🔳 পরিদর্শনে গিয়ে একজন শিক্ষার্থীও পাওয়া যায় না অনেক স্কুলে। 🔳 শিক্ষার্থীশূন্য স্কুলে শোভা পায় শুধু চেয়ার-বেঞ্চ। 🔳 কওমী ও নূরানী মাদ্রাসায় বাড়ছে শিক্ষার্থী। 🔳 স্কুলে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির উদ্যোগ নেই শিক্ষকদের।
জয়নাল আবেদীন :
“অদ্য ২৪ নভেম্বর ২০২২ গোপালপুর পৌরসভার ডুবাইল দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করি। এ সময় স্কুলের ৪ জন শিক্ষক উপস্থিত থাকলেও স্কুলে কোন শিক্ষার্থীর উপস্থিত নেই। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থী শূন্য বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয়ার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন পাঠানো ছাড়া গত্যন্তর নেই। কেন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিত নেই এবং শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল এর লিখিত জবাব প্রত্যেক শিক্ষককে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে নিন্ম স্বাক্ষরকারীর নিকট দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হলো। – মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার, গোপালপুর, টাঙ্গাইল”। স্কুল চলাকালিন ওই বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষার্থী না পেয়ে সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার এমন কড়া ভাষায় স্কুলের পরিদর্শন খাতায় মন্তব্য করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানায়, পরিদর্শনে গিয়ে প্রায়ই শিক্ষার্থী শূন্য স্কুল চোখে পড়েছে। আর এসব স্কুল এখন শিক্ষা বিভাগের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। শিক্ষা বিভাগের একাধিক প্রতিবেদনেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী আশঙ্কাজনক হারে কমে কওমী ও নূরানী মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণহীন এমন মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় আরো প্রসার লাভ করলে সমাজে সংখ্যাবৈষম্য ও লিঙ্গবৈষম্য তৈরির আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের ওই প্রতিবেদন।
জানা যায়, গোপালপুর উপজেলায় ১৬১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি হিসাবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২১ হাজার। বেসরকারি সংস্থার মতে করোনাকাল পার হওয়ার পর শিক্ষার্থী সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। কিন্তু শিক্ষা বিভাগের হিসাব আগেরটাই দেখানো হচ্ছে।
যাই হোক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে সুদৃশ্য বহুতল ভবন, ডিজিটাল ল্যাব, অত্যাধুনিক শিক্ষা সরঞ্জাম, মানসম্মত ওয়াসরুম, দামি চেয়ার, বেঞ্চ, টেবিল, আলমিরা, বৈদ্যুতিক পাখাসহ সকল উপকরণ এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক। কিন্তু হাতে গোনা ২০/২৫টি স্কুল বাদে কোন স্কুলেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষার্থী নেই। কোন কোন স্কুলে ৫/৭জন শিক্ষার্থী নিয়মিত উপস্থিত থাকে। আবার কোন কোনটিতে ৫০/৬০ জন করে কাগজেকলমে ভর্তি দেখানো হলেও স্কুলে সারা বছর ক্লাস ও পাঠ্য কার্যক্রমে অংশ নেয় ২০/২৫ জন। অবশিষ্ট শিক্ষার্থী আসলে বায়বীয়।
কোন কোন স্কুলে শিক্ষার্থীর চেয়ে শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। ডুবাইল দক্ষিণপাড়া এবং সেনেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী নেই। হরিষা, সূতি লাঙ্গলজোড়া, পঞ্চাশ, হরিদেববাড়ী, ধোপাকান্দি, ধোপাকান্দি পশ্চিম পাড়া এবং পশ্চিম ডুবাইলসহ ৪৭টি স্কুলে খাতাকলমে ২৫/৩০ করে শিক্ষার্থী রয়েছে।
