গোপালপুর বার্তা ডেক্স :
টাঙ্গাইলের গোপালপুর-ভূঞাপুর যমুনার চরাঞ্চল এখন মাদক পাচার, ব্যবসা আর দুস্কৃতকারিদের অভয়ারণ্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি না থাকায় নিরীহ মানুষকে আটকিয়ে মুক্তিপন আদায়ের ঘটনাও ঘটছে। চরবাসিরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
জানা যায়, যমুনার পানি কমে যাওয়ায় জেগে উঠছে বড় চর। ধূধূ বালু চরের কোন কোনটিতে বাড়ি ঘর নেই। নির্জন চরে এখন দুস্কৃতিকারিরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার বয়ড়া গ্রামের এনজিও কর্মী নাজির হোসেন জানান, গত ২ জানুয়ারী টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের অর্জুনা গ্রামের আত্মীয় বাড়ি থেকে ফেরার পথে দুই বন্ধুর সাথে গোপালপুর উপজেলার নলিন বাজার থেকে দেড় কিলো পশ্চিমে যমুনা চরে বেড়াতে গেলে ৫/৭ কিশোর পথরোধ করে ছুরি চাকু দেখিয়ে নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। গত ১২ জানুয়ারী গোপালপুর পৌর শহরের সূতি গ্রামের কলেজ শিক্ষক আমানত আলীর ছেলে কলেজ পড়ুয়া তৌফিকুর রহমান সহপাঠি আবদুল্লাহ আল মাহদীকে নিয়ে যমুনার ইকো চরে বেড়াতে গিয়ে দুস্কৃতকারিদের কবলে পড়েন। ৬/৭ জন সশস্ত্র দুস্কৃতকারি তাদের আটক করে। ওদের হাতে পিস্তল, ছুরি চাকু ও রাম দা ছিল। দু‘জনকে মারপিট করে কাঁশবনে আটকে রেখে পরিবারের সদস্যদের ফোন করে একটি বিকাশ নাম্বারে ২০ হাজার টাকা দিতে বলে। তৌফিক জানায়, পরিবারের সদস্যরা ওই নাম্বারে টাকা পাঠানোর পর তারা মুক্তি দেয়।
গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের নলিন গ্রামের মোফাজ্জ্বল হোসেন জানান, ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত একটি বড় চর ইকো চর। ভূঞাপুর উপজেলা যুবলীগের এক নেতা কয়েক বছর আগে এ চর জবরদখল করে নামকরণ করে ইকো পার্ক বা ইকো চর। সেখানে বাংলো ঘর ও কফি হাউজ নির্মাণ করা হয়। দিনের বেলা পর্যটকরা নদী ও চর দেখার জন্য সেখানে আড্ডা দিতেন। রাতের বেলা জুয়া হাউজী ও মাদকের আসর বসতো। ভূঞাপুর উপজেলা প্রশাসন একবার এটি ভেঙ্গেও দেয়। কিন্তু লীগ সরকারের প্রভাবশালীদের মদদে সেটি আবার চালু হয়। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এ ইকো পার্ক বা চর হাত বদল হয়ে যায়। ভূঞাপুর উপজেলার একটি রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা এ চরের নিয়ন্ত্রণ নেন। এ চরে এখন তাদের কথাই শেষ কথা। তাদের তত্বাবধানেই এখন এ চরে নিয়মিত মাদকের হাট বসছে। নিরাপত্তার অভাবে পর্যটকরা আর এখানে আসেন না। কেউ বেড়াতে এলে মারধোর, ছিনতাই বা মুক্তিপন আদায়ের শিকার হন।
অর্জুনা গ্রামের হাসান আলী জানান, ইকো চর ছাড়াও টাঙ্গাইলের গোপালপুর ও ভূঞাপুর এবং জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত কয়েকটি চর মাদক ব্যবসায়ী, জুয়াড়ী ও ছিনতাই কারিদের অভয়ারণ্য। সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া থেকে মাদকের চালান চরাঞ্চল হয়ে টাঙ্গাইল ও জামালপুরের অনেক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। যমুনার চরাঞ্চল এখন মাদক চোরাচালানের নিরাপদ রুট। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ দিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন তৎপরতা না থাকায় যমুনার চরাঞ্চল মাদক নির্ভর ক্রাইম জোনে পরিনত হয়েছে। আশ পাশের যমের চর ও বিহারী চরেও মাদক ব্যবসায়ীরা থাবা বিস্তার করেছে। নলিন মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জু আনোয়ারা ময়না জানান, যমুনার চরাঞ্চলে ভয়াবহ মাদক ব্যবসার বিস্তার ঘটায় নানা অপরাধ ঘটছে। পর্যটকরা যমুনার চরাঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য খুব কমই আসছেন।
ভূঞাপুর থানার ওসি কে এম রেজাউল করিম জানান, কথিত ইকো চরসহ এসব চরাঞ্চল থানা থেকে বেশ দূরে। যাতায়াত খুবই কষ্টকর। এসব অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় আসে নাই। কেউ অভিযোগ নিয়ে এলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গোপালপুর থানার ওসি গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন জানান, ঘটনাস্থল ভূঞাপুর উপজেলা সীমানায় পড়ে। চরাঞ্চলে গোপালপুরের দুই কলেজ শিক্ষার্থীকে আটক করে মুক্তিপন আদায় কারিদের চিহ্ণিত করা হয়েছে। ভূঞাপুর থানা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে দুস্কৃতকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।