কে এম মিঠু, গোপালপুর : দুঃস্থ, বুভুক্ষ ও অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়ার সরকারি উদ্যোগ ভিজিডি কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে হাদিরা ইউনিয়নের নাম তালিকা সিজ করেছেন ইউএনও মাসূমুর রহমান। গত বৃহস্পতিবার এক সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি এ ব্যবস্থা নেন।
জানা যায়, উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের আড়াই শতাধিক দুঃস্থ মানুষকে সরকারি খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য গত জানুয়ারী মাসে ইউনিয়ন পরিষদ একটি তালিকা তৈরি করে। এ থেকে দুঃস্থরা মাসে ৩০ কেজি চাল পাওয়ার কথা। তালিকা তৈরির আগে ভিজিডি কার্ড পিছু ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে উৎকোচ আদায় করা হয়। মায়মুনা নামক এক ভিখারিনীর নিকট থেকে এক ইউপি মেম্বার দুই হাজার টাকা উৎকোচ নেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যানের ইন্ধনে উৎকোচের রেট তিন হাজার উঠায় বাড়তি আরো এক হাজার টাকা দাবি করা হয়। ওই ভিখারিনী দিতে অসমর্থ হলে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের হস্তক্ষেপে মায়মুনার নাম কেটে দিয়ে ফেরদৌসি বেগমের নাম তালিকা হয়। এভাবে প্রকৃত দুঃস্থদের বাদ দিয়ে অবস্থাপন্ন এবং আত্মীয়স্বজনের নাম তালিকাভূক্ত করা হয়। গত বৃহস্পতিবার ওই ভিখারিনী স্থানীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে এর প্রতিকার দাবি করেন। ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, সচিব জাকির হোসেন এবং ইউপি মেম্বারদের ৬ জনের একটি সিন্ডিকেট একাজে জড়িত বলে এলাকাবাসির অভিযোগ। এ তালিকা ধরেই গত মঙ্গলবার দুঃস্থদের মধ্যে প্রথমবারের মতো চাল বিতরণ করা হয়। এতে বঞ্চিতদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ওই ইউনিয়নে দায়িত্ব পালনকারি সরকারি কর্মকর্তা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমিনা বেগমের নিকট সুবিচার না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসূমুর রহমানের নিকট অভিযোগ দেয়া হয়। তিনি গত বৃহস্পতিবার ওই ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম এবং পরিষদের সকল মেম্বারকে কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। তিনি অনিয়ম দেখতে পেয়ে নাম তালিকা সিজ করেন।
ইউএনও মাসূমুর রহমান জানান, উপজেলা ভিজিডি কমিটির সদস্য সচিব হিসাবে তিনি যে চূড়ান্ত তালিকায় স্বাক্ষর করেছেন সেটিকে ফ্লুইড দিয়ে মুছে বা ঘষামাজা করে অনেক দুঃস্থ মানুষের নাম বাদ দিয়ে নতুন নাম অন্তর্ভূক্ত করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত এবং তালিকা পুনরায় যাছাই-বাছাই হচ্ছে। দায়িত্বে অবহেলার জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমিনা বেগমকে শোকজ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে হাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, কারো নিকট থেকে টাকা পয়সা নেয়া হয়নি। কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তার জন্য দায়ি পরিষদের সচিব জাকির হোসেন। অপরদিকে সচিব জাকির হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এসব বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। অনিয়ম হলে তার জন্য চেয়ারম্যান আবুল কাশেম সাহেব দায়ি।