গত ৩ এপ্রিল পৌরসভার ডুবাইল দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলে কোন শিক্ষার্থী নেই। তিনটি ক্লাস রুমেই তালাবদ্ধ। অফিস কক্ষে ৪জন শিক্ষক অলস সময় পার করছেন। একজন আরেকজনের চুলের বেণী গেঁথে দিচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন জানান, দুই চারজন ছাত্র প্রতিদিনই স্কুলে আসে। স্কুলের পাশেই ফোরকানিয়া ও নূরানী মাদ্রাসা গড়ে উঠায় অভিভাবকেরা বাচ্চাদের সেখানে নিয়ে পড়াশোনা করান। এজন্য তাদের স্কুলে ছাত্রছাত্রী নেই বললেই চলে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামে স্কুল গমনোপযোগী শিশুর সংখ্যা ১২২ জন। এসব শিশুরা কেন বাড়ির পাশে অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় রেখে উচ্চহারে বেতন দিয়ে ওইসব মাদ্রাসায় বাচ্চাদের পড়ালেখা করাতে দেন এমন প্রশ্নে স্কুলের অপর তিন শিক্ষক জানান, করোনাকালে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় দীর্ঘ দিন বন্ধ রেখে এসব মাদ্রাসা খোলা রাখায় শিশু এবং তাদের অভিভাবকরা স্কুল বিমুখ হয়ে পড়ে। বহু চেষ্টা করেও তাদেরকে আর স্কুল মুখো করা যাচ্ছেনা। স্কুলে অভিভাবক ও মা সমাবেশ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলেও অভিভাবকরা গা করছেননা।
একইভাবে উপজেলার হরিষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেনেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধোপাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধোপাকান্দি পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হরিদেববাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পঞ্চাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চোরেরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পোড়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ডুবাইল পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে দেখা যায়, সেখান প্রাক-প্রাথমিকে বড় জোর এক থেকে পাঁচজন এবং তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে কখনো ২/৩জন আবার কখনো কখনো কোন শিক্ষার্থীই স্কুলে উপস্থিত থাকেনা।
শিক্ষার্থীর এমন আকাল কেন এমন প্রশ্নে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওই একই যুক্তি। করোনা ভাইরাস সব কিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে। করোনাকালের অনাকাঙ্খিত ছুটির দরুন শিশুরা স্কুল বিমূখ হয়ে নূরানী বা কওমী মাদ্রাসার দিকে ঝুঁকেছে। তাদেরকে কোনভাবেই ফেরানো যাচ্ছেনা। স্কুল পরিচলানা কমিটি তাদেরকে কোন সহযোগিতা করছেননা। অভিভাবকেরাও সচেতন নন।
উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের হরিষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য গত ২৪ মার্চ গ্রামে মাইকে প্রচার চালিয়ে স্কুল মাঠে কয়েকশ গ্রামবাসী সমাবেশ করেন। তারা ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটি শিক্ষার্থী শূন্য হওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে দায়ী করেন। তারা স্কুলে পুনরায় শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিতে প্রধান শিক্ষককে বদলির দাবি জানান। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ তুলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন।
ওই গ্রামের ইউপি সদস্য মো. তারেক মিয়া জানান, স্কুলের বাচ্চাদের দিয়ে প্রধান শিক্ষক তার বাড়ির কাজ করান। অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। স্কুলের সাথেই তার বাড়ি। তাই দেরিতে স্কুলে আসেন। ফলে পড়াশোনার মান একদম নিচে নেমে গেছে। এখন শিক্ষার্থীর অভাবে স্কুলটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শিক্ষা বিভাগ এসব অভিযোগ আমলে না নেয়ায় গ্রামবাসিরা স্কুলে বাচ্চা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকটা জেদ করেই তারা নূরানী মাদ্রাসায় পাঠাচ্ছে তাদের সন্তানকে। তাছাড়া নূরানী মাদ্রাসায় এখন ইংরজি ও অংকসহ কেজি স্কুলের সিলবাস অন্তর্ভূক্ত করে পড়ালেখা করানো হচ্ছে।
ধোপাকান্দি পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিউলী লতা জানান, তার স্কুলে দিন দিন শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার মূল কারণ করোনার পর অভিভাবকদের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা বৃদ্ধি। আশপাশের গ্রামে যখন ধর্মসভা হয় তখন ওয়াজকারিরা ওয়াজে বলেন, “মাগো তোমার একটি সন্তানকে মাদ্রাসায় দিয়ে বেহেস্ত কিনে নিন। মাদ্রাসায় পড়ে আপনার ছেলে আলেম হবে। সন্তান আপনার জানাযা নামাজ পড়বে। কবর জিয়ারত করতে গিয়ে দু’চোখের জল ফেলে আপনার কবরে আজাব পানাহারের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করবেন। আর স্কুলে পড়া ছেলেমেয়েরা নাস্তিক হয়। চাকরি করে ঘুষ খায়। সেকুলার পড়াশোনা করা এসব চাকরিজীবিরা বাবামার জানাযা নামাজ পর্যন্ত পড়াতে পারেনা। এরপর ধর্ম সভায় হাজিরান মা-বোনদেরকে বক্তা হুজুর সন্তানকে মাদ্রাসায় পড়ানোর জন্য বাবামাকে প্রকাশ্যে বাইয়্যাত পড়ান এবং দোয়া করেন।” তার মতে প্রাইমারী পর্যায়ে ধর্ম শিক্ষার ব্যবস্থা করলে অর্থাৎ ধর্ম শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলে, স্কুল রেখে অনেক অভিভাবক নূরানী মাদ্রাসায় ছেলেমেয়ে পাঠাতোনা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যতো শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই এভাবে নূরানী ও কওমী মাদ্রাসার পক্ষে থেকে শীতকালে ইসলামী জলসা করে প্রাথমিক শিক্ষার বিরুদ্ধে বিষাদগার করানো হয়। প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি ঘৃণা জন্মানো হয়। এতে করে গ্রামের মানুষের মধ্যে যে মাইন্ডসেট তৈরি হয় তাতে সন্তানকে মাদ্রাসায় পাঠাতে উৎসাহিত হয় অনেকে।
উপজেলার বনমালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা ইয়াসমিন ঝরণা জানান, তিনি নিজে একজন সঙ্গীত শিল্পী। স্কুলে তার একটি সাংস্কৃতিক টিম রয়েছে। স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ভালো। এজন্য তিনি অনেকের চক্ষুশুল হয়েছেন। আশপাশের মাদ্রাসার এক শ্রেণির শিক্ষক সংগীত চর্চার জন্য তাকে নাস্তিক বলে আখ্যা দিয়ে বার বার থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন।
মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জু আনোয়ারা ময়না তার ভেরিফাইড ফেসবুক ওয়ালে লিখেন, ‘দিন দিন ক্যাচমেন্ট এলাকা ছোট হয়ে আসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে আসছে। কোন পরিবারই এক দুটির বেশি বাচ্চা না নেওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছেনা। আবার পরকালের সুখের আশায় বাবামা মাতৃগর্ভেই শিশুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা নূরানীতে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে। তিনি অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর খরার জন্য এলাকাবাসি, স্থানীয় প্রশাসন, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজকে এজন্য অনেকটা দায়ী করলেও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে এড়িয়ে গেছেন।
অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান, নূরানী ও কওমী মাদ্রাসাগুলোতে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়না। জাতীয় পতাকা তোলা হয়না। বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ভাষা দিবস, শোক দিবস বা নববর্ষ পালন করা হয়না। এসব প্রতিষ্ঠানে যারা লেখাপড়া করে তারা মুক্তিযুদ্ধের অর্জন, চেতনা বা আদর্শ সম্পর্কে পুরোপুরিই অন্ধকার থাকে। সরকার এদের দিয়ে কিভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে? তিনি আরো জানান, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সেকুলার বা বিজ্ঞান শিক্ষা এবং ধর্মীয় বা মাদ্রাসা শিক্ষা দুটোর মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। শিক্ষা নিয়েও আমাদের সমগ্র সমাজে রুচির খরা দেখা দিয়েছে বলেই অনুমিত হচ্ছে। এর দায়দায়িত্ব সবাইকে নিতে হবে।
