চরমরূপ অযত্ন আর নিরেট অবহেলায়
মুখগহ্বরের দাঁতগুলো হারিয়ে-
আজ আমার সম্মানে সামনে সাজান
লোভাতুরা মুখরোচক খাদ্যের পসরা অবলোকনে
বুঝতে পারছি, ওই কর্মকাণ্ড গুলো-
আমার জন্য কতটা নির্বুদ্ধিতাপনা ছিলো
যৌবনের সম্ভাবনাময় সোনালি দিনগুলো খামখেয়ালিপনা মনোভাবে অবমূল্যায়নে,
এখন এ বয়োবৃদ্ধ পর্যায় এসে উপলব্ধি করছি,
ওই কর্মকাণ্ড কত মস্ত বড় বোকামি ছিল
ভাগ্যগুণে অঢেল সম্পত্তি দু’হাতের নাগালে পেয়েও-তার অপব্যবহারে এক ফুঁৎকারে!
অপাত্রে নষ্ট করে, আজ প্রায় রিক্তহস্ত হয়ে উপলব্ধি করছি, ওই কর্মকাণ্ড
আমার জন্য কতটা আহাম্মকপনা ছিলো
শতভাগ প্রাণপণ উজাড় করা অম্লমধুর ভালোবাসার ছোঁয়া দিয়ে, যে প্রিয়তমা
আমায় তার বাহুডোরে বাধঁতে চেয়েছিলো-
তাকে নর্দমার কীটপতঙ্গ ভেবে, সামান্য অপরাধে তুচ্ছতাচ্ছিল্যে নির্বাসিতা করে, আজ এ ভবঘুরে
একাকীত্ব জীবনে পদে পদে টের পাচ্ছি!
ওই উন্মাদী সিদ্ধান্ত আমার জন্য
কত মস্ত বড় সর্বনাশা ছিলো
এ পোড়া অপরিণামদর্শী আহাম্মকী জীবনের কৃত কর্মকাণ্ডের শাপমোচন হয়তো, এ জনমে হবে না।
তবুও জীবনের এ শেষ সায়াহ্নে এসে
একটাই মিনতি রাখছি-
ভবিষ্যৎকালে কেউ যেন, আমার মত
এরকমভাবে আহাম্মকী দুষ্টুচক্র কর্মকাণ্ডের পাতানো মরণদশা ফাঁদে জড়িয়ে না যায়।
কুয়েত, ২৪ মার্চ ২০১৮
সুখে থেকো ভোজনকারী
কোনো একদিন সুগন্ধিকারক চিকন বাসমতী চালের মুখরোচক বিরিয়ানি এবং দোপিঁয়াজি মাছের ডিম, কালো ভুনা গোস্তের মত সুস্বাদযুক্ত খাবার হয়ে ছিলাম তোমার কাছে
তুমি ইচ্ছেমত আমায় চেটেপুটে খেয়ে তৃপ্তিকর স্বস্তির ঢেঁকুর তুলে যারপরনাই খুশি হয়ে, প্রাণখোলা প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে
অহর্নিশ এই আমাকে নিয়ে
কত রকমভাবে প্রচারণা চালাতে তোমার আশে পাশের সকল বন্ধু মহলে তার হিসেব নেই
আজকাল তোমার কাছে নাকি নানারকম মনোলোভা ফাস্টফুড আর চাইনিজের আহার্য পছন্দসই হয়ে উঠেছে?
আমি নাকি এখন স্বাদহীন অখাদ্য হয়ে গেছি? তোমার নাকি প্রায়শই পেটফাঁপা হয় আমাকে আহার করলে?
আমি যখন অখাদ্য অরুচিকর, অপুষ্টিকর এক খাবারের আতঙ্ক হয়ে গেছি তোমার কাছে;
তখন অযথা অনীহা করে তুমি আমার কাছে কেন আসবে হে ভোজনকারী?
তোমাকে আমি প্রাণভরে আশীর্বাদ করছি
তুমি নতুন আইটেমের খাবার খেয়ে
পরিতৃপ্ত হও প্রতিনিয়ত!
