কে এম মিঠু, গোপালপুর:
গোপালপুরে সাত মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্ন ছিল মাত্র দুই কিলো পাকা সড়ক। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচদশকেও তাদের এ সামান্য দাবি আলোর মুখ দেখতে পায়নি।
জানা যায়, তিন দিকে বিল। একদিক খাল। এ খালবিল পেরিয়ে সর্পিল কাচা রাস্তা ঢুকেছে কড়িয়াটা গ্রামে। গ্রামের উত্তরে ধনবাড়ী এবং উত্তর-পশ্চিম সরিষাবাড়ী উপজেলা। লোকসংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাটি ছিল এ গ্রাম। সাত মুক্তিযোদ্ধার বাড়িও এখানে।
মুক্তিযোদ্ধা হেদায়াত হোসেন বাদশা জানান, একাত্তরে যে রাস্তা ধরে পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন সেই রাস্তা এখনো তেমনটিই। কোন সরকারই এই রাস্তা পাকাকরণে মনোযোগ দেয়নি।
মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম জানান, গ্রামে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাদ্রাসা। একটিতে ভোট কেন্দ্র। দুই কিলো দীর্ঘ একমাত্র রাস্তা বর্ষাকালে চলাচলে সম্পূর্ণ অনুপযোগি হয়ে পড়ে। হাটবাজার যাওয়াআসা, স্কুলকলেজ বা মাদ্রাসায় গমনাগমন, অসুখ-বিসুখে ১৫ কিলো দূরে উপজেলা হাসপাতালে যাতায়াত কতো কষ্টের তা কাকে বোঝাবো?
মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান জানান, পঞ্চাশ বছরে উন্নয়ন বলতে দারোগা বাড়ির খালে একটি কালভার্ট হয়েছে। সাত মুক্তিযোদ্ধারা মিলে রাস্তা পাকাকরণে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও এলজিইডির নিকট বহুবার ধর্না দিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম জানান, দেশ উন্নয়ন হলেও সেটি যে শহর কেন্দ্রিক কড়িয়াটা গ্রাম এর প্রমাণ। কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে রাস্তার দুরবস্থায় গ্রামে ডাক্তার আসতে চায়না। মালকাঁচা দিয়ে জলকাদা মাড়িয়ে হাসপাতালে যাওয়া অতীব কষ্টের। কদিনইবা বাঁচবো। আমাদের অন্তিম ইচ্ছা পূরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হুমায়ুন বাঙ্গাল জানান, দেশ অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের চারণভূমি কড়িয়াটা পুরোটাই অবহেলিত থেকে গেছে।
হাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল কাদের তালুকদার বলেন, গতবার রাস্তায় তিন লাখ টাকায় কাঁচা রাস্তায় মাটি ফেলেন। অতিবৃষ্টিতে তা ধুয়েমুছে গেছে। রাস্তার এখন কাহিলদশা। রাস্তাটা পাকা হলে সাত মুক্তিযোদ্ধার অন্তিম ইচ্ছা পূরণ হবে।
গোপালপুর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, এ রাস্তা পাকাকরণের দাবি তিনি জানেন। বরাদ্দ পেলে রাস্তার নির্মাণ কাজ করা হবে।