::: মোঃ আশরাফুল আলম :::
হিজরী সনের ৯ম মাস হলো ‘রমজান’। এই রমজান মাস ব্যাপী রোজা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। রমজান মাসকে আত্মশুদ্ধি বা গুনাহ মাফের মাসও বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা এ মাসকে রহমত এবং বরকত দিয়ে ঢেলে সাজিয়েছেন। এ মাসে একটি নেক কাজের বদলা ৭০ গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তাই রমজানে বেশি বেশি নেক আমলের মাধ্যমে অশেষ সওয়াব অর্জন করার সুযোগ রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন –
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার। [আল বাকারাঃ আয়াত নং ১৮৩]
উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ রমজানের রোজা ফরজ করেছেন। নামাজ পড়া যেমন ফরজ, ঠিক একইভাবে রোজা রাখাও ফরজ। নামাজের বিধান হলো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত। আর রোজা রাখার বিধান হলো রমজান মাসব্যাপী। প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী, স্বাধীন যেকোনো মুসলিম নর-নারী রমজান মাসে উপনীত হলে তার জন্য রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন –
فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ
অর্থঃ কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। [আল বাকারাঃ আয়াত নং ১৮৫]
রোজাদারের প্রতিদান :
রোজাদারের প্রতিদান আল্লাহ নিজে দিবেন এই মর্মে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন –
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ إِنَّ الصَّوْمَ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ”
“রাসূল (সা.) বলেছেন : আল্লাহ বলেন, রোজা আমার জন্য এবং এর প্রতিদান আমিই দিব।”
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজ হাতে দান করবেন। অথবা রোজাদারের প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ। স্বয়ং আল্লাহ্ যদি বান্দার জন্য প্রতিদান হয়ে যায়, তাহলে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে!
অন্য হাদীসের বর্ণনায় এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
وَمَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
“আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমযানের সাওম পালন করবে, তাঁর অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০১]
নারীদের ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে–
“যে মহিলা যথারীতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজান মাসের রোজা রাখে, নিজের সতীত্ব রক্ষা করে চলে এবং স্বামীর পূর্ণ আনুগত্য (শরীয়ত নির্দেশিত) করে, তার ইচ্ছানুযায়ী, সে জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।” [মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৬৬১]
রোজাদারের জন্য জান্নাতে বিশেষ দরজা :
জান্নাতের একটি দরজা আছে। যার নাম রাইয়ান। এই দরজা দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদারের প্রবেশাধিকার রয়েছে। অন্য কাউকে এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাঁরা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাঁদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৬]
রমজানে দান-সদকার ফজিলত :
দানের মাধ্যমে বান্দার বিপদাপদ দূরীভূত হয়ে যায়। রমজান মাসে দান-সদকার সাওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তাই এ মাসে মুমিনদের অবশেষ সাওয়াব অর্জনের সুযোগ রয়েছে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে– “রাসূল (সা.) বলেছেন, রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল।” [শোয়াবুল ইমান ৩/৩০৫]
অপর এক বর্ণনায় আছে– রমজান মাসে রাসূল (সা.) অন্য মাসসমূহের তুলনায় অত্যধিক পরিমাণে দান-সদকা করতেন। আর এই দান-সদকার পরিমাণ এত বেশি ছিল যে, বাতাসের গতিবেগের চেয়েও তা দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হতো। [সহীহ বুখারী : কিতাবুস সাওম]
রমজান এমন একটি বরকতময় মাস, যে মাসকে আল্লাহ তায়ালা রহমত এবং বরকত দিয়ে ভরপুর করে দিয়েছেন। তাই অবহেলা না করে এ মাসকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানো উচিত।
লেখক পরিচিতি :
মোঃ আশরাফুল আলম
শিক্ষার্থী: তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা টঙ্গী।