যেসব স্কুল সরজমিন পরিদর্শন করছি, সেসব স্কুলে যে ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে সেখানকার শিক্ষকরা তা চালাতে জাননেনা। কোন কোন স্কুলের ল্যাপটপ আলমীরায় দীর্ঘদিন ফেল রাখায় নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ কেউ তা নিজের স্কুলকলেজ পড়ুয়া সন্তানকে দিয়ে দিয়েছেন। ডিজিটাল কনটেন্ট দেখানোর জন্য যেসব প্রজেক্টর দেয়া হয়ছিল তা অনেকেই ব্যবহার না করে বাড়িতে নিয়ে ফেলে রেখেছেন। তাহলে সরকার কিভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক গড়ে তুলবন? আর এসব দেখার দায়িত্ব কার ছিল এবং তারা কি তা দেখছেন।
সম্প্রতি দৈনিক ইত্তেফাকে স্লিপের টাকা নয়ছয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ২০জন প্রধান শিক্ষককে শোকজ করেছেন। এটি যেন আইওয়াশ না হয় তা সবাই নিশ্চিত হতে চায়।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার আব্দুর রউফ জানান, শুধু মাত্র কওমী আর নূরানী মাদ্রাসার বিরুদ্ধে কথা বলে সস্তায় পার পাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার সুদূর পরিবেশ তৈরি করতে পারেননা বলেই অভিভাবকেরা অবৈতনিক স্কুল রেখে উচ্চহারে বেতন ও ফি দিয়ে বাচ্চাদের নূরানী মাদ্রাসায় পড়ালেখা করান। শিক্ষক, স্কুল পরিচালান কমিটি এবং প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগকেই গুরু দায়িত্ব নিতে হবে বাচ্চাদের স্কুলমুখো করার। তিনি প্রাথমিক শিক্ষার দুর্বলতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ে ডিজিটাল শিক্ষার জন্য ডিজিটাল ল্যাব করে দিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ স্কুলের শিক্ষকরা কম্পিউটার চালাতে জানেননা। শিশুপযোগী কন্টেন্ট তৈরি করে প্রজেক্টরে চালাতে জানেননা। কম্পিউটার এবং অনলাইন কার্যক্রমের প্রজেক্টর ও মডেম বাড়িতে নিয়ে আলমারীবদ্ধ করে রেখে দেন। দীর্ঘ দিন ব্যবহার না করায় এসব ডিজিটাল সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে সরকারের কোটি টাকা জলে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।
গোপালপুর উপজলা সহকারি শিক্ষা অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, নানা কারণে শিশু ও অভিভাবকেরা স্কুল বিমুখ হওয়ায় অধিকাংশ স্কুলে শিক্ষার্থীর খরা চলছে। যেসব স্কুলে একদম শিক্ষার্থী নেই অথবা শিক্ষার্থী নামমাত্র রয়েছে, তাদেরকে বার বার সতর্ক করা হয়েছে। হোমভিজিট এবং মা সমাবশ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গোপালপুর উপজলা শিক্ষা অফিসার মফিজুর রহমান জিন্নাহ জানান, শিক্ষকরা স্কুলে তো আর বেঞ্চ পড়াবেন না। পড়াশোনার জন্য স্কুলে শিক্ষার্থী থাকা চাই। সেই ছাত্রছাত্রীই যদি স্কুলে না থাকে তাহলে কেমন হবে। করোনার কারণে এমন দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। শিক্ষকদের চাপের মুখে রাখা হয়েছে। শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারাও প্রতিদিন স্কুল ভিজিট করছেন।
শিক্ষা অধিদপ্তর গত ৬ মার্চ এক ঘোষণায় জানিয়েছে, যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫০ এর নিচে শিক্ষার্থী রয়েছে সেসব স্কুলের সংখ্যা কমিয়ে ওই ভৌগলিক এরিয়ার মধ্যে অন্য একটি স্কুলের সাথে একত্রীকরণ করা হবে। গোপালপুরে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পড়ালেখার পরিবেশ মানসম্মত না হলে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় একত্রীকরণের বলয়ে পড়ে অস্তিত্ব হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদক : সম্পাদক, গোপালপুর বার্তা। সভাপতি, গোপালপুর প্রেসক্লাব এবং উত্তর টাঙ্গাইল সাংবাদিক ফোরাম।