আর আমাকে ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত করে
সুখে থেকো তুমি অনেক সুখে।
কুয়েত, ২৮ এপ্রিল ২০১৮
বিসর্জন
শতবার পড়েও তোমার কাব্যখানি
ভরলো না- এ কাব্যিক তৃষ্ণার্ত মন,
তৃষ্ণা বহুগুণ বাড়াই দিলি
ও যাদুকর কবি প্রিয়জন
কেমন কাব্য রচিলে কবি
প্রাণটা করলে উচাটন,
বসন্ত বাতাস বহাই দিলে
মন ছুটে যায় বৃন্দাবন
মৃতপ্রায় আত্মায় জোশ আনিলে
তোমার নাম জপে সারাক্ষণ,
আরেকটা কাব্য রচিয়া কবি
প্রশান্ত করে দে- এ অশান্ত মন
মায়াবী যাদু তোমার কবিত্বে
তার-ই তন্ত্রবলে মন্ত্রমুগ্ধ দেহমন,
আমার সবকিছু তোমার তরে
দিলাম তাই আজ বিসর্জন।
কুয়েত, ৯ মার্চ ২০১৮
আয়েশ আলীর খায়েশ
এক আকাশের সব তারকারাজি এনে
আয়েশ আলীর দু’চোখের স্বপ্নে বসিয়ে দে,
বিশ্ব মোড়লের মুকুটখানি
তার মাথাতে পড়িয়ে দে
আরব সাগরের সব পানি এনে
তার তৃষ্ণা নিবারণ করিয়ে দে,
আফ্রিকার সব সোনার খনির
মালিক তারে বানিয়ে দে
সুইস ব্যাংকের সব অর্থ এনে
তার দু’হাতে তুলে দে,
তামাম দুনিয়ার খাদ্যাদি সব
তার খাদক পেটে ঢুকিয়ে দে
এতসব পেয়েও খায়েশ না পুরিলে
তারে সুন্দরবনের বাঘের সামনে ছেড়ে দে..!
কুয়েত, ৭ মার্চ ২০১৮
যৌবন ঘুড়ি
ষোড়শী যুবতীর যৌবন ঘুড়ি ওড়ে
ফাগুনের উতলা বসন্ত বাতাসে!
সুউচ্চ অট্টালিকার ছাদের উপরে দ্যাখো
লাল ওড়নায় রংচঙে পেখম ধরেছে
ময়ূরাকৃতি ষোড়শী যুবতী!
তার দু’চোখের কোনাকোনি দ্যাখেছি,
নীল সাগরের উথালপাতাল ঢেউয়ের
করুণ মাতম সাদৃশ্য সুরের মূর্ছনা!
কার পানে যেনো ছুটে যেতে
ব্যতিব্যস্ততায় নিমগ্ন ষোড়শী ললনা!
কোন সে সুদর্শন রাজকুমারের
দর্শনলাভ করতে পাগলপারা ষোড়শী তরুণী?
কার উষ্ণীয় কুসুমাকর ছোঁয়া পেতে
মনপ্রাণ উচাটন করে ষোড়শীর সারাটি দেহমনে?
বড়ই বেরসিক আচরণে এ ক্যামন
আগমন বার্তা নিয়ে এসেছে বসন্তঋতু
ষোড়শীর আদ্যোপান্তে?
ষোড়শী তরুণীর যৌবন ঘুড়ির সূতা ছিড়ে
মাটিতে আছড়ে পড়তে চায় সময় অসময়ে
তার নিজের অজান্তে…
আগত আরও একজোড়া বসন্ত নাকি সে তার
যৌবন ঘুড়ির নাটাই শক্ত হাতে ধরে রাখবে!
এ দৃঢ়চেতা শপথনামা শুনেছি, তার
মুখনিঃসৃত বাণীর প্রতিধ্বনিত আওয়াজে।
কুয়েত, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
বিরহাতুর আত্মার প্রত্যাবর্তন
একদিন থেকে দূরে ডেকে সুরে
মধুর কথায় পাগল করে এই আমারে,
শেষে কত ব্যথা দিলিরে তুই এই অন্তরে
তুই কী জানিস হতাশা আজ বসত করে
তোর বিহনে মনের ঘরে?
দিবানিশি যাচ্ছিরে হায়!
এই আমি আজ জ্বলে-পুড়ে
দেখতিস যদি বুকটা চিড়ে বুঝতিরে তুই
এই আমারে, ক্যামন ভালোবাসতাম তোরে
ভাবতে আমি পারিনারে
তুই আমারে যাবি ছেড়ে পরের ঘরে
চিরতরে এমনি করে…!
তবে কী তোর প্রেম ছিলোরে
ক্ষণিক আশার ছলনারে?
তুই সহস্র স্মৃতির কবর খুঁড়ে
সাদা কাফনে মাড়ায়ে আমারে,
দাফন দিলি চিরতরে মাটির ঘরে
জেনে রাখিস আত্মা আমার
আসবে ফিরে বারে বারে তোর দুয়ারে,
একটু না হয় ভুল করে তুই
ভালবাসিস আগের মত
আমার বিরহাতুর আত্মাটারে।
কুয়েত, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
চেতন মশাই
চেতন মশাই! চেতন মশাই!
করতাছেন ভাই কী?
দেখতাছেন না, নাক ডাকি
আমি ঘুমাচ্ছি!
ঘুমঘোরে শত-সহস্র
স্বপ্নজাল বুনতাছি,
স্বাধীনতার বিজয় পতাকা
স্বপ্নে উড়াচ্ছি…!
