:: রিফাত আরা চৌধুরী প্রমা ::
নিজের জন্মদাত্রী মা সবসময়ই সবার কাছে বিশেষ একজন। কিন্তু সেই সন্তান যখন অন্য কাউকে তার জন্মদাত্রী মা বলে সম্বোধন করে তখন তার শাব্দিক অর্থ আর ভাবার্থের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করা যায়।
‘মা’ শব্দটা ছোট হলেও কখনোই এতটা হেয় করার মতো না যে একজন পরম পূজনীয় হলে আরেকজন নিন্দনীয়। যাকে শ্রদ্ধা নিয়ে ‘মা’ বলে ডাকতে পারি না তাকে কেন শুধুমাত্র সামাজিকতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে ডাকছি? যদি তাই হয় সেই ক্ষেত্রে ঘোর আপত্তি আছে আমার এই সম্বোধনে। (যদিও বা তাতে কারো কিছু যায় আসে না)
এখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসবে আমার শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে। আমার জীবনে এক মা আমার জন্মদাত্রী যার ঋণ আমি আজীবনেও শোধ করতে পারবো না। আর একজন আমার সহসঙ্গীর ‘মা’। যার প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমি অবনত।
কিছু মানুষ থাকে আজীবন অকাতরে বিলিয়ে যাবে বা নিঃশব্দে করেই যাবে, কিন্তু প্রাপ্তির ইচ্ছা শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছে রাখে। আমার শ্বাশুড়ি হচ্ছে এমন একজন মানুষ। আমাকে যে উনি শুরু থেকেই বউ হিসেবে দেখে এটা আমি জানি। কারণ আমাকে উনি মেয়ের মতো বকা দিতে বা শাসন করতে পারে না, কিন্তু আদরে কখনো হয়তো কমতি রাখে নি। আমি তার সাথে রাগ করেছি, অভিমান করেছি আবার ক্ষমাও চেয়েছি। কিন্তু সত্যি বলতে তাকে আমি যেভাবে শ্রদ্ধা করি তা হয়তো কখনো বুঝাতে পারি নি। আমার দেখা অসীম ধৈর্য্যের অধিকারী, আধুনিক চিন্তাধারার রুচিশীল একজন মানুষ আমার শ্বাশুড়ি।
আমি নিজেও কিছু ক্ষেত্রে তার উদারতাকে বোকামি মনে করি কিন্তু তার এই উদারতার কারণেই পুরো পরিবার তার এক অদৃশ্য মোহে আচ্ছন্ন। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে তাকে ভালোবাসে ও শ্রদ্ধা করে। ঠিক তেমনি ভিন্ন এক পরিবার থেকে আসা অন্য একটা মেয়েও আজ তার সেই ভালোবাসায় সিক্ত।
অনেকেই বলে স্বাধীনচেতা মেয়ে হিসেবে আমি নাকি জামাই আদর চাই। কিন্তু সত্যি হলো বউ আদর পাই বলেই আমি শ্বশুরবাড়ির আনাচে কানাচে অবাধ বিচরণ করতে পারি কোন দ্বিধা ও মাথায় ঘোমটা দেওয়া ছাড়া।
দিবস ভিত্তিক ভালোবাসায় আমি বিশ্বাসী না হলেও দিবসগুলোর সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলো আমার খুব খুব আপন। তাই এই লেখা নিজের অনুভুতি প্রকাশের ক্ষুদ্র চেষ্টা মাত্র। আর তাই শ্রদ্ধাভরে অনুভব করি ‘মা’ শব্দের গভীরতাকে।
লেখক পরিচিত :
রিফাত আরা চৌধুরী প্রমা
ফ্রিলেন্সার, চৌধুরী বাড়ি, ডাকুরি, গোপালপুর।