আজ || সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫
শিরোনাম :
  গোপালপুরে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা       ধনবাড়ি মডেল প্রেসক্লাবে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদ ও দোয়া       গোপালপুরে মরহুম আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট       টাঙ্গাইল-২ আসনে গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী শাকিল উজ্জামান       গোপালপুরে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ       গোপালপুরে শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন সালাম পিন্টু       গোপালপুরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ       গোপালপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় জুলাই শহীদ দিবস পালিত       গোপালপুরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল       গোপালপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় ১২ মামলার আসামি চাকমা জাহাঙ্গীর নিহত    
 


ঘাটাইলে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখককে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ঝড়োহাওয়ায় টানা তিন দিন ছিড়ে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে এক নারীর মৃত্যুর প্রতিবাদ করায় মেহেদী হাসান মঞ্জুকে (৩৫) নামের এক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে একদল সন্ত্রাসী।

সোমবার (১৮জুন) সকালে ঘাটাইল উপজেলার আলুপাকুটিয়ায় এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা মেহেদী হাসানকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।

পরে আহত মেহেদী হাসান মঞ্জুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা। ঢাকা মেডিকেলের অর্থোপেডিকের চিকিৎসক আব্দুল্লাহেল হিমু জানান, মেহেদীর বাঁ হাতের হাড় ভেঙে যাওয়সহ তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন মেহেদী হাসান মঞ্জু জানান, ‘ঘটনার দিন আমার এক চাচা ও গ্রামের এক ছোট ভাইয়ের সাথে আমি নদীর পাড়ে বসেছিলাম। হঠাৎ আমাদের গ্রামের গোলাম মোস্তফা নামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি তার ছেলে, ভাই, ভাতিজাসহ ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসীবাহিনী আমার ওপর অকর্তিত হামলা চালিয়ে মাথাসহ সারা শরীরে কিল-ঘুষি ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে। লাঠির আঘাতে আমার একটি হাত ভেঙে গেছে। একটি আঙুলের মাংস ফেটে গেছে। মাথাসহ সারা শরীরের প্রচুর আঘাত করায় ভয়ানক ব্যথায় ছটফট করছি।’

মেহেদী হাসান আরও বলেন, কয়েক মাস আগে বাঁশের খুঁটি দিয়ে নেয়া বিদ্যুতের তার ঝড়োহাওয়ায় ধানক্ষেতে ছিঁড়ে পড়ে। তিন দিন অতিবাহিত হলেও দ্রুত প্রয়োজনী ব্যবস্থা না নেয়ার দরুন ছিঁড়ে পড়ে থাকা ঐ তারে জড়িয়ে এক নারীর মৃত্যুর প্রতিবাদ করায় আমার উপর এ সন্ত্রাসী হামলা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় মেহেদীর বাবা নূরুল ইসলাম বাদী হয়ে ঘাটাইল থানায় মোস্তফাসহ আটজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন মোস্তফার ছেলে ফিরোজ (২২), চাচাতো ভাই আজমত ওরফে পাঙ্গাস (৪২), মজনু মিয়া (৪৫), আব্দুল লতিফ (৪০), শফিকুল ইসলাম (৪২), ফরজ আলীর ছেলে আপেল (২৫) ও নজরুল (৩৬)।

ঘাটাইল থানার ওসি মাকসুদুল আলম বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। মামলা নেয়ার জন্য বলেছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা মেহেদী হাসান ঢাকায় ‘দেহঘড়ি’ নামের একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক পত্রিকায় কাজের পাশাপাশি ফেইসবুক ও ব্লগে লেখালেখি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে ২০০৭ সালের অগাস্টে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন।

গত মার্চে মেহেদী হাসানের গ্রামে ফুলজান বেগম (৪৫) নামের এক হতদরিদ্র নারী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার প্রতিবাদে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে নাগরিক সাংবাদিকতার প্ল্যাটফর্ম ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে একটি লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর সংবাদ প্রতিবেদনও হয়েছিল। সে সময় মেহেদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ‘আলুপাকুটিয়া গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি মৃত কোরবান আলীর ছেলে মোস্তফা ও তার চাচাত ভাই মৃত রহমানের ছেলে আজমত ওরফে (পাঙ্গাস) এলাকায় বিদ্যুৎ দেয়ার কথা বলে প্রতি জনের কাছ থেকে ২৭০০ (দুই হাজার সাতশ) টাকা করে এবং প্রতি সেচ পাম্পের মালিকের কাছ থেকে ৭০০০ (সাত হাজার) টাকা করে আদায় করেন। এভাবে শতাধিক লোকের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা আদায় করেন তারা। পরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার সময় নিয়ম অনুযায়ী তার ও খুঁটি না দিয়ে নিম্নমানের তার ও বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে অল্প বাতাসে তার ছিঁড়ে পড়েছিল, যাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ফুলজানের মৃত্যু ঘটে।’ সে সময় বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মোস্তফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ‘আপানারা যা খুশি লেখেন, তাতে আমার কিছু করতে পারবেন না।’ আর তার চাচাতো ভাই আজমত ওরফে (পাঙ্গাস) বিদ্যুতের লাইন দেয়ার জন্য টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ঝড়ে তার ছিঁড়ে পড়ার কারণে তার (ফুলজানের) মৃত্যু হয়েছে। এজন্য কেউ দায়ী নয়।’

মেহেদীর ছোট বোন শাহানাজ পারভীন ইতি বলেন, গত ২৫ মার্চ আলুপাকুটিয়া গ্রামে ঝড়ে বিদ্যুতের কভারবিহীন তার ছিঁড়ে পড়ে। ২৮ মার্চ সকালে ফুলজান বেগম তার জমির ধান দেখতে গেলে ওই ছিঁড়ে পড়া তারে স্পৃষ্ট হয়ে তার মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালী মহলের চাপে মৃত ফুলজানের স্বজনরা থানায় না জানিয়ে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করতে বাধ্য হন। ইতি আরও জানান, মৃত ফুলজানের ছেলে সুমন ও মেয়ে খাদিজা আক্তার বিদ্যুৎ লাইনে নিম্নমানের তার ও বঁশের খুঁটি ব্যবহারের কথা বললে গ্রামের মোস্তফা, আজমত আলী, সফি মন্ডল ও নজরুল তাদের ভয়ভীতি দেখায়। ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন ও ফেইসবুকে লেখালেখি হওয়ায় মোস্তফা ও তার লোকজন বিভিন্ন সময় ভাই মেহেদী ও মৃত ফুলজানের ছেলে সুমনকে খুন করার হুমকি দিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ মে সকালে মোস্তফা ও তার সঙ্গীরা দলবল নিয়ে সুমনের বাড়িতে অতর্কিত হামলা করতে উদ্যত হয়। পরে তাদের ডাকচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তারা সুমন ও খাদিজাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। ফেইসবুক ও ব্লগে লেখালেখি করার জন্য মেহেদী ও তার পরিবারকে একাধিকবার হত্যার হুমকি দেয়ার কথা থানায় অবগত করা হলে, থানা কর্তৃপক্ষ মোস্তাফাদের ডেকে বলে দিয়েছিল যাতে তারা আর ঝামেলায় না জড়ায়। কিন্তু ঈদের ছুটিতে ভাইয়া বাড়িতে এলে মোস্তফাসহ তার ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসীবাহিনী আমার ভাইয়ার উপর এ হামলা করা হল।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!