আজ || মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শিরোনাম :
 


টাঙ্গাইলে পরম আদরে লালনপালন বন্য সজারু

জয়নাল আবেদীন, সম্পাদক, গোপালপুর বার্তা :
শিশুর মতোই বিছানায় গড়াগড়ি খায়। কারণে-অকারণে ঘরের বারান্দা ও বাড়ির উঠোনে লুটোপুটি যায়। ক্ষুধা লাগলে বাড়ির কর্তার পিছে পিছে ঘুরে অদ্ভুত শব্দ করে। পেটে খাবার পড়লেই কর্তার কোলে উঠে মানব শিশুর মতোই চোখ বুঝে আরাম করে। বিরল বন্যপ্রাণী সজারুর সাথে মানুষের এ যেন এক মায়াবী মেলবন্ধন।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে দশ কিলো দূরে পাহাড়ি গ্রাম কুশারিয়া। ধলাপাড়া ফরেষ্ট রেঞ্জের গজারী বন ছড়িয়ে ছিটে গ্রামের দুই পাশ। এ গ্রামের এক পশু প্রেমিকের নাম সুমন আহমেদ লিটন। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে সংসার। সম্প্রতি পরিবারে আরেক সদস্য যোগ হয়েছে। তবে মানব শিশু নয়। বনের বিরল প্রাণী সজারু। পরিবারের সবাই একে আপন করে নিয়েছে। মিলে-মিশে বসবাস। পরিবারের এ নতুন সদস্যকে দেখার জন্য প্রতি দিন দূরদুরান্তের লোক আসছে। ইউটিউবের ভিডিও সাড়া ফেলেছে। মিডিয়ায় সরস খবর হচ্ছে।

লিটন জানান, গত এপ্রিলে গৌরেশ^র গ্রামের কলা বাগান থেকে ইজিবাইকে ফেরার সময় বুনো পথের ধারে একটি কাহিল সজারু ছানা খুঁজে পান। বাড়িতে এনে যত্নআত্তিতে সুস্থ করেন। এরপর থেকে পরিবারের সাথেই  বেড়ে উঠছে। সন্তানের মতোই লালনপালন হচ্ছে। দিনের বেলা কখনোসখনো বিছানায় এক সাথে ঘুমায়। জিহ্বা দিয়ে গাল চেটে সোহাগ জানায়। অদ্ভুত ব্যাপার হলো কোলে বসে আরামছে টিভি দেখে। কখনো দুষ্টামি শুরু করলে ধমকে থেমে যায়। নাম ধরে ডাকলে নির্ভয়ে কাছে আসে। ক্ষুধা লাগলে পিছনে পই পই করে ঘুরে বেড়ায়। রাগলে শরীরের ফনফনে ধারালো কাঁটা ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু বুদ্ধিমানের মতো শুধু দেখানো জায়গায় নিয়মিত পায়খানা করে। পরিবারের সবার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করলেও বাইরের কেউ এসে বিরক্ত করলে কদম ফুলের মতো বিষাক্ত কাটা ছড়িয়ে ক্রুদ্ধতা প্রকাশ করে। তৃণভোজী এ সজারুর প্রতি দিনের খাবার ফালি করা আলু, নানা সবজি, গাছের লতাপাতা, বাঁশের কোরল, নরম রুটি ও বিস্কুট। প্রতি দিনের খাবার খরচ এক দেড়শ টাকা।
তিনি আরো জানান, কিছুটা বড় হওয়ায় তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।  রাতে বিছানায় ঘুমানো আস্তে আস্তে ছাড়তে থাকে। গভীর রাতে সবার অজান্তে ঘর ছেড়ে নিশাচরের মতো পাড়া বেড়াতে থাকে। অন্যের ঘরের দরজার রাখা জুতো কামড়ে নিয়ে ঘরে ফিরে। নয়তো কারো সবজি খেতে গিয়ে উৎপাত করতে থাকে। এমতাবস্থায় বাড়ির আঙ্গিনায় গর্ত করে থাকার ব্যবস্থা করা হয়।  আশ্চর্য্যরে বিষয়, এ কৃত্রিম গর্ত পছন্দ হয়নি। বরং দুই পায়ের ধারালো নখে মাটি খুঁড়ে আরেকটি প্যাচালো গর্ত বানিয়ে নেয়। মাস খানেক ধরে সেখানেই ঘুমায়।

পড়শি শ্যামল চন্দ্র জানান, লিটন সজারুাকে অসম্ভব ভালোবাসে। প্রাণী আর মানুষে এতো ভাব নিজে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবেনা।

কুশারিয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক হাফিজুর রহমান জানান, ঘাটাইলের বটতলা ও ঝরকা বিটের উজাড় হওয়া গজারী বনে বিদেশি জাতের আকাশমনি গাছে বনায়ন হওয়ায় আবাসন ও খাদ্যাভাবে বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব বিলীন হচ্ছে। ঝোপজঙ্গলে এখনো বিরল প্রজাতির কিছু সজারুর দেখা মিলে। খাদ্যাভাবে এরা বনের আশপাশের কলা ও সবজি বাগানে চড়াও হয়। গৃহস্তরা গর্ত খুড়ে এদের নিধন করে। আশপাশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মানুষ ফাঁদ পেতে শিকার করায় সজারু বিলিন হচ্ছে। লিটন বিলুপ্তপ্রায় বন্য প্রাণীকে সন্তানের মতো আগলে রেখে মানবিকতার সুন্দর উদাহরণ স্থাপন করেছেন।

ঘাটাইল ঝরকা বন বিটের অফিসার শাহ আলম জানান, তিনি নতুন এসেছেন। বন্যপ্রাণী নিধনের কোন খবর তার জানা নেই।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!