আজ || বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪
শিরোনাম :
  গোপালপুরের মোহনপুরে পোস্টঅফিসের ঘর না থাকায় ভোগান্তি       গোপালপুরে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে গুণী শিক্ষক সংবর্ধনা       গোপালপুরে আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মোমেন গ্রেফতার; ফাঁসির দাবিতে মিছিল       গোপালপুরে ডেইরি ফার্ম মালিক ও আইএফআইসি ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতবিনিময়       গোপালপুর উপজেলা ডেইরি ফার্ম মালিক সমিতির কমিটি গঠন       বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে -ইলিয়াস হোসেন       গোপালপুরে সীরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল অনুষ্ঠিত       গোপালপুরে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা       গোপালপুরে ১০ম গ্রেড প্রদানের দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন       গোপালপুরে জাতীয়করণের দাবিতে বেসরকারি শিক্ষকদের মানববন্ধন     
 


উনি একজন স্যার ।। স্যার পরিচয়ে জুতসই ব্যবসা চালান।।

:: জয়নাল আবেদীন ::
উনি একজন স্যার। আর স্যার ডাক নামের হাঁকডাকে উনার ব্যবসাপাতি ভালোই চলে। উনি স্যার সৈয়দ আহমেদ নন। নবাব স্যার সলিমুল্লাহও নন। স্যার রহমতউল্লাহ ও নন। উনি খন্দকার মোস্তফা স্যার।

আমাদের মোস্তফা স্যার বৃটিশ খেতাবধারী স্যার নন। কারণ বৃটিশ খেতাবধারী স্যাররা নামের আগে স্যার খেতাব যুক্ত করতেন। আর মোস্তফা স্যার নামের পরে স্যার যুক্ত করেছেন। আমাদের সকলের এ শ্রদ্ধেয় মোস্তফা স্যার টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার বিখ্যাত ঝাওয়াইল ইউনিয়নের কাহেতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক। স্যারের বাড়ি একই ইউনিয়নের ছয়ানীপাড়া গ্রামে।

ভেঙ্গুলা বাজারে স্যারের একটি পুরনো মোটর সাইকেল কেনা-বেচার দোকান রয়েছে। সেই দোকানে ভাঙ্গাচোরা, পুরান, নম্বরবিহীন, চোরাই সব ধরনের মোটর সাইকেল বেচাবিক্রি হয়। স্যার এ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। মোস্তফা স্যারের বাপদাদার দেয়া নাম খন্দকার মোস্তফা। আর স্যার পৈত্রিক নামের সাথে স্যার যুক্ত করে পদবিটায় রশনাই এনেছেন।

খন্দকার পদবী সুলতানী আমলে বাংলায় চালু হয়। এক অর্থে যারা খুব ধার্মিক, সভ্রান্ত এবং এরাবিয়ান কান্ট্রি থেকে বাংলায় এসেছিলেন তারাই খন্দকার বংশীয়। সেই হিসাবে  মোস্তফা স্যার  নামের আগে বংশীয় খন্দকার পদবী এবং নামের শেষে পেশাগত স্যার যুক্ত করেছেন।

মোস্তফা স্যারকে ছোট করার জন্য এ বয়ান আরম্ভ করিনি। কারণ বড়ছোট সব শহরের অলিতেগলিতে কোচিং বা টিউশনি করানো স্যারের সাইনবোর্ড দেখা যায়। যেমন অমুক স্যার গ্যারান্টি সহকারে অঙ্ক বা ইংরেজি পড়ান, অমুক স্যার চ্যালেঞ্জ দিয়ে মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং চান্স পাওয়ার কোর্স করান। এভাবে কতো পন্ডিত স্যারের সাইনবোর্ড রাস্তার পাশে হরদম মেলে।

তাহলে বলতেই পারেন, মোস্তফা স্যারকে নিয়ে ইলাস্টিকের মতো টেনে আলোচনার পরিসর এতো বাড়াচ্ছেন কেন? আলোচনা এ জন্য যে, মোস্তফা স্যার টিউশনি বা কোচিং করার বিজ্ঞাপন বা সাইনবোর্ড দেননি। তিনি তো দিয়েছেন পুরনো মোটর সাইকেল বিক্রির সাইনবোর্ড।

প্রাইমারী স্কুলের স্যারদের চাকরি এখন সরকারি। গ্রামের অধিকাংশ পোলাপান স্যারদের পড়াশোনার স্টাইল পছন্দ না করায় নুরানি বা কওমী মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছেন। ছাত্রশূণ্য অধিকাংশ স্কুলে বেশিক্ষণ মন না বসায় মোস্তফা স্যারের মতো কোন কোন সম্মানিত স্যাররা পুরনো মোটরসাইকেল বিক্রির মহৎ ব্যবসায় নেমেছেন। কেউ কেউ শেয়ারের ভাঙ্গারী দোকান দিয়েছেন।

আমাদের এমপি ছোট মনির সাহেব কয়েক দিন আগে গোপালপুর সূতি ভিএম সরকারি হাইস্কুল মাঠে এক শিক্ষক সমাবেশে অভিযোগ করেন, শিক্ষকরা এখন সুদের ব্যবসা করছেন। এদেরকে তিনি এ সুদের ব্যবসা পরিত্যাগের আহ্বান জানান।

