গতকাল শুক্রবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনার পর সীমান্তে উভয়পক্ষই বাড়তি শক্তি বাড়িয়েছে।
এর আগে গত বুধবারের ঘটনায় নিহত মিজানের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে শুক্রবার গোলাগুলির ঘটনার পর বিজিবির নিখোঁজ দুই সদস্য আজ শনিবার ভোরে ফিরে আসায় বিজিবি সদস্যদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে গত চার দিনে কোন আনুষ্ঠানিক তথ্য বা প্রেস ব্রিফিং দেওয়া হচ্ছে না। ফলে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। এ অবস্থায় আতঙ্কগ্রস্ত এলাকাবাসী নিরাপদ অবস্থানে সরে যাচ্ছে।
দোছড়ি সীমান্ত এলাকা ঘুরে নাইক্ষ্যংছড়ির স্থানীয় সাংবাদিক এম এ হামিদ কালের কণ্ঠ অনলাইনকে জানান, শুক্রবারের অতর্কিত ওই হামলায় ছত্রভঙ্গ হয়ে ল্যান্স নায়েক বাতেন ও সিপাহি জাহাঙ্গীর পাহাড়ের নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে ছিলেন। আজ শনিবার সকালে তারা ক্যাম্পে ফিরে আসেন।
এম এ হামিদ আরো জানান, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) পাশাপাশি ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেনা সদস্যদের টহল দিতে দেখেছেন তিনি। অন্যদিকে, সীমান্ত এলাকার চাকঢালা থেকে লেম্বুছড়ি হয়ে বাইশারি পর্যন্ত সীমান্ত রেখার এপারে বিপুল সংখ্যক বিজিবি সদস্যকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
এদিকে, নিহত হবার চতুর্থ দিনেও নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমানের লাশ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কোন সাড়া দেয়নি। এ অবস্থায় লাশ নিয়ে আসার জন্য কফিন নিয়ে অপেক্ষা করছেন তার সহকর্মীরা। শুক্রবারের আক্রমণে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বন্দুকের গুলি ছাড়াও ৬০ মিলিমিটার মর্টার, রকেট লাঞ্চারসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছে।
ওই ঘটনার পর থেকে বিজিবির চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমদ আলী, কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল খন্দকার ফরিদ হোসেন এবং নাইক্ষ্যংছড়ির ৩১ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল শফিকুর রহমান সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
দোছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ জানান, সীমান্তে গোলাগুলি থামলেও সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসকারীদের মনের ভয় এখনও কাটেনি। শনিবারও আরো কয়েকটি পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
গত ২৮ মে সকালে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের এপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ির আগাপাড়ায় টহল দেওয়ার সময় মিয়ানমার বর্ডার পুলিশ (বিজিপি) সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। এতে পাইনছড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। পরে বিজিপি সদস্যরা তাকে তুলে সীমান্তের ওপারে নিয়ে যায়। নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত মিজানকে বিজিপি ওপারে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। তবে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিজিবির পক্ষ থেকে মিজান নিখোঁজ না মৃত- সে বিষয়ে অফিসিয়ালি কোন মন্তব্য করা হয়নি।
এ ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার বিজিবির পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের আহবান জানানো হলেও বিজিপি তাতে সাড়া দেয়নি। আজ শনিবার সকালে মিয়ানমার বর্ডার পুলিশ (বিজিপি) খবর দেয় যে, তাদের কাছে একটি লাশ রয়েছে। তবে এ লাশ বিজিবি সদস্য মিজানের কিনা তা জানানো হয়নি।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মিজানের লাশ ফেরত দেওয়ার পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজিবি সদস্যরা ৫০নং পিলার এলাকায় একটি খালি কফিন নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। এ অবস্থায় দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে সীমান্তের ওপার থেকে অতর্কিতে এপারে অবস্থানরত বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। বিজিবিও পাল্টা জবাব দেয়।
উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবারের ঘটনা নিয়ে গত ১০ দিনে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বিজিবির ওপর তৃতীয় দফা হামলার ঘটনা ঘটলো।