কে এম মিঠু, গোপালপুর :
বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর সেনানী, মুক্তিযুদ্ধকালীন টাঙ্গাইলের গোপালপুর ও ভূঞাপুর এলাকার সর্বাধিনায়ক, কাদেরিয়া বাহিনীর কোম্পানী কমান্ডার নূর হোসেন আঙ্গুর তালুকদারের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা আঙ্গুর তালুকদার নিজ জীবনের মায়া ত্যাগ করে, পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর কর্তৃক পাশবিক নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের হাত থেকে গোপালপুরবাসীকে এনে দিয়েছিলেন মুক্তির স্বাদ। গোপালপুরকে হানাদার মুক্ত করার পর আঙ্গুর তালুকদারের নেতৃত্বেই গোপালপুর থানায় প্রথম প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু হয়।
একনজরে আঙ্গুর তালুকদার :
মহান মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার নূর হোসেন আঙ্গুর তালুকদার ১৯৪৫ সালের ১ আগস্ট গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের নলীন গ্রামে এক সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকুলেশন পাশ করে তিনি লেখাপড়ার ইতি টানেন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য তিনি মাইনকার চর হয়ে ঢালু ক্যাম্প ও তুরা পাহারে ট্রেনিং প্রাপ্ত হোন। ট্রেনিং শেষে ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর নিকরাইল রাণী দিনমনি হাইস্কুল প্রাঙ্গণে প্রায় সত্তুর জন কমান্ডার নিয়ে একটি গোপন মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। মিটিং শেষে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী গোপালপুর থানা এরিয়া আক্রমণ করার জন্য কয়েকজন কোম্পানী কমান্ডারকে নির্দেশ দেন। নির্দেশনা মতে নূর হোসেন আঙ্গুর তালুকদার কাদেরিয়া বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে ভোলারপাড়া, হেমনগর, সূতী, জগন্নাথবাড়ি, পিংনা ও ফুলদারপাড়া যুদ্ধে অংশ সক্রিয় গ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর শনিবার গোপালপুর থানা হানাদার মুক্ত হলে নূর হোসেন আঙ্গুর তালুকদার শত্রু বাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া সকল অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র গ্রহণ করেন। আর তাঁর নেতৃত্বেই প্রথম গোপালপুর থানায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু হয়।
আঙ্গুর তালুকদার ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ ত্যাগী নেতা এবং একজন সৎ অবিবাহিত পুরুষ। ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল তিনি গোপালপুর পৌরশহরের থানা সংলগ্ন নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন। পরে তাঁকে গোপালপুর স্বাধীনতা কমপ্লেক্সের পাশে সমাহিত করা হয়।