পরলৌকিক সফলতা।
জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াতের ফজিলত:
জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করার ফজিলত সমূহের মধ্যে অন্যতম দুটি ফজিলত হলো-
১. “আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমাহ্ হতে আগামী জুমাহ্ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে।” [মিশকাত ২১৭৫]
২. “যে ব্যক্তি সুরা কাহাফ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্য এমন একটি নুর হবে, যা তার অবস্থানের জায়গা থেকে মক্কা পর্যন্ত আলোকিত করে দিবে। আর যে ব্যক্তি উহার শেষ দশটি আয়াত পাঠ করবে, তার জীবদ্দশায় দাজ্জাল বের হলেও সে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।” [সিলসিলায়ে সহীহা ২৬৫১]
জুমার দিন আছরের পর দরূদ পড়ার বিশেষ ফজিলত:
“হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন আছর নামাজের পর স্বীয় স্থানে বসা অবস্থায় ৮০ বার নিম্নোক্ত দরূদ শরিফ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে এবং ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে।” (আফদালুস সালাওয়াত: ২৬)
দরূদটি হলো: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়াসাল্লিম তাসলীমা।’
জুমার দিনের ঐতিহাসিক ঘটনা:
“হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমুআর দিন সর্বোত্তম। এই দিন আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ কিয়ামতও সংঘটিত হবে এ দিনেই।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৫৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৪০৯; জামে তিরমিযী, হাদীস ৪৮৮]
সুতরাং সকল মুমিন-মুসলমানের উচিত, জুমুআর দিনকে গুরুত্ব দেয়া এবং বেশি বেশি দরূদ শরিফ পাঠ করা। কেননা রাসূল (সা:) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, তার বিনিময়ে আল্লাহ্ তার উপর দশবার রহমত প্রেরণ করবেন।” [মুসলিম ১/২৮৮, নং ৩৮৪]
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জুমার দিনকে নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করে উভয় জগতে সফলতা অর্জন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
লেখা : মোঃ আশরাফুল আলম
শিক্ষার্থী : তা‘মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা টঙ্গী।
অনার্স ২য় বর্ষ। আল-কোরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ।
স্থায়ী ঠিকানা : নিয়ামতপুর (বাঘবেড়), হাদিরা বাজার ১৯৯০, গোপালপুর টাঙ্গাইল।