আজ || মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শিরোনাম :
 


এবারের স্বাধীনতার মাসের অপমান

BABY LAND Collection- 2011 (1)

অধ্যাপক ড. শেখ জিনাত আলী

এ বার গেল ৪৪ তম আমাদের স্বাধীনতার মাস। এ বারের মাসটির কটি বৈশিষ্ট্য আমার কাছে স্পষ্ট প্রতীয়মান হলো। স্বাধীনতা শব্দটি উচ্চারণ করা যত সহজ তাকে রক্ষা করা ততোধিক কঠিন। স্বাধীনতা মানে যা ইচ্ছে তাই করা নয়। আমি যে বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই তার মধ্যে এই কাঠিন্যতা কেউ অনুভব বা অনুধাবন করতে পারেন। এই কাঠিন্যের স্বরূপ নানাবিধ ও নানামুখী। বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার ও পাওয়ার পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সংগ্রাম-আন্দোলন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের সফল পরিণতি এই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, আমাদের অর্জন। অধিকার মানে নিজেকে স্বশিক্ষিত করা এবং একমাত্র শিশু ছাড়া কারোর দায়িত্ব-কর্তত্য ব্যতিরেকে অধিকার থাকতে পারে না এবং নেই। আমাদের ৪৪তম স্বাধীনতার মাসে সেই অধিকার খর্বের অবরোধ-হরতালের নামে যে মহড়া প্রত্যক্ষ করলাম তা পেছনের বছরগুলোকে হার মানিয়েছে। যে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার্থী অভিভাবকের হাতধরে অথবা নিজেদের স্বাচ্ছন্দের পন্থায় পরীক্ষা দিতে যাওয়ার কথা ছিল তা তারা পারলো না। এটা তো তাদের অধিকার। অভিভাবকদের অধিকার ছিল তাদের সন্তান জীবনের দশটি বছর অতিক্রম করে একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পড়ালেখার একটি ধাপ পেড়িয়ে অতিসাদামাঠা উচ্চতর ধাপে পদার্পণ করবে তা তারা শান্তি সাচ্ছন্দে করতে পারলো না। পরীক্ষার আঙ্গিনার বাইরে তাদের অভিভাবকদের কেউ কেউ তছবিহ হাতে বিমর্ষবিন্তায় সময় কাটাতে দেখনাম দূরদর্শন পর্দায়। প্রায় ১৫ লক্ষ বঙ্গসন্তানকে ভয়ভীতি-আতঙ্কের মধ্যে পরীক্ষা দিতে হলো একটি মাস, যা হওয়ার কথা ছিল মাত্র কটি দিনে সরকারের সূচী মতে। মন্ত্রীর অবনত অবরোধ বন্ধ রাখা আহবান কোন কাজে আসেনি।

শুধু কি তাই। এই অবৈধ অবরোধের দানব আমাদের কিশোর-কিশোরীদের মন-মানসিকতায় সে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে দিল তাতো চিরদিনের জন্য এদের তাড়িয়ে বেড়াবে এবং আমাদের রাষ্ট্র, সমাজও রাজনীতিকে কীভাবে প্রভাবিত করবে তার হিসেবকেউ করছে না। আমাদের দেশ যে রুগ্ন-পচা নোংরা রাজনীতির খপ্পরে পড়েছে তার সূত্রপাত ১৯৭৫র বঙ্গবন্ধু শোখ মুজিবকে হত্যার পর সামরিক শাসকদের ঔরসে। এই সহজ সবল সত্যটি যারা বুঝতে চান না, অনুধাবণ করেন না তাদের সংখ্যা কম না। বাংলাদেশী জাতীয়তা বেনামে দ্বি জাতিতত্বের ধারক যে দলটি দেশে কাজ করছে সেদল দেশ শাসন করেছে ২১+৫ টি বছর, তার প্রভাব এত দ্রুত দেশ থেকে নির্মুল হবে তা যেন কেউ না ভাবেন সে অনুরোধটাই করতে চাই দেশবাসীর কাছে এবং বিশেষ করে নব প্রজন্মের কাছে।

যে হিসেব এখনো করার বাকি তা ১৫০ জন মানুষের পেট্রোল বোমার অগ্নিতে দগ্ধ হয়ে আত্মাহুতি দেয়া, কয়েকশ মানুষ আগুণে পুঁড়ে পঙ্গুত্ববরণ অথবা কয়েক শ গাড়ী-যানবাহন পুঁড়ে অঙ্গার হওয়া দিয়ে করা যাবে না। রাজনীতির নামে কতক ঠুনকো দাবি পেশ করে সম্পূর্ণ জিঘাংশার বশবর্তী হয়ে যে তান্ডব চালানো হলো সে অবরোধ ডাকার হরতাল নাশকতার মাধ্যদিয়ে করার অধিকার কারো নেই, দুনিয়ার কোন দেশেই তার নাজির নেই। গণতন্ত্রের নামে স্বাধীনতা, সবিংধান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কর্ম কান্ড যারা করে তাদের এ দেশে থাকার অধিকার নেই। তারা পাকিস্তানি প্রেতাত্বা। এদের শাসনে দেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি যেটি হয়েছে তাহলে আমাদের তরুণ সমাজকে ধর্মান্ধ করে ধ্বংস করে দেয়া। তরুণদের উচ্ছাশ আছে, নেই দেশ প্রেম ও মুক্তিযুদ্ধকে অন্ধের হাতি দেখার মত করে দেখা। মুক্তিযুদ্ধের সত্য-মিথ্যাকে তাই বোধে-মননে ধরতে না পারার মাসুল আমরা দিয়ে চলেছি কড়ায়-গন্ডায়। স্বাধীনতার মাস টি এভাবে অপমানিত হলো।

সরকারকে অনুরোধ করি কথা কম বলে দুর্নীতি দমনসহ কাজ বেশি করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। নতুন প্রজনন্মের তরুণদের চেতনা বৃদ্ধি ও ঐক্যবদ্ধ করা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের অন্য কোন পথ নেই। স্বাধীনতা মাসের অপমান আর সহ্য করা যায় না।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!