::: মোঃ শামছুল আলম চৌধুরী :::
আজ ২১ জুলাই আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম মহাকবি কায়কোবাদের ৭১তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর প্রকৃত নাম কাজেম আল কোরায়শী। মুসলমান কবি রচিত জাতীয় আখ্যান কাব্যগুলোর মধ্যে সুপরিচিত মহাকবি কায়কোবাদ রচিত ‘মহাশ্মশান’ কাব্যটি অন্যতম। কায়কোবাদের মহাকবি নামের খ্যাতি এই মহাশ্মশান কাব্যের জন্যই হয়েছে। এছাড়াও তিনি বাঙালি মুসলিম কবিদের মধ্যে প্রথম সনেট রচয়িতা।
মহাকবি কায়কোবাদের স্মৃতি বিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান হলো পিংনা। আমাদের গোপালপুর উপজেলার পশ্চিমাংশের সাথে সংযুক্ত একেবারেই সরিষাবাড়ী গোপালপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা। বৃটিশ আমলে জনপদ এতই সমৃদ্ধ ছিল যে, এখানে কলিকাতা গামী ষ্টীমার ঘাট, কুঠিবাড়ী (পাটের), দেওয়ানী ওফৌজদারী আদালত ছিল। একটি সাব-পোষ্ট অফিস রয়েছে। আর এই অফিসের পোষ্ট-মাস্টার ছিলেন মহাকবি কায়কোবাদ। পোষ্ট অফিসের অদূরেই পিংনা তথা গোপালগঞ্জ হাটের পশ্চিম দিকে বর্তমান তারাকান্দি ভূঞাপুর মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত রসপাল মসজিদ তথা কায়কোবাদ মসজিদ আর এই মসজিদে ছিল একটি সুউচ্চ মিনার। এই মিনার থেকে আজানের ধ্বনি প্রতিপলিত হতো। মোহনীয় আজানের ধ্বনি কায়কোবাদের অনুভূতিতে নাড়া দিলে তিনি শুরু করেন মাহকাব্য লিখা। সেই মহাকাব্য হলো মহাশ্মশান। যা ১৯০৪ সালে প্রকাশিত হয়।
অত্যন্ত দূভাগ্যের বিষয় হলো, বর্তমানে রসপাল বা কায়কোবাদ মসজিদের পূর্বের আদল সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে। মিনারটিও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ফলে মানুষ কিংবা পথিক আর বুঝতে পারেনা শেকড় খুঁজে পায় না-সেই মহাশ্মশানের মর্মবানী। এভাবেই আমাদের ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্মৃতি থেকে বিলীন হচ্ছে অনেক ইতিহাস। কিন্তু কখনই তা কাম্য হতে পারেনা। মসজিদটির পূর্বের আদলে ফিরিয়ে আনতে পারলেই মহাকবির স্মৃতি বিজড়িত এই সুন্দর স্থানটি আবারো মানুষের মনে দাগ কাটতে পারে। তাতেই কায়কোবাদের পিংনায় অবস্থানের প্রকৃত মূল্যায়ন হতে পারে।
লেখক পরিচিতি :
অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব
চৌধুরী বাড়ী, ডাকুরী, গোপালপুর, টাঙ্গাইল।