কে এম মিঠু, গোপালপুর :
মহামারী করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মানবিকতার মহান ব্রত নিয়ে দেশজুড়ে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। করোনার বাইরেও পুলিশ অনেক সময় নানাভাবে স্বাক্ষর রাখছেন মহানভুবতার।
আজ বুধবার তেমনি একটি মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে মানুষের ভালাবাসায় সিক্ত হলেন, টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মুস্তাফিজুর রহমান।
জানা যায়, গোপালপুর উপজেলার দক্ষিণ পাথালিয়ার সওদাগর পাড়ায় যৌতুকের দাবিতে অগ্নিদগ্ধ হতদরিদ্র গৃহবধূ শান্তা আক্তারের চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণ করলেন ওসি মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি আজ বুধবার রাতে এ্যাম্বুলেন্স দিয়ে, ঐ অসহায় গৃহবধূকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাস্থ শেখ হাসিনা বার্ণ ইন্সষ্টিটিউটে পাঠান।
এর আগে রাত সাড়ে আটটায় ওই গৃহবধূর বড় ভাই আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে, গোপালপুর থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। মামলায় একমাত্র আসামী গৃহবধূর স্বামী আইয়ুব নবী। মামলায় যৌতুকের দাবি না মানায় পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
থানায় দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, তিন সন্তানের জননী শান্তা আক্তারকে (৩০) যৌতুকের জন্য স্বামী আইয়ুব নবী প্রায়ই নির্যাতন করতেন। গত মঙ্গলবার সকালে আইয়ুব শান্তাকে বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক এনে দেয়ার চাপ দেন। শান্তা যৌতুকের টাকা আনতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে মারধার করা হয়। এক পর্যায়ে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। তার ডাকচিৎকারে পাড়াপড়শিরা এগিয়ে আসলে আইয়ুব দ্রুত বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। শান্তাকে প্রথমে গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়।
গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলীম আল রাজী জানান, শান্তার দুই হাত, গলা এবং পেটসহ সমস্ত বুক পুড়ে গেছে। অবস্থা গুরুতর বিবেচনায় গতকালই তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। আজ বুধবার সেখানে তার অবস্থা আরো অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকাস্থ শেখ হাসিনা বার্ণ ইন্সষ্টিটিউটে স্থানান্তরের কথা বলা হয়।
গোপালপুর থানার ওসি মো. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, শান্তার ভাইয়েরা খুবই দরিদ্র। ঢাকায় নিয়ে শান্তাকে চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ তাদের নেই। তাই অর্থাভাবে তার পরিবারের লোকজন আজ বিকালে শান্তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল থেকে পুনরায় গোপালপুরের বাড়িতে নিয়ে। অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে কোনক্রমেই শান্তার চিকিৎসা করানো সম্ভব নয় জানতে পেরে, তিনি শান্তার চিকিৎসার সকল ব্যায়ভার বহনের দায়িত্ব নেন। বুধবার রাতেই ১০ টার দিকে শান্তাকে এ্যাম্বুলেন্সযোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ণ ইন্সষ্টিটিউিটে পাঠানো হয়।
শান্তার বড় ভাই আব্দুল লতিফ জানান, তার মুমূর্ষু বোনকে নিজের স্বজন ভেবে চিকিৎসার ব্যায়ভার গ্রহন করায়, ওসি মুস্তাফিজুর রহমানসহ পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।