আজ || রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
শিরোনাম :
  রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডিজাইনকৃত পোশাক নিয়ে ফ্যাশন প্রদ‍‍র্শনী       গোপালপুরে দারোগার মাথা ফাটানোর ঘটনায় ১৬ জনকে জেলহাজতে প্রেরণ       গোপালপুরে দারোগার মাথা ফাটিয়েছে সন্ত্রাসীরা; গ্রেফতার ১০       গোপালপুরে প্রধানমন্ত্রীর ফেয়ার প্রাইজের চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ       গোপালপুরে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেনের পদত্যাগ       উত্তর টাঙ্গাইল নূরানী মাদরাসার বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান       গোপালপুরে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উদযাপন       গোপালপুরে নানা আয়োজনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত       গোপালপুরে পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় শিশু ও নারী নিহত       গোপালপুরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নগদ অর্থ প্রদান    
 


একজন নিশীথিনী

: স্নিগ্ধা আফসানা রোশনী :

সন্ধায় তরুকে বাইরে বের হবার জন্য তৈরী হতে দেখে আজ মবিন সাহেব অবাক হলেন না! আগে হতেন, অবাক হয়ে ভাবতেন এই ভর সন্ধায় তার মেয়েটা একা যাচ্ছে কোথায়?এই সময়ে মেয়েদের ঘর থেকে বের হতে হয় না,নিয়ম নেই।মবিন উদ্দিন এসব নিয়ম কানুন খুব বিশ্বাস করেন।কিন্তু তার মেয়েটা মানে না। ভাবেন বলবেন কিন্তু বলা হয়না,মেয়েটা কষ্ট করে রোজগার করে তাকে হুটহাট কিছু বলা ঠিক না। তবে তিনি বলবেন,সময় হোক। সময় ই হল আসল। তাঁর এককাপ চা খেতে ইচ্ছা করছে, তিনি বুঝতে পারছেন না মেয়েটাকে এখন বলা ঠিক হবে কিনা। বেচারি বাইরে যাচ্ছে। তবে তরুকে বললেই হবে, সে চট করে বানিয়ে দেবে। মেয়েটা এত তাড়াতাড়ি চা কেমন করে বানায়, এটা একটা রহস্য। মবিন সাহেব প্রায় ই ভাবেন জিজ্ঞেস করবেন, করা হয়নি এখনো। আজ থাক, অন্য কোনদিন করলেই হবে। তরু তার চুল ঠিক করতে করতে বাইরে এল। মবিন উদ্দিন চায়ের কথা কি বলবেন? আচ্ছা থাক, মেয়ে যাচ্ছে যাক।

বাবা, তোমার কি কিছু লাগবে? চা দিয়ে যাবো? তিনি তৃপ্তির হাসি হাসলেন, এই না হলে মেয়ে! বাবার মনের কথা ঠিক বুঝে ফেলেছে। তরু বাবার হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিল, ‘বাবা, আমি একটু বের হচ্ছি। মবিন সাহেব চায়ে চুমুক দিয়ে তৃপ্তির শব্দ করলেন, ‘মাগো, সন্ধ্যা বেলায় বের হতে নেই। যাবি কোথায়? সীমাদের বাড়ি? তরু নিচু গলায় বলল, ‘বাবা আমি চলে আসব।

আচ্ছা যাও মা, আল্লাহ ভরসা। বাড়ির বাইরে এসে বড় করে নিশ্বাস নিল তরু। বাবার সামনে থেকে সরে আসতে পেরে সে স্বস্তি বোধ করল, মিথ্যা বলতে তার ইচ্ছা করেনা। তাই বাবাকে বলা হয়নি সে রাতে ফিরবেনা, ফিরতে পারবেনা। সে যদি ফেরে তবে কাল হাঁড়িতে চাল ফুটবেনা। তার আর ভাল লাগেনা। রাস্তার এই ধারটা কেন যেন খুব নির্জন থাকে, কেমন একটা শান্ত শান্ত ভাব। হাফিজ উদ্দিন নিয়ম করে এখানেই দাঁড়ায়। প্রতি সন্ধ্যায়।সন্ধ্যা থেকে রাতে। গভীর রাত হয় তবু সে নড়েনা। মেয়েটি আসে সন্ধ্যার পরে পরে। কখনো রাত গভীর হলে। সোডিয়াম বাতিতে যখন শহরটা রহস্যময় সে তখন আসে। ল্যাম্পপোস্টের সাথে নিজেকে মিশিয়ে দাঁড়ায়। শান্ত চেহারার একটা মেয়ে। বেশিরভাগ সময় যার পরনে কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি থাকে। মুখ-চোখ শুকিয়ে এতটুকু হয়ে থাকে তার! ঘোমটা মাথায় তাকে কেমন যেন গ্রামের নতুন বউ বউ লাগে। হাফিজ উদ্দিন আসে সন্ধ্যার আগেই যেন রাস্তার নির্জন অংশটুকুর দখল কেউ না নিয়ে নেয়! এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা। লোকজন আগে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাত,এখন তাকায় না।কত কিসিমের পাগল এই শহরে আছে। এ-ও হয়ত পাগল। কোন কোন সন্ধ্যায় রাস্তার দুপাশে দুজন মানুষ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে; হয়তো কেউ কারো দিকে তাকায় বা তাকায় না। তরুর বয়সী মেয়েদের কত শাড়ি থাকে। তরুর মাত্র তিনটি, যার দুটোই সবুজ, কলাপাতা রঙের। মায়েরা তার মেয়েদের সাজাতে ভালোবাসেন, তরু তার মায়ের মুখ মনে করার চেষ্টা করে। মহিলা নেই বলে তাকে সাজানোরও কেউ নেই! মাঝে মাঝে তার মনে হয় মা মরে গিয়ে হয়ত ভালোই করেছেন। একজনের চোখে তো তার জন্যে ঘৃনা দেখতে হচ্ছেনা! কিংবা কোনো মা-ই হয়তো তার সন্তানকে ঘৃনা করেননা। রাতের রহস্য বাড়ে, রাত গভীর হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা সেই ল্যাম্পপোস্টের গায়ে মিশে তরু দাঁড়িয়ে থাকে। কেউ আসে, ডাকেৃচলে যায়। পরদিন তরু আবার আসে। কলাপাতা রঙের শাড়ি জোছনার খুব পছন্দ। হাফিজ উদ্দিন তরুকে দেখে। জোছনার মুখটা মনে পড়ে। এখন ঠিক ঠিক মনেও  পড়েনা। কত বছর হল সে নেই! তিন না সাড়ে তিন? এই মেয়েটা যখন কারো গাড়িতে ওঠে হাফিজ উদ্দিনের বুকটা যেন কেমন করে। মেয়েটার শুকনো মুখ তার যন্ত্রনা বাড়ায়। তার খুব ইচ্ছা করে এগিয়ে মেয়েটার মাথায় হাত রাখতে।বড় মায়া লাগে তার। বড় মায়া লাগে।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!