::: রিফাত আরা চৌধুরী প্রমা :::
আমার কাছে মনে হয় ইদানিং নারী স্বাধীনতার কিছু ক্ষেত্রে ভুল ব্যাখা হচ্ছে।
আসলে আমরা কেন পুরুষদের সমান হতে চাই? বা প্রমাণ করতে চাই ওদের চেয়ে বেশি? তার কি আসলেই প্রয়োজন আছে!?
মানলাম নারী হিসেবে আপনি অনেক যোগ্যতা সম্পন্ন তাহলে আপনার নারী স্বাধীনতা শুধুমাত্র তখনই কেন প্রশ্নবিদ্ধ হয় যখন আপনি স্বামীর বাড়িতে থেকে সংসার বা নানা কাজে নিজেকে জড়ান বা আপনার স্বামী আপনাকে নানা বিষয়ে বিধিনিষেধ দেয়? কেন তখন নয় যখন আপনাদের কলিজার টুকরো সন্তানকে নিজের কাছের কেউ বা কাজের বুয়াদের কাছে রাখেন?
বিষয়টা একটু বুঝিয়ে বলি।
আপনি সারাদিন বাচ্চাকে আরেক জনের হাতে তুলে দিয়ে নিজে বাইরে স্বাধীনভাবে চলছেন আর দিনশেষে আপনার কাছের কেউ বা কাজের বুয়ার কাছে আপনার দায়বদ্ধতা থাকছে বাচ্চার কারণে।
আপনার চোখের সামনে বুয়া অন্যায় করলেও একটা জোরে বকা দিতে ভয় পাচ্ছেন পাছে সে কাজ ছেড়ে চলে যায়! আপনার বাক স্বাধীনতা কি আসলেই থাকছে? অন্যায় দেখেও কি সবসময় জোরে আওয়াজ তুলতে পারছেন?
আবার, আপনার সন্তান বড় হচ্ছে আরেক জনের নিজস্ব নিয়মে সেটা আপনার অপছন্দের হলেও মানতে হচ্ছে কারণ আপনি দায়বদ্ধ সেই মানুষের সারাদিনে আপনার সন্তানের প্রতি পালন করা দায়িত্বের কারণে।
আপনার স্বাধীনতা এখানে দেখানোর সুযোগ নেই। বরং আমি নিজে দেখেছি কাজের বুয়া বা কাছের আত্নীয়কে তোয়াজ করতে করতে জান শেষ শুধুমাত্র বাইরে নিজের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য।
আমি মেয়েদের স্বাধীনতার বিপক্ষে না কিন্তু স্বাধীনতা রক্ষা করতে গিয়ে নিজে আরো হারাচ্ছেন কিনা সেটা খেয়াল করা খুব খুব দরকারী।
একবার দু’বার সহ্য করা আর দিনের পর দিন একই ভুল বা নীতিগত পার্থক্য মেনে নেওয়া কিন্তু এক বিষয় না।
আবার আমরা বাবা মা ভাই বোন বা আত্নীয়ের জন্য যেভাবে ভাবি নিজের শ্বশুর বাড়ির বেলায় নানা অজুহাতে কেন যেন হাত গুটিয়ে নেই। কেন?
সবসময় যে শ্বশুর বাড়িতে নারী নির্যাতন করা হয় বা নারীদের অসম্মান করা হয় এমন তো না।
সমস্যা আমাদের মেয়েদেরও অনেক আছে। আপনার তো তাদের জন্য ভালো মেয়ে হবার দরকার নেই বরং একজন ভালো বউ হবার চেষ্টা করুন। শ্বশুরবাড়ি আপনার সাথে অন্যায় করলে এটা ভাববেন জীবনের সব পর্যায়ে কি আপনার বাবা মা আপনার ইচ্ছা মতো সব করেছে? ছোট থেকে বড় হতে জীবনের নানা পর্যায়ে বাবা মার বকাঝকা বা মার-ধোর সঙ্গী হয়েছে।
অথচ আমরা অন্য কারো কাছ থেকে এই সবের সামান্যতম সহ্য করতে পারি না।
বলতে পারেন তারা নিজের বাবা মা কিন্তু এটাও তো ঠিক আপনার জীবনের সবচেয়ে কাছের সঙ্গীরও তো বাবা মার ক্ষেত্রে অনুভূতি এমন।
তাহলে কেন নতুন একটা পরিবারের মানুষদের হঠাৎ কিছু কথা খুব বেশী গায়ে লাগে? এই ক্ষেত্রে অন্যায়কে প্রশ্রয় না দিয়ে সুন্দরভাবে নিজের অবস্থান তুলে ধরুন। সেটাতেও লাভ না হলে বিবাদে না জড়িয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।
আমার কাছে সবসময়ই মনে হয় নিজের অবস্থান তুলে ধরা খুব দরকার।
সমাজে ভালো খারাপ থাকবেই তবে অন্তত দিন শেষে নিজের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারা অনেক বড় একটা ব্যাপার।
নিজের সাথে অন্যায় হলে বা যা নীতিগত দিক থেকে ভুল তার জন্য সবসময়ই জোরে আওয়াজ তুলতে হবে।
আর আমার কাছে এটাই প্রকৃত “নারী স্বাধীনতা” মনে হয়।
বি:দ্র: – এই কথাগুলো নির্যাতনকারী বা নির্যাতিত কারো জন্য প্রযোজ্য নয়। আবার যাদের আসলে এসবের কোন সমস্যা নেই তাদের জন্যও না।
কথাগুলো তাদের জন্যই যারা জীবনের সামান্য পরিবর্তনে নিজেদের স্বাধীনতা আরো সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারবেন।
আশা করি আমার লেখা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
লেখক পরিচিতি :
রিফাত আরা চৌধুরী প্রমা
চৌধুরীবাড়ি, ডাকুরি, গোপালপুর।