কুয়েত, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭
যৎসামান্য
আমি খাটি তুমি খাটাও
ইচ্ছামত সামনে হাঁটাও
জবরদস্তি মরিচ বাটাও
যতো কাজ সামনে ধরাও
যৎসামান্য দিয়ে দূরে সরাও।
কুয়েত, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭
জবরদস্তি
সকাল-বিকাল কাম
ফিরলাম না ডান-বাম।
পেটে ক্ষুধার জ্বালা!
মেলছে ডালপালা
ঝরছে মাথার ঘাম!
বেটায় মারে পাম।
আর একটু খাটো,
জোর দিয়ে হাঁটো।
কুয়েত, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭
ফাডা কপাল
ব্যাবাক্কের গাছে থোহায় থোহায়
আম অইয়া থাহে ঝুইল্যা,
মোর গুলান ঝইড়্যা পইড়্যা যায়
শীতলায় লইয়া যায় ন্যাবো ডইল্যা
হগগোলের যহনি ব্যাবাগ জায়গায়
কপালডা দশ আঙুলইল্যা,
মোর তহনি চাইরো পাশ দিয়া
আপদ আইতে থাহে হেইল্যা দুইল্যা।
কুয়েত, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭
রসের হাঁড়ি
রসের হাঁড়ি করলি চুরি
কোন সে বাপেরবেটা
কত হাত লম্বা কলিজা
কেমন তোর বুকেরপাটা?
রাতভর পাহারা দিলাম
সোনার নীদ হারাম করিলাম
অতঃপর তুই ধরিয়ে দিলি
আমার হাতে লোটা
দেবো তোরে জুতাপেটা
খেঁজুর গাছে ঝুলাইছি ঝাঁটা
বুজবি বেটা তোর কপাল ফাটা
হাঁড়িতে মিশাইছি ঝামাল ঘোঁটা
দেখিস আমার লেখার ছটা
নকল করে বানাস ঘিমাখন মাঠা
তোর নামে পড়ুক বদনাম ঠাটা
অকালপক্ব চোরা কবি মশাই জেঠা।
কুয়েত, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭
প্রতিজ্ঞা
প্রথম দেখার শুভক্ষণে
তোমার সাথে অচেতনে
লেগেছে এক ধাক্কা
মিলে গেলো মনে মনে
মিষ্টি মধুর আলাপনে
প্রেম হলো তাই পাক্কা
তোমায় নিয়ে এক জীবনে
বাঁধব বাসা এ ভুবনে
থাকবো দু’জন মিলেমিশে
যদ্দিন না পাই অক্কা।
কুয়েত, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭
অমানুষ
আমি অমানুষ!
আমার বাবা অমানুষ!
আমাদের চৌদ্দপুরুষ ছিলো
একেকজন অমানুষের বাচ্চা!
তুমি আমায় অমানুষ বলো,
আমার লাগে খুবি আচ্ছা!
কথাগুলো শতভাগ সাঁচ্চা
তুমি মানুষ!
তোমার বাবা মানুষ!
তোমাদের চৌদ্দপুরুষ ছিলো
একেকজন মানুষের বাচ্চা!
আমি তোমায় মানুষ বলাতে,
তোমার লেগেছে জানি আচ্ছা!
কথাগুলো শতভাগ সাঁচ্চা।
কুয়েত, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭
অদল বদল
মায়ের দেয়া নামটি ছিলো
মোহাম্মদ সোলায়মান
দিনেদিনে সে নামটি ভেঙে
হয়েছে খানখান
কেউ বলতো ছলাইমান
আর কেউবা ছলেমান
কেউবা আবার ছইল্যা বলে
ধরতো কলেরগান
কেউ বলতো ছলুমদ্দি
কেউবা ছালু খাঁন
গাঁও গেরামে এমনি চলে
নামের ব্যঙ্গ বিশ্লেষণ
একদা তাদের সবার কথার
দিয়েছি জবাব খান
ইসলামী নাম নিয়ে এভাবে
ব্যঙ্গোক্তি করেন ক্যান?
কেউ যখন শুনলো না আমার
মধুরভাষী বয়ানখান
উপায়ন্তর ভেবে না পেয়ে
নিজের নাম রাখলাম ইমরান।
কুয়েত, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭
ফিরে এসো পাখি
পাখির প্রেমে পাগল হয়ে
ঘুরি বনে বনে,
আও বোঝে না বাও বোঝে না
হায়রে হায়! চলে কোনে কোনে।
দোহাই পাখি দিব্যি দিলাম
এসো একবার ফিরে,
দেখে নিও সেই অভয়ারণ্য বানাবো
তুমি চেয়েছ যেমন করে।
তোমার তরে বিরহী এ মন
সদাই আনচান করে,
দোহাই তোমার বাহানা ছাড়ো
দেখো কি হচ্ছে এ অন্তরে।
এ জনমে যদি না পাই
এই আমি তোমারে,
পরজন্মে চাইবো পাখি
তোমাকে আমার মত করে।
কুয়েত, ২৮ অক্টোবর ২০১৭