আজ || রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
শিরোনাম :
  গোপালপুরে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা       ধনবাড়ি মডেল প্রেসক্লাবে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদ ও দোয়া       গোপালপুরে মরহুম আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট       টাঙ্গাইল-২ আসনে গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী শাকিল উজ্জামান       গোপালপুরে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ       গোপালপুরে শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন সালাম পিন্টু       গোপালপুরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ       গোপালপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় জুলাই শহীদ দিবস পালিত       গোপালপুরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল       গোপালপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় ১২ মামলার আসামি চাকমা জাহাঙ্গীর নিহত    
 


ঘুরে আসুন সেন্ট মার্টিন ও ছেড়া দ্বীপ

জয়নাল আবেদীন :

IMG_1052প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। বাংলাদেশের সবচেয়ে চমকপ্রদ পর্যটন কেন্দ্র। বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠা হাজারো বছরের প্রাচীন এ দ্বীপের চোখভুলানো দৃশ্য যে কারোরই মন কেড়ে নেয়। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। দুদশক আগেও কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা থেকে ট্রলারে মানুষ সেন্টমার্টিন যেতো। এখন কেয়ারি সিন্দবাদসহ তিনটি বড় জাহাজ প্রতি দিন সকাল সাড়ে নয়টায় টেকনাফ ছেড়ে যায়। আড়াই ঘন্টায় সেন্টমার্টিন পৌঁছে। পর্যটক নিয়ে দুপুর তিনটায় টেকনাফের উদ্দেশ্যে আবার ছেড়ে আসে সেন্টমার্টিন। পুরো তিনঘন্টা দ্বীপ ঘুরে দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। কক্সবাজারের সাথে সড়ক ও আকাশ যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় সেন্টমার্টিনে পর্যটকের সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে বলে জানান বেসরকারি পর্যটন সংস্থা ‘সেন্টমার্টিন আইল্যান্ড’। এর কর্ণধার আরিফ হাসান জানান, পর্যটন মৌসুমে টেকনাফ হয়ে জাহাজে করে প্রতিদিন দু থেকে আড়াই হাজার দেশিবিদেশি পর্যটক সেন্টমার্টিন যাওয়াআসা করেন। এর বাইরে কেউ কেউ ট্রলার ঝুঁকি নিয়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেন। গত ২৮ মার্চ সোমবার গোপালপুর প্রেসক্লাবের বার্ষিক শিক্ষাভ্রমনে সহকর্মীদের নিয়ে কেয়ারি সিন্দবাদ জাহাজে সেন্টমার্টিনে যাওয়ার পথে পর্যটকদের কিছু অদ্ভুত আচরণ লক্ষ্য করেন প্রতিবেদক। টেকনাফ বন্দর ও নাফ নদী অতিক্রমের পর সমুদ্রের বুকে জাহাজ ভাসার পর ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসছিল সামুদ্রিক গাংচিল। জাহাজের উপর তলা থেকে পর্যটকরা চানাচুর, বিস্কুট আর চিপসের টুকরো ছুঁড়ে দিচ্ছিল-আর দল বেঁেধ উড়ে এসে গাংচিলরা হঁড়োহুড়ি করে লুফে নিচ্ছিল। সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পোঁছার আগ পর্যন্ত এ দৃশ্য প্রতক্ষ্য করা যায়। কথা হলো জাহাজের নাবিক আবুল কালামের সাথে। জাতে রোহিঙ্গা। টেকনাফে বাস করছেন ১৯৮০ থেকে। জাহাজে চাকরি ১৩ বছর আগে। তিনি জানান, জাহাজে বেশকটি স্থানে সতর্ক বাতা লেখা রয়েছে। সমুদ্রের প্রাণীকে কোনো খাবার ছুঁড়ে দিবেননা। সমুদ্রে কোনো আবর্জনা ফেলবেন না। খাবার পানির শূণ্য বোতল বা ফাস্টফুড়ের প্যাকেট ও পলিথিন সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলবেন না। ড্রামে উচ্ছিষ্ট ফেলুন। পরিবেশ দূষন না করার জন্য মাইকে একাধিকবার ঘোষনাও দেয়া হয়। কিন্তু পর্যটকরা এর তোয়াক্কা না করে অনবরত ছিটাচ্ছিল জাঙ্কফুড়। অনেকটা তামাশাচ্ছলে। গাংচিলের ফাস্টফুড খাওয়ার দৃশ্য ডিজিটাল ক্যামেরায় ধারণ করছিল অনেকেই। যেন উৎসব। জাহাজের সারেং হোসেন জামাল জানান, ‘প্রকৃতির নির্মল পরিবেশে এসে মানুষ কতটা নোংরামি করতে পারে তা স্বচক্ষে দেখুন।’ প্রতিদিন তিনচার হাজার মানুষ জাহাজে যাওয়া আসার সময় প্রত্যেকে যদি গড়ে একটি করে পানির বোল ও ফাস্টফুড়ের শূণ্য প্যাকেট সমুদ্রে ফেলে দেয় তাহলে বছরে কি পরিমান পলিথিন ও প্লাস্টিকজাত আবর্জনা সমুদ্রের বুকে জমা হয়। জাহাজের আরেক নাবিক ময়নাল হোসেন জানান, সমুদ্রের গাংচিলরা মাছ বা সামুদ্রিক প্রাকৃতিক খাবার খেতে অভ্যস্ত। মানব শরীর যদি জাঙ্কফুড ভক্ষনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়-তাহলে সমুদ্রের গাংচিলরা এসব খাবার খেয়ে কেন ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা? জাহাজ থেকে খাবার ছোঁড়া নিয়ে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান তিনি। সেন্টমার্টিন ঘাটে জাহাজ ভেড়ার পর অনেকে সরাসরি দ্বীপে নামেন। তবে জাহাজ ঘাট থেকে দেড় হাজার টাকা ভাড়ায় স্পিডবোট নিয়ে ছেড়া দ্বীপে যাওয়া যায়। সেন্টমার্টিন থেকে ছেঁড়াদ্বীপ একটি চ্যানেল দ্বারা বিভক্ত। ভাটার সময় এ চ্যানেল জেগে উঠে। তখন একদেড় ঘন্টা পায়ে হেয়ে সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়া দ্বীপে যাওয়া যায়। স্টেমার্টিন থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া ভূখন্ডের নাম ছেঁড়া দ্বীপ। ছেঁড়া দ্বীপ বামে আরেকটি দ্বীপ রয়েছে যার নাম নিঝুম দ্বীপ। এটি অবশ্য স্থানীয়দের দেয়া নাম। স্পিডবোট থেকে ছেঁড়া দ্বীপে নামার পর দেখা হলো সেন্টমার্টিনের দক্ষিন পাড়া মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ ইসলামের সাথে। তিনি জানান, ছেড়া দ্বীপের পুরোটাই প্রবাল দিয়ে গড়া। নানা রংয়ের পাথর এখানে দৃশ্যমান। ভাটার সময় দুইতিন কিলো পর্যন্ত দেখা যায় এসব প্রবাল। পর্যটকরা এসব পাথরের উপর দিয়ে হেটে আনন্দ অনুভব করে। ছেঁড়া দ্বীপের মুল অংশ কেয়া ফুলের বিশাল বাগানে ঘেরা। এ দ্বীপে একটি মাত্র পরিবার বাস করে। পরিবার প্রধানের নাম সাদ্দাম হোসেন। পিতামৃত হোসেন আলী। সাদ্দাম হোসেন জানান, এটি একদম নির্জন দ্বীপ। উত্তরদক্ষিনে দুই কিলো দীর্ঘ। অনেকটা লম্বা চেলির মতো। সেন্টমার্টিন সব সময় মানুষের কোলাহলে পরিপূর্ণ থাকলেও ছেড়া দ্বীপ এর বিপরিত। সাদ্দাম হোসেনের সাথে থাকেন তার মা রাহিমা বেগম। আর ছোট দুই ভাই। কেয়া বাগান ঘেষে পলিথিনে ছাওয়া একটি ঘরে তাদের বসবাস। ঘরের সাথেই দোকান। মূলত ফাস্টফুড়ের দোকান। সাথে ডাব ও চা বিক্রি করেন। সাদ্দাম জানান, এ দ্বীপে সাধারনত মানুষ বাস করেনা। তবে তার বাবা আজ থেকে তিরিশ বছর আগে এ দ্বীপে এসে আস্তানা গাড়ে। এখানেই তার তিনভাইয়ের জন্ম। বাবা তিন বছর আগে মারা গেছেন। এখন তিনি সংসারের হাল ধরেছেন। পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন ৫/৬ হাজার টাকা বিকিকিনি হয়। ৬ মাসের রোজগার দিয়ে অবশিষ্ট সারা বছর চলতে হয়। সাধারন আবহাওয়া বিগড়ে গেলে সাময়িক দুএকদিনের জন্য ছেঁড়া দ্বীপ ছেঁড়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেন্টমার্টিন চলে যায়। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে আবার চলে আসে ডেরায়। সাদ্দাম হোসেন জানান, অনেক পর্যটক এ নির্জন দ্বীপে রাত কাটাতে আসেন। ত্রিপল দিয়ে তাবু খাটিয়ে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সমুদ্র থেকে তাজা মাছ তুলে তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। জোয়ারের সময় সমুদ্রের গর্জন এখানে ভয়ানক রুপ ধারন করেন। সমুদ্রের এ রুদ্রমূর্তি অবলোকন করার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা তার আতিথ্য গ্রহন করেন। পাঠক আপনারা কেউ সাদ্দাম হোসেনের আতিথ্য গ্রহন করতে চাইলে যোগাযোগ করুন ০১৮১৫০৬৬৪০ নাম্বারে। স্পিডবোট থেকে নেমে প্রবাল পাথরে পা ফেলে সামনে এগুতেই দেখা মিললো মৃত তিমির। চর্তুদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দ্বীপের একমাত্র বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন জানান, মাঝেমধ্যেই এখানে মৃত তিমি, কচ্ছম আর সামুদ্রিক মাছ ভেসে উঠে। এখানে কচ্ছপের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ বিষয় নিয়ে গবেষণা করছে পরিবেশ বিষয়ক একটি এনজিও।
প্রতিবেদক:
জয়নাল আবেদীন, গোপালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি, দৈনিক ইত্তেফাকের স্থানীয় সংবাদদাতা এবং মধুপুর কলেজের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!