আজ || রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
শিরোনাম :
  গোপালপুরে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা       ধনবাড়ি মডেল প্রেসক্লাবে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদ ও দোয়া       গোপালপুরে মরহুম আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট       টাঙ্গাইল-২ আসনে গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী শাকিল উজ্জামান       গোপালপুরে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ       গোপালপুরে শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন সালাম পিন্টু       গোপালপুরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ       গোপালপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় জুলাই শহীদ দিবস পালিত       গোপালপুরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল       গোপালপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় ১২ মামলার আসামি চাকমা জাহাঙ্গীর নিহত    
 


নারী এবং সম্মান -দিনা ফেরদৌস

আমার বান্ধবী বাম রাজনীতি করতো। তার সাথে প্রায়ই তাদের পার্টি অফিসে যেতাম। মাঝে মধ্যে মিছিলেও যেতাম। মুক্ত মনের, মুক্ত চিন্তা বুদ্ধির লোকজনদের সব সময়ই ভাল লাগে আমার। অফিসের যিনি প্রধান তার সাথে একটা ভাল সম্পর্ক হয়ে উঠেছে। আমার পড়াশোনা, ফ্যামিলি সম্পর্কে জানেন।

একদিন ‘ল’ কলেজ থেকে ক্লাস করে পার্টি অফিসে গেলাম, সঙ্গে সেদিন আমার বান্ধবীটা ছিল না। যেতেই সেই বড় ভাই জিজ্ঞেস করলেন- কেমন আছো দিনা, ‘ল’তে ভর্তি হয়েছো খুব ভাল। অফিসে আর একজন বড় ‘বাম’ নেতা ছিলেন। তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন এ হচ্ছে আমাদের অমুকের বান্ধবী দিনা। এবার ‘ল’ তে ভর্তি হয়েছে। এরপর থেকে সেই ভাই আমার সাথে গল্প জুড়ে দিলেন। বাড়ি কই, বাসা কোথায়, ভাই-বোন কয়জন? বাবা কি করেন, ভাই-বোন কি করে? আমাদের পাড়ার নাম শুনে সে পাড়ায় তার পরিচিত লোকজন কে বা কারা আছে তাদের চিনি কি না। আরো হাজারও প্রশ্ন। আমি একটু বিব্রতই হচ্ছিলাম। অচেনা একটা মানুষের সাথে প্রথম দেখাতেই এতো ব্যক্তিগত প্রশ্নের সম্মুখীন।

কিছুদিন পরে আমার বান্ধবী বললো, এই ভাই তার জন্য বৌ খুঁজছেন। বুঝতে বাকি থাকলো না, কেনো সেদিন এতো প্রশ্ন করেছিলেন। বান্ধবীকে সে ব্যাপারে আর কিছু বলিনি।

যারা এইসব বাম-টাম করে তাঁদের আমরা প্রগতিশীলই মনে করি। কিন্তু তিনি যখন আমাকে এতো গুলো প্রশ্ন করলেন একবারও বুঝার চেষ্টা করলেন না যে, একটা অপরিচিত লোককে আমি এতোসব ব্যক্তিগত তথ্য দিতে আগ্রহী কি না। তার যদি আমাকে পছন্দ হয়েই থাকে আমার তো তাঁকে পছন্দ নাও লাগতে পারে সেটাও ভাবার প্রয়োজন ফীল করেননি। আর তার সম্পর্কে যেখানে আমি বিন্দুমাত্র কোন আগ্রহ প্রকাশ করছি না, সেখানে আমার সম্পর্কে এতো আগ্রহ প্রকাশ অযৌক্তিক বলেই আমি মনে করেছি।

কথা হচ্ছে যে ভাই নারীর অধিকার, নারীর স্বাধীনতা নিয়ে আন্দোলন করেন, সে একটা নারীর ব্যক্তিগত বিষয়ে এতোটা প্রশ্ন করলেন, একবার বুঝার চেষ্টাও করলেন না ব্যক্তিগত বিষয়ে সে উত্তর দিতে আগ্রহী কি না। নিজেকে ধরেই নিয়েছেন খুব যোগ্য ব্যক্তি। যখন কোন নারীকে একটু চোখে লাগবে তাঁকে সব ধরনের প্রশ্ন করার অধিকার রাখেন। আমার সব রকম তথ্য নিয়ে যদি দেখেন সব ঠিকঠাক তো প্রস্তাব পাঠাবেন আর আমি কিছু জানবোই না। যখনই কোন পুরুষ নারী অধিকার নিয়ে কিছু বলে আমার সংশয় হয়, সে ব্যক্তি জীবনে এই কথাটি বিশ্বাস করে’তো।

অনেক পুরুষই বলেন, ‘আমরা মেয়েদের সম্মান করি। তবে সব মেয়েরা এক রকম না, কিছু খারাপ মেয়েদের জন্য ভাল মেয়েদেরও বদনাম হয়’। খারাপ মেয়ে বলতে কিছু আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। মানুষ ভাল-মন্দ, দোষে-গুনে মিলায়ে আছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সম্পর্ক জনিত কোন কারনেই আমরা মেয়েদের খারাপ বলে থাকি (হতে পারে; প্রেম, পরকীয়া, পতিতাবৃত্তি)যা কিছু পুরুষ ছাড়া সম্ভব না। কোন নারীকে পতিতা বললেও কোন পুরুষকে আমরা পতিত পুরুষ বলি না। কোন পুরুষের যুক্ততা ছাড়া কোন নারী খারাপ হতে পারে না।

তাই নারীর সম্মান শুধু মুখে মুখে দিলেই হবে না, কাজেকর্মেও তার প্রমাণ লাগে। আর নারীর সম্মান বলতে আসলে কি বোঝায় সে সম্পর্কে ধারনা থাকাটাও জরুরি। আমাকে সম্মান দেখাতে যেয়ে যখন বলা হয় কিছু খারাপ মেয়ে আমাদের সমাজে আছে, সব মেয়ে সমান না। তখন বেশিরভাগ মেয়েরাই পুরুষের মুখ থেকে নিজের ভালত্যের সনদ পেয়ে খুশি হলেও আমি হই না, বা এতে খুশি হওয়ার কোন কারন মনে করিনা। আমার অভিধানে খারাপ মেয়ে বলে কিচ্ছু নেই।

কোন পুরুষ যেখানে কোন মেয়ের চরিত্রের সনদ দিচ্ছে সেখানে ভাল হলেও আমি তা মেনে নিতে অনাগ্রহী। কারন নারীর চরিত্রের সনদ দেবার অধিকার কোন পুরুষের নেই। মানুষ হিসাবে দোষ-গুণ খুঁজে বের করা আর শুধুই নারী হিসাবে দোষ-গুন খুঁজে বের করা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।

নারীদের এতো সহজলভ্য ভাবাটাও তার প্রতি বিশাল অসম্মানের।

লেখক : দিনা ফেরদৌস (নিউইয়র্ক প্রবাসী)

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!