গতকাল রবিবার রাতে মোস্তফা স্যারের দোকানে সাঁটানো সাইনবোর্ডে উনার মোবাইল নাম্বার পেয়ে স্যারকে ফোন দিলাম। রিং বাজতেই স্যার রিসিভ করলেন।
– হ্যালো কে?
স্যার আমি জয়নাল আবেদীন, গোপালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি।
– বলুন!
– স্যার ভেঙ্গুলা বাজারে কি আপনার মোটর সাইকেলের দোকান আছে?
– হাঁ আছে, তবে পুরনো মোটরসাইকেল কেনাবেচা হয়। কেন আপনার কি মোটর সাইকেল লাগবে?
– না স্যার লাগবেনা। তবে আমি জানতে চাচ্ছিলাম আপনার ব্যবসাটা কেমন চলছে?
– চলছে ভালোই।
– স্যার আপনার দোকানের সাইনবোর্ডে দেখলাম আপনার নামের শেষে স্যার উপাধি লেখা। এখানে স্যার শব্দ লেখা কি জরুরী ছিল?
– দেখুন স্যার ডাক কেনা শুনতে চায়। এ ডাক শুনলে কার না বুক জুড়িয়ে যায়। তবে আমি শিক্ষক মানুষ। সব সময় স্যার ডাক শুনে থাকি। তাই স্যার ডাকশুনে মনের প্রফুল্লতা বাড়াতে চাইনা। আমি মুলতঃ ব্যবসার লাভালাভের সুবিধা পাওয়ার জন্য স্যার পদবিটা নামের শেষে জুড়ে দিয়েছি। স্যার শব্দে মানুষ বুঝতে পেরে আমি শিক্ষক। আর শিক্ষক ভরসায় মানুষের আস্থা সৃষ্টি হয়। এতে ব্যবসাটা ভালো হয়।

এই যে, স্যার নিয়ে এতোকিছু হয়, সে সম্পর্কে দুই কথা বললে কি অসঙ্গত হবে? ইংরেজরা প্রথম নাইটহুড উপাধি দেয়া শুরু করেন। সংক্ষেপে যাকে বলা হতো নাইট। এ নাইটদের স্যার সম্বোধনের রেওয়াজ ছিল। আর স্যার শব্দটি নামের আগে যুক্ত হতো। যেমন স্যার আইজেক নিউটন, স্যার এন্থনী ইডেন।
বলা অনাবশ্যক, ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের সময় ইংরেজ সেনাদের নাইট উপাধি দেয়া হতো। পরবর্তীতে ইউরোপের শাসক ও জমিদাররা নাইট উপাধি লাভ করতে  থাকেন। বৃটিশরা ভারত বর্ষ দখলের পর অনুগত ব্যক্তিদের নাইট উপাধি দেয়া শুরু করেন। এ নাইটরা সমাজে স্যার হিসাবে সম্মানিত হতেন। এ দিয়ে ইংরেজরা ভারতবাসিকে বুঝিয়েছেন, দেখো দেখো আমরা কিন্তু স্যার তৈরি করতে পারি। তাই আমাদেরকে মহা স্যার হিসাবে মানো।

পাকিস্তানের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৯৯৭ সালে বৃটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাভেদ প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে স্যার খেতাব বা উপাধি প্রদান করেন। কিন্তু সেদেশের বিখ্যাত আইনজীবি ব্যারিষ্টার জাভেদ ইকবাল জাফরী আদালতে মামলা ঠুকে দেন। মামলার আরজিতে অনেক কথার মধ্যে এটি ছিল যে, উপনিবেশের গন্ধ থাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী যেহেতু স্যার উপাধি গ্রহণ করেননি, তাহলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কেন সেই খেতাব গ্রহণ করবেন। মামলার কারণে স্যার খেতাব ঝুলে যায়। সেটি আর নওয়াজ শরীফের কপালে জোটেনি।

বৃটিশ খেতাবে স্যার শব্দটা নামের আগে যুক্ত হতো। আর মোস্তফা স্যারেরা স্যার শব্দটা যুক্ত করেন নামের শেষে। নামের আগে বা পরে যেখানেই যুক্ত  হোকনা কেন স্যার বলতে, শুনতে যেমন অনেকেই পছন্দ করেন, তেমনি স্যার না বলে পদবী ধরে ডেকে তৃপ্তি পেতে চান অনেকেই। তাই স্যার ডাকাডাকি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে, সরবে নিরবে হাঁকাহাকি, ডাকাডাকি হরদম চলছেই, চলবেই। কারণ স্যার শব্দটি মার্বেলের মতো গোলাকার। একটু টোকা লাগলেই গতি পায়। সামনে এগিয়েও যায়। আবার পিছিয়েও আসে। কি যাদুকরী শব্দ ইংরেজরা আবিস্কার করিছে মাইরি!  এটি সামনে যায়, পিছনে যায়, ঘূর্ণাবত্যের মতো অবিরাম নিজ অক্ষে ঘুরপাঁক খায়।

লেখক : সম্পাদক, গোপালপুর বার্তা। সভাপতি, গোপালপুর প্রেসক্লাব এবং উত্তর টাঙ্গাইল সাংবাদিক ফোরাম।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!