অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন : টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের শাখারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শারমিন, হাবিব, সোহানা, রুনা, সাগর, শীতল, তানিয়া ও কনিকা। মানুষের সেবার জন্য শিশুকাল থেকেই সবাই ডাক্তারের কাজ করে যাচ্ছে।
ওরা ডাক্তার হলো কী করে? লেখাপড়ার পাশাপাশি এলাকার মানুষের রোগশোকে, পুষ্টিজ্ঞান সরবরাহসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সব ধরনের কাজে জড়িত থেকে এলাকাবাসির মন জয় করেছে ওরা। সবাই ওদের খুব স্নেহ করে। এলাকাবাসি খুশি হয়ে ওদের ডাকে ক্ষুদে ডাক্তার বলে।
সম্প্রতি গোপালপুর উপজেলার মিডিয়াকর্মীদের নিয়ে ওই স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে এসব ক্ষুদে ডাক্তারদের আমরা খুঁজে পাই। খুব বড় কিছু না করলেও এই বয়সে মানুষের জন্য কিছু করার মানসিকতা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ওরা স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে গ্রামের শিশু কিশোরদের নখ কাটার পরামর্শ দেয়। মাঠে, ঘাটে, জঙ্গলে মল ত্যাগের কুফল শেখায়। কৃমি আক্রান্ত না হতে খালি পায়ে না হাটার কথা বলে। পুকুর বা জলাশয়ের জল পানে নিষেধ করে। হাম, জলবসন্ত, নিউমোনিয়া বা বিভিন্ন রোগে টীকা দেয়ার দিন প্রসূতি ও নবজাতকদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আনতে ওরা প্রানান্তকর খাটুনি খাটে। এলাকায় ডায়রিয়া দেখা দিলে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ওরা মানুষকে ওরস্যালাইন বানানো শেখায়। দেশি ফলমূলে কী ধরনের পুষ্টি থাকে তা বাড়ির সকলকে গুছিয়ে বলে। প্রসূতি মায়েদের পুষ্টিকর খাবার গ্রহনে পরামর্শ দেয়। কিভাবে রান্নার সময় বাড়তি ধোয়ামোছার ফলে সবজির গুনাগুণ বিনষ্ট হয় তা তুলে ধরে তারা। বাল্য বিয়ে হলে স্বাস্থ ও প্রজনণের কী কী ক্ষতি হয়- তার বিবরণ ও দেয় স্পষ্ট করে। ওরা প্রয়োজনে দানশীল ব্যক্তিদের অনুদানে কেনা ওষুধপত্র ও পথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে অসহায়দের। স্বাস্থ্য দিবসে স্কুলে স্কুলে ঘুরে ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য ক্যাম্পেইন করে। বিনা পয়সায় দরিদ্রদের প্রেসার মেপে দেয়। দরিদ্র পরিবারের শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জন্য সাথে করে নিয়ে যায়। সনদপ্রাপ্ত ডাক্তাররা যখন পয়সার লোভে ভুল অপারেশনে রোগীর প্রাণহানি ঘটায়- তখন এসব ক্ষুদে ডাক্তারদের এসব মহৎ কাজ আমাদেরকে আশ্বান্বিত করে।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনজু আনোয়ারা ময়না জানান, ওরা শিক্ষার্থী হিসাবেও মেধাবী। লেখাপড়ার পাশাপাশি সব স্কুলের শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলার জন্যই ওদেরকে স্বাস্থ্য সর্ম্পকিত নানা ধরনের প্রাথমিক টিপস ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সুবিধা বঞ্চিত শিশু ও নারীদের মধ্যে ওরা কিছুটা হলেও সচেতনতা ফিরিয়ে আনতে পারছে। স্কুলে আরো বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে- যারা এই ক্ষুদে ডাক্তারদের দলে মিলেমিশে সর্বক্ষণ সহযোগিতা করে থাকে।
প্রতিবেদক : দৈনিক ইত্তেফাকের গোপালপুর সংবাদদাতা, এডিটর www.gopalpurbarta24.com এবং মধুপুর কলেজের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান।