নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশে নির্মিত হবে বিশ্বের প্রথম কলম ভাস্কর্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার চিরসবুজ গড়াঞ্চলের একটি নিভৃত পল্লীর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নির্মিত হবে ভাস্কর্যটি।
“কেন্দ্র থেকে নয় প্রান্ত থেকেই হোক শুরু” গ্রাম উন্নয়নের এই স্লোগানকে বাস্তবে রূপ দিতেই এরকম একটি পাহাড়িয়া নিভৃত পল্লীতে আমাদের এই কর্ম পরিকল্পনা। বাংলাদেশের মানচিত্রে মধুপুর গড় অনন্য এক নাম।
এখানকার বিখ্যাত আনারস সুমিষ্টতার কারনে সুনাম কুড়িয়ে দেশের গণ্ডি পেড়িয়েছে। শাল গজারির হাজারো বৃক্ষের সমাহারে সবুজ প্রকৃতির মাঝে গড়ে উঠেছে মহুয়া কটেজ, চুনিয়া কটেজ, মধুপুর ন্যাশনাল পার্ক ইত্যাদি পর্যটন এলাকা।
প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনাভিলাষী মানুষ এখানকার মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির রূপ দেখতে অবকাশ যাপনে আসে সরকারি বাংলোগুলিতে । বন বনানীর নৈসর্গিক লীলাভূমিতে বাড়তি আকর্ষণ যোগ করতেই ভাস্কর্য নির্মাণের এই জায়গাটি বেছে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও আরেকটি কারন হলো :
২০১২ সালে আউসনারা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রের চোখ অন্ধ হয় পরিত্যক্ত কলম ছুড়তে গিয়ে। ক্লাস চলাকালীন এক শিক্ষার্থী কলমের কালি শেষ হয়ে যাওয়ার পর তা জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলতে গিয়ে কলমটি গ্রিলে লেগে ফিরে আসে। দুর্ভাগ্যক্রমে কলমটির নিব আলমগীর নামক এক ছাত্রের চোখে ঢুকে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে ছেলেটিকে হাসপাতালে নেয়া হলেও রেটিনায় প্রচণ্ড আঘাত প্রাপ্তির কারনে পরবর্তীতে চোখটি অন্ধ হয়ে যায়। কলম ছুড়ার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই পরিকল্পনা হয় কলম ভাস্কর্যের ।
কলমের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ। তারই ধারাবাহিতায় ২০১৩ সালের শেষ দিকে “ভাস্কর্য ২০২১” নাম দিয়ে কয়েকজন তরুণ মিলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু হয় কলম সংগ্রহ অভিযান। ইতিমধ্যেই কলম সংগ্রহ অভিযান সফলকাম হয়েছে। প্রায় ১৬টি জেলায় চলছে কলম সংগ্রহ অভিযান। আগামী বছরের স্বাধীনতা দিবসে আমাদের কলম জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হবে।
ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হবে ২০২১ সালের স্বাধীনতা দিবসে । এতে ব্যবহৃত হবে ৫০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫০টি উচ্চ বিদ্যালয় ৫০ টি কলেজ এবং ৫০ টি বিশ্ববিদ্যালয় এর মোট ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রীর পরিত্যক্ত ৫০ লাখ কলম। ছাত্রছাত্রীদের কলম ছাড়াও ভাস্কর্যটিতে ব্যবহৃত হবে দেশ বরেণ্য কবি, সাংবাদিক, লেখক গীতিকার শিল্পীসহ বাংলাদেশের বরেণ্য ৫০ ব্যাক্তির কলম। এটির উচ্চতা হবে ৫০ ফুট। মোট ৫০ মাস কলম সংগ্রহের পর ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যেই ২৫ মাস অতিক্রম করেছে। নির্মানে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ৫০ জন তরুণ এবং ৫০ জন তরুণী।
ভাস্কর্যটির পাশেই নির্মিত হবে একটি পেন মিউজিয়াম। এখানে সংরক্ষিত থাকবে বিশ্বখ্যাত লেখক, কবি সাংবাদিক, শিল্পী সাহিত্যিক, নোবেলজয়ী, অস্কারজয়ী বিশ্বসেরাদের ব্যবহৃত কলম ও তাদের হাতের লেখা । একই ছাদের নিচে একত্রে বিশ্ব বরেণ্যদের ব্যবহৃত কলমের এই জাদুঘরটি হবে বিশ্বের প্রথম কলম জাদুঘর। পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে যে কেউ নিয়ম অনুযায়ী বিশ্বসেরাদের কলম কালেক্ট করে আমাদের জাদুঘরে তার তথ্যসহ রাখতে পারবে।
পুরো এই কাজটি নিয়ে করা হয়েছে একটি প্রচারণী থিম সং। বিখ্যাত গীতিকার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের লেখা এবং বরেণ্য সুরকার মইনুল ইসলাম খানের সুরে গানটিতে কন্ঠ দিয়েছেন দেশ বরেণ্য দুই কন্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা এবং মাকসুদ।
দুই বরেণ্য শিল্পীর সাথে গেয়েছেন আরো ৪৮ জন তরুণ কন্ঠশিল্পী। তারুণ্যের এই প্রয়াসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে একটি বিশ্ব রেকর্ড গড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আসুন আমরা প্রত্যেকেই আমাদের পুরাতন কলমটি জমা রাখি, কলমের কারুকার্যে সম্মিলিতভাবে গড়ে তুলি কলমের ব্যতিক্রমধর্মী নিদর্শন । যে কেউ আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন, সহযোগীতা করতে পারেন আমাদের কাজে। আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম।