মো: শামছুল আলম চৌধুরী
খবরের কাগজ পাঠ করা প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বাসায় নিয়মিত একটি দৈনিক পত্রিকা রাখা হয়। এর বাইরেও প্রায় প্রতিদিনই কয়েকটি কাগজ কেনা হয়। ঢাকার শ্যামলী মোড়ে পিসি, কালচার মোবাইল মার্কেটের সাইনবোর্ডের নীচেই চলার রাস্তার উপর বিক্রেতাবিহীন কিছু খবরের কাগজ কিছু রাখা থাকে। পাঠক বা ক্রেতা পছন্দের কাগজ নিয়ে ড্রায়ারে মূল্য রেখে যায়। এ দৃশ্য কয়েক দিনই নজরে আসে। কৌতুলী হয়ে পাশের এটিম বুথের লোককে জিগ্যেস করি। তিনি জানালেন ‘‘বিক্রেতা এভাবে খবরের কাগজ রেখে অন্য জায়গায় টুকটাক কাজ করেন, শুধু খবরের কাগজ বিক্রি করে তো আর সংসার চলে না। তাই অন্য কাজ ও করে থাকেন’’। বিক্রেতার বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে তিনি আর অধীক বলতে পারলেন না।
এভাবে কিছু দিন কেটে যায়। এই জানুয়ারী মাসের ৬ তারিখ বৃহস্পতিবার খবরের কাগজ নিতে গিয়ে হঠাৎ বিক্রেতাকে পেলাম। জিজ্ঞাস করলাম নাম কি? বললেন, ‘‘আবদুল মতিন’’। বয়স ৩৫ বৎসর। বাড়ী বাঘমারা, লাকসাম জেলা কুমিল্লা। দারিদ্রতা নিরসনের জন্য ছোট বেলাতেই ঢাকায় আগমন। ১৪ বছর যাবৎ খবরের কাগজ, বই, ম্যাগাজিন বিক্রি করছেন। একজন ১২ বছরের পুত্র সন্তান রয়েছে। তার সাথেই থাকে। স্ত্রীর সাথে মতের অমিল থাকায় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে অনেক আগেই। সন্তানকে মানুষ করতেই তিনি এ পেশা বেছে নিয়েছেন। কাগজ থেকে যাতে সন্তানের লেখাপড়ার আগ্রহ জন্মায় এই উদ্দেশেই এ পেশায় মনোযোগী হয়েছেন। খবরের কাগজ বিক্রি ও অন্যন্যা কাজ কর্ম করেই জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন। মাসে আট-নয় হাজার টাকা আয় হয়। এ দিয়ে জীবনের চাকা সচল রেখেছেন। শুধু মাত্র সুদিনের প্রত্যাশায়।
মানুষ মূল্য পরিশোধ না করে কেহ খবরের কাগজ নিয়ে যায় কিনা প্রশ্ন করলাম। এ ধরনের ঘটনা খুব কমই ঘটে। মাঝে মাঝে এসে দেখেন খবরের কাগজ বিক্রির অর্থ কিছু কম পাওয়া যাচ্ছে। বুঝতে পারেন কেউ মূল্য পরিশোধ না করে কাগজ নিয়ে গেছেন। তাতে তার মনঃকষ্ট হয়।এতে আপনার অনুভূতি কি? বললেন “সামান্য পেপারের দাম দিয়ে গাড়ি-বাড়ী তো হবেনা। যার কপাল সেই খাইল”। হঠাৎ আজকে আপনি এখানে কেন? বই ম্যাগাজিন গোছানো জন্য এখানে এসেছি। বিক্রেতা নেই কিন্তু আপনি পেপার, ম্যাগাজিন, বই রেখে চলে যান এভাবে কি অন্যেরাও পন্য বিক্রি করতে পারে? জবাব, “পারবেনা কেন, সততা ও বিবেকবান মানুষ হলে আর অন্যর প্রতি দরদ থাকলে সবই সম্ভব”।
অনেক প্রশান্তি আর শিক্ষণীয় এই বিয়ষটি উপলব্ধিতে অনেকেরই হৃদয় হয়তো নাড়া দিবে। আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হলে তাতে চিরধরে না। জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলার মানসিকতা লাগে।পুত্রকে নিয়ে মর্যদাপূর্ণ আত্ম-নির্ভরশীল জীবন গড়বেন এবং সেই সাথে মতিনের সুদিনের প্রত্যাশায় রইলাম।
লেখক পরিচিতি :
মো: শামছুল আলম চৌধুরী
অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা
চৌধুরী বাড়ী, বেড়াডাকুরী
গোপালপুর, টাঙ্গাইল।