হত্যাকারীদের বাঁচাতে বিশ্বজিৎ দাসের লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দুর্বলকরে তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর বাবা অনন্ত চন্দ্র দাস।গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বজিতের বাবা এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বিশ্বজিৎকে এলোপাতাড়িকোপানো হয়েছে, কিন্তু ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে তার কিছুই উল্লেখ নেই।সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বজিতের ভাই উত্তম কুমার দাস বলেন, ‘আমরা এময়নাতদন্ত প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা চাই, নতুন করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনদেওয়া হোক। সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।নিরপরাধ কেউ যেন শাস্তি না পায়।’
গত ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচির দিন পুরান ঢাকায় জগন্নাথবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মীরা কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন নিরীহ দরজিদোকানি বিশ্বজিৎকে।এ বিচারের দাবিতে গতকাল এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দুমহাজোট। সংগঠনের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, বিশ্বজিতের লাশেরসুরতহাল প্রতিবেদন ও মামলার এজাহারও অত্যন্ত দুর্বল। তাই প্রকৃত তথ্য বেরকরে আনতে বিশ্বজিতের লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক মাকসুদুর রহমান ও সুরতহালপ্রস্তুতকারী সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুল হককে গ্রেপ্তারকরে রিমান্ডে নেওয়ার দাবি করেছে হিন্দু মহাজোট।এ সময় বিশ্বজিতের মা কল্পনা রানী দাসও উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের প্রায় পুরোটা সময় শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে অঝোরে কেঁদেছেন তিনি।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দচন্দ্র প্রামাণিক। তাতে অভিযোগ করা হয়, প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে বিশ্বজিৎকেহত্যা করা হলো। অথচ পুলিশ বিশ্বজিৎকে রক্ষা এবং খুনিদের গ্রেপ্তারে এগিয়েআসেনি। এক রিকশাচালক বিশ্বজিৎকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও চিকিৎসকেরা তাৎক্ষণিকচিকিৎসা শুরু করেননি। গণমাধ্যমে এ ঘটনা যখন ব্যাপকভাবে প্রচারিত হতে থাকল, তখন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।গণমাধ্যমে খুনিদের নাম-ছবি এলেও পুলিশ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে দায়সারাগোছের একটি মামলা করল। দায় অস্বীকার করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী । প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছিলেন, ক্রিকেট খেলাজেতায় ছাত্রলীগের আনন্দমিছিলে হামলার পর সংঘর্ষ হয়েছে, এর দায় আওয়ামী লীগেরনয়।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘আমরা অসহায়ের মতো দেখলাম, আসামিদের গ্রেপ্তারেরনির্দেশ না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তাদের বংশতালিকা ব্যাখ্যা করাহচ্ছে। সরকার কীভাবে নির্লজ্জ বেহায়ার মতো এত বড় নৃশংস হত্যাকাণ্ডেরখুনিদের গ্রেপ্তার না করে তুচ্ছতাচ্ছিল্য মন্তব্য দিয়ে এ দায় এড়িয়ে চলেছে।’সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘অবরোধ ঠেকানোর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যেযুবলীগ-ছাত্রলীগকে রাস্তায় নামতে আহ্বান জানালেন। সুতরাং এ খুনের দায় তিনিএড়াতে পারেন না। কিন্তু তিনি বেমালুম দায় এড়িয়ে গেলেন। পার্শ্ববর্তী দেশেএকজন মেয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ওই দেশের প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দিলেন।অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির আশ্বাস দিলেন। আর, বিশ্বজিতের ব্যাপারে আমাদেরপ্রধানমন্ত্রী আবিষ্কার করলেন ষড়যন্ত্র। কেন এত অবহেলা? এত তুচ্ছতাচ্ছিল্য? বাড়ির একটি কুকুর মারা গেলে বাড়ির কর্তা একটু হলেও শোকগ্রস্ত হন।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের পক্ষ থেকে চারটি দাবি জানানো হয়।তা হলো: গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত ছবি দেখে সব আসামিকে গ্রেপ্তার করেদ্রুত বিচার আইনে বিচার করে ফাঁসি নিশ্চিত করা, ঘটনার দিন পুলিশ ও চিকিৎসকনিজ নিজ দায়িত্ব পালন না করায় তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা, ময়নাতদন্তকারী ও সুরতহাল প্রস্তুতকারীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে আনা এবংবিশ্বজিতের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া।