কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) পাওনা ফেরত দেয়নি বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল)।
বাখরাবাদ গ্যাস বলছে কর্ণফুলী তাদের কাছ থেকে ৩০০ কোটি টাকা পাবে, কিন্তু কর্ণফুলী থেকে তারা পাবে প্রায় চার গুণ-এক হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। কর্ণফুলী দেনা পরিশোধ না করলে বাখরাবাদও পাওনা দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা পেট্রোবাংলা এ ব্যাপারে একটি কমিটি করলেও কাজের অগ্রগতি নেই।
জানা যায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলে আগে গ্যাস সরবরাহ ও বিপণন করত বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটি চট্টগ্রামের পাশাপাশি নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর ও কুমিল্লা এলাকায়ও গ্যাস সরবরাহ করত। তবে সরবরাহ ও বিপণনের অধিকাংশ গ্যাসই ব্যবহার হতো চট্টগ্রামে। সেই হিসেবে বাখরাবাদের মুনাফার ৯৫ শতাংশ আয় হতো চট্টগ্রাম অঞ্চলের গ্রাহকদের কাছ থেকে। ২০১০ সালের জুনে সরকার চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ ও বিপণনের জন্য কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড গঠন করে। সেই থেকে কেজিডিসিএল গ্যাস বিপনন করে আসছে। কিন্তু বাখরাবাদকে দুভাগ করে কেজিডিসিএল করা হলেও স্থাবর অস্থাবর সম্পদের ভাগ-বাটোয়ারা হয়নি। নিয়মানুযায়ী কোম্পানি ভাগ হওয়ার পরপরই এসব সম্পদ ভাগ হওয়ার কথা। এ নিয়ে ইতোমধ্যে দুই কোম্পানির মধ্যে রশি টানাটানি কম হয়নি। এরই প্রেক্ষিতে সম্পদ নিয়ে বিরোধ নিরসনে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা পেট্রোবাংলা একটি কমিটিও করেছে। ওই কমিটি ইতোমধ্যে একাধিক বৈঠক করলেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, বাখরাবাদ থেকে পৃথক হওয়ার পর কর্ণফুলীকে শুধু ভবনটি দেওয়া হয়েছে। অন্য সবকিছুই ছিল বাখরাবাদের নিয়ন্ত্রণে। বাখরাবাদের কাছে শুধু এফডিআর রয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়াও আছে ১৫ হাজার গ্রাহকের চাহিদা-পত্রের (ডিমান্ড নোট) বিপরীতে পরিশোধিত টাকা। এসব গ্রাহক বাখরাবাদে গ্যাস সংযোগের জন্য টাকা জমা দিলেও সংযোগ দিতে হচ্ছে কর্ণফুলীকে। এ ব্যাপারে কর্ণফুলীর পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া হলে বাখরাবাদ থেকে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু ওই টাকা গ্রহণ করেনি কর্ণফুলী।
এ ব্যাপারে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) মো. চৌধুরী মোহাম্মদ আলী গতকাল সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সাথে আমাদের দেনা-পাওনা রয়েছে এ কথা সত্য। বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
এতদিন পাওনা পরিশোধ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন তিতাস থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়েছি তখন তাদের বিপুল অংকের টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কর্ণফুলী থেকে আমাদের পাওনা রয়েছে এক হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে কর্ণফুলী আমাদের কাছ থেকে পাবে ৩০০ কোটি টাকা। কর্ণফুলী আমাদের পাওনা পরিশোধ না করলে আমরাও করব না।’
জানা যায়, ২০১০ সালের জুলাই মাসে পেট্রোবাংলা লিমিটেড চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সম্পদ ও দায়দেনা বিভাজনের জন্য। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় পেট্রোবাংলার পরিচালককে (অর্থ)।
পেট্রোবাংলার সচিবকে ওই কমিটির সদস্য সচিব করা হয়। সদস্য করা হয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের দুই এমডিকে। ইতোমধ্যে ওই কমিটি চারবার বৈঠক করেছে। প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তারিত।
সম্প্রতি কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) দ্বিজেন নাথ দে সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে কল্যাণ তহবিল ও কর্মকর্তা কর্মচারী সংক্রান্ত দেনা পেয়েছি। অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। দুইটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা যখন পেট্রোবাংলা সেখানে নিয়মের অন্যথা হওয়ার কোনো আশংকা নেই। তাই এ সংক্রান্ত কমিটি কোম্পানির নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সিদ্ধান্ত নেবে।’
এ বিষয়ে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী জামিল আহমেদ হালীমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।