নিজস্ব প্রতিনিধি :
জন্মের পর থেকেই অভাব দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে বড় হয়েছেন টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলের বেড়িবাইদ মৌজার বর্মনপাড়ার মতি রাণী বর্মন। টানাটুনার সংসার থাকায় বাবামা ১২ বছর বয়সেই নিতাই চদ্র বর্মনের সাথে মতিরাণীর বিয়ের মালা অদলবদল করান। দেখতে দেখতে জীবনের ৮০ পেরিয়ে গেছে মতি রাণীর। দশ বছর আগে স্বামী নিতাই পরপারে চলে গেছেন। সুদীর্ঘ সময় সমাজ সংসারের অনেক কিছু বদলে গেলেও বদলেনি মতি রাণীর ভাগ্য। চার সন্তান সবাই দিন মজুর। দিন আনে দিন খায়। সম্বল বনাঞ্চলের খাস জমির এক টুকরো ভিটা। অভাবী সংসারে অনেক সময় খাবারই ঠিকমতো জোটেনা তার। পলিথিনে ছাওয়া মাটির জীর্ন ঘরের বাঁশের মাচা ছিল ঘুমানোর জায়গা। ঝড়বৃষ্টিতে নির্ঘুম রাত কাটতো এ অশীতিপর বৃদ্ধার।
মতি রাণীর এমন দুঃসহ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রথম তুলে আনেন বৈরাগী বাজারের বাসিদা এবং সমাজকর্মী ইদ্রজিত বৈষ্ণব। মানবিক টানে এগিয়ে আসে মধুপুর উপজেলার ডিজিটাল প্লাটফর্ম ‘স্বপ্ন বুনন’। তারা অসহায় মতি রাণীকে নিয়ে একটি ইভেন্ট চালু করেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাড়া ফেলে। অনেকেই আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে। স্বপ্ন বুননের এডমিন প্যানেল ও সদস্যরা মিলে সেই টাকায় মতি রাণীর জন্য একটি টিনের ঘর নির্মাণ করে দেন। ঘুমানোর খাট ও বিছানা সামগ্রী, বিদ্যুৎ সংযোগ ও ফ্যান, পড়ার শাড়ি এবং দুই মাসের খোরাকি দেন তারা।
গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর হস্তান্তরের সময় স্বপ্ন বুনন মধুপুর ফেইসবুক গ্রুপের ক্রিয়েটর ও এডমিন সামিউল আলম, সিনিয়র এডমিন রবিউল ইসলাম, মাহিন ইসলাম পরান, সেলিম রেজা, ইদ্রজিত বৈষ্ণব, মধুপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ইসমাইল হোসেন, মধুপুর প্রসক্লাবের সম্পাদক এসএম শহীদ এবং উত্তর টাঙ্গাইল সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন উপস্থিত ছিলেন।
মতি রাণী বর্মন জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের একটি ঘরের জন্য তিনি অনেক স্থানে ধর্ণা দিয়েছেন। কিন্তু কপালে ঘর জোটেনি। স্বপ্ন বুননের স্বপবাজ কর্মীরা তার স্বপ্ন আজ পূরণ করেছে। তিনি এ ঘর পেয়ে দারুন খুশি। তাদের জন্য মন খুলে আশীর্বাদ করেছেন। তিনি আরো জানান, মধুপুর বনাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি কোচরা প্রায় সবাই ভূমিহীন। শিক্ষদীক্ষায় অনেক পিছিয়ে। সরকারি অনুদানের অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠি কোচরা।