গোপালপুর বার্তা ডেক্স :
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে শিশু ফুটবলারকে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় আসামি আলেফ শেখের বিরুদ্ধে সোমবার (২৮ আগস্ট) আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। এদিকে আসামির পর এবার বাদী ও শিশুর মাকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে আসামির আইনজীবী ও স্কুলের সভাপতি রবিউল ইসলাম রতনের বিরুদ্ধে।
বাদী সোমবার (২৮ আগস্ট) গোপালপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগে অভিযুক্ত আইনজীবী রবিউল হাসান রতনকে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানান। লিখিত দাবিতে বলা হয়, ভুক্তভোগী যে স্কুলে পড়ালেখা করে আইনজীবী সেই স্কুলের সভাপতি। ওই স্কুলের শিক্ষার্থী এবং শিশু ফুটবলার ধর্ষণচেষ্টার শিকার হলেও শিশুটির কোনো খোঁজ নেননি তিনি। বরং জামিন করা আসামিকে সঙ্গে নিয়ে ব্যান্ডপার্টি ভাড়া করেন। এবং আসামির সঙ্গে বাদ্য বাজনায় যুক্ত হয়ে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ান। তিনি এখন ভুক্তভোগীকে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির এমন কাণ্ডে ভুক্তভোগী স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে।
মামলার আসামি হেমনগর ইউনিয়নের উড়িয়াবাড়ী গ্রামের মৃত ছামান আলী শেখের ছেলে আলেফ শেখ। সে মুদি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
গোপালপুর থানার ওসি মো. জিয়াউল হক মোর্শেদ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ভুক্তভোগীর জবানবন্দী এবং সাক্ষ্য প্রমাণে ঘটনার সত্যতা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। চার্জশিটে বলা হয়, উড়িয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী এবং শিশু ফুটবলারকে গত ২৪ জুলাই কাঁঠাল খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে নির্জন বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণচেষ্টা চালায় আলেফ শেখ। তার কান্নাকাটিতে পড়শিরা এগিয়ে এলে আলেফ পালিয়ে যায়। একই দিন থানায় মামলা হলে আলেফ শেখকে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান দেওয়া হয়। মামলার বাদী এবং ভুক্তভোগীর মা গত শনিবার (২৬ আগস্ট) গোপালপুর থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, আসামি আলেফ শেখ গত বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) আদালত থেকে জামিন নিয়ে গলায় ফুলের মালা পড়ে ব্যান্ডপার্টি সহকারে রাত নয়টায় গ্রামে প্রবেশ করে। সঙ্গে ছিল আলেফ শেখের আইনজীবী রবিউল হাসান রতন এবং আসামির ছেলে সুজন, ভাতিজা শিপন, আয়নাল ও করিমসহ শতাধিক লোক ব্যান্ডপার্টির সঙ্গে নেচে গেয়ে সারা গ্রাম মাতিয়ে তোলে। একপর্যায়ে জয়ধ্বনি দিয়ে বাদীর বাড়ির আঙ্গিনায় নাচগানের পর গালিগালাজ এবং মারপিটের হুমকি দেয়। এ অবস্থায় বাদী ও ভুক্তভোগী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আলীম হোসেন জানান, শিশু নির্যাতন মামলায় জামিন পেয়ে রাতজুড়ে নাচগানের পৈশাচিক উল্লাসে গ্রামবাসী হতবাক হয়ে যায়।
ব্যান্ডপার্টির প্রধান কালিহাতী উপজেলার পশ্চিম নারান্দিয়া গ্রামের অনিক লাগাচি জানান, আলেফ শেখ গত বৃহস্পতিবার ধর্ষণচেষ্টা মামলায় আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে তার আইনজীবী রবিউল হাসান রতনকে সঙ্গে নিয়ে তিন হাজার চারশ টাকায় তাকে ভাড়া করেন। ওই আইনজীবী ও আসামি বাদ্য বাজনার সময় নেচে গেয়ে উল্লাস করেন।
হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান তালুকদার বাদীকে হুমকির নিন্দা এবং শাস্তি দাবি করেন।
অভিযুক্ত আইনজীবী ও স্কুল কমিটির সভাপতি রবিউল হাসান রতনকে মোবাইলে কল দিলে তিনি অনেকক্ষণ নিরুত্তর থাকেন। এবং পরে জানান, বাদ্য বাজনা বাজানোটা গ্রামের পরিবেশের জন্য মঙ্গলকর হয়নি। তবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা।
প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। স্কুলের সভাপতি ও অভিযুক্ত আসামির আইনজীবী বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সভাপতির আচরণে আমাকে বিস্মিত করেছে। উনার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মফিজুর রহমান জিন্নাহ জানান, শিক্ষার্থীর মায়ের একটি দরখাস্ত পেয়েছি। ঘটনাটি দুঃখজনক। অচিরেই উপজেলা শিক্ষা কমিটির মিটিং ডেকে স্কুলের সভাপতির বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তদন্তকারী অফিসার হেমনগর পুলিশ ফাড়ির সাব-ইন্সপেক্টর বশির আহমেদ জানান, বাদী ও ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাদ্যবাজনা বাজিয়ে ভুক্তভোগীকে মারপিটের হুমকির অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। দুই এক দিনের মধ্যে বিবাদীর বিরুদ্ধে আদালতে একটি আলাদা প্রসিকিউশন দাখিল করা হবে।