গোপালপুর বার্তা রিপোর্ট :
অফিসিয়ালী জাল সনদ প্রমানিত হওয়া সত্বেও টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়নের সাফলাবাড়ী এসএল উচ্চবিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে মো. সুমন আল মামুন নামক এক যুবককে নিয়োগ দেয়ার পায়তারা চলছে। আর নিয়োগের নেপথ্যে ১২ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্য।
জানা যায়, এসএল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন গত ৮ আগস্ট একজন কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, একজন অফিস সহায়ক এবং একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগের জন্য দৈনিক মানব জমিন এবং দৈনিক মজলুমের কন্ঠে আবশ্যক বিজ্ঞপ্তি দেন। ১৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ প্রধান শিক্ষক বরাবর আবেদন করতে বলা হয়। এতে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে ৮জন, অফিস সহকারি পদে ১৮জন এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ৮জন আবেদন করেন। যাচাইবাছাই শেষে গত ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের সন্তোষ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ইন্টারভিউ কমিটিতে সরকারি প্রতিনিধি হিসাবে ছিলেন সন্তোষ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন, গোপালপুর উপজেলা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজনীন সুলতানা, প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল হাই। এতে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে মো. সুমন আল মামুন, অফিস সহায়ক হিসাবে সুজন মিয়া এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসাবে সোলায়মান মিয়াকে নির্বাচিত করা হয়। নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ছাপিয়ে জাল সনদধারীকে চাকরি দেওয়ার পায়তারা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে আবেদনকারী ধোপাকান্দি ইউনিয়নের সুখদেববাড়ী গ্রামের জাহিদ হাসান অভিযোগ করেন, ল্যাব অপারেটর পদ চুড়ান্তভাবে বাছাই করা মো. সুমন আল মামুনের সনদপত্র জাল। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানজিং কমিটিকে ইন্টারভিউয়ের আগে জানানো হলেও টাকার লোভে কর্তৃপক্ষ অন্ধ হয়ে যায় এবং কারসাজি করে জাল সনদধারীকে মেধা তালিকায় প্রথম বানানো হয়।
এদিকে জাল সনদে নিয়োগের পায়তারার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় অসন্তোষ দেখা দেয়। এরই প্রক্ষিতে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য গত ২৪ জানুয়ারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর নিজ হাতে লেখা এক দরখাস্ত জমা দেন (স্মারক নং- এসএল ২১/২৩, তারিখ ২৪.০১.২০২৩)। এশিয়ান ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. তারেক কুদ্দুস একই দিন এক অফিসিয়াল পত্র (স্মারক নং- এইউবি/পরীক্ষা/২০২৩/২৯) প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে জানান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে সংরক্ষিত সকল রেকর্ডপত্র যাচাই করে মো. সুমন আল মামুনের সনদপত্র (ডিল্পামা ইন কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) সন্দেহাতীতভাবে ভূয়া বলে প্রমানিত হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক জাল সনদের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরও বাছাই করা প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ। গোপালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজনীন সুলতানা ছাড়া সাক্ষাৎকার বোর্ডের সবাই নিয়োগ দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন।
এ ব্যাপার সন্তোষ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন জানান, রাজনৈতিক তদবির ও চাপ ছিল। যাচাইবাছাই এবং রেজাল্ট শীটে দস্তখত দেয়ার পর জেনেছি ওই প্রার্থীর সনদ জাল। এখন তো আর করার কিছু নেই।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজনীন সুলতানা জানান, যেহেতু জাল সনদের বিষয়টি প্রধান শিক্ষকের অফিসিয়াল চিঠির মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছ তাই ওই শীটে দস্তখত দেয়ার প্রশ্নই আসেনা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, একজন মন্ত্রীর সুপারিশের কথা বলে জাল সনদধারীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য আমাকে বার বার চাপাচাপি করা হচ্ছিলো। তাই চাপের মুখে পড়ে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করেছি।
স্কুলের সভাপতি আব্দুল হাই জানান, জাল সনদের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে নিয়োগ আপাদত কিছুদিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।