– জয়নাল আবেদীন
গোপালপুর উপজেলাসহ টাঙ্গাইলে ৬ উপজেলায় এবার নতুন জাতের তুলার আবাদ হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে তুলা সংগ্রহ শুরুও হয়েছে। তবে দাম নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন চাষীরা। কারণ, আন্তজার্তিক বাজারে তুলার দাম কমে যাওয়ায় চাষীরা তাদেও কষ্টার্জিত এ অর্থকরী ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবেনা বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইলের মধুপুর, ধনবাড়ি, ঘাটাইল, সখিপুর, দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলায় তুলার আবাদ হয়ে থাকে। ১৯৮৩ সালে প্রথম মধুপুর উপজেলার গড় এলাকায় তুলার শুরু হয়। পওে এর চাষ ঘাটাইল, সখিপুর, ধনবাড়ি, দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। দুই বছর ধরে গোপালপুর উপজেলায় স্বল্প পরিমানে তুলার আবাদ হচ্ছে। প্রথমে ধোপাকান্দি ইউনিয়নের সাজানপুর এবং পওে নগদাশিমলা ইউনিয়নের উত্তর পাথালিয়া গ্রামে তুলার চাষ শুরু হয়। তুলা উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহ জোনের আওতায় মধুপুর, ধনবাড়ি, ঘাটাইল ও সখিপুর এবং ঢাকা জোনের আওতায় দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলায় তুলার আবাদ তত্বাবধান করা হয়। তুলা চাষে ব্যাংক ঋণ জোটেনা। সামান্য বিভাগীয় ঋণই ভরসা। পানি দাড়ায়না এরুপ উঁচু এবং ছায়ামুক্ত জমি তুলার চাষের উপযোগি। খরা না হলে তুলা জমিতে খুব একটা সেচ লাগেনা। এজন্য মধুপুর গড় এলাকা তুলা চাষের খুবই উপযোগি। নব্বয়ের দশকে তুলা উন্নয়ন বোর্ড চাষীদের দিয়ে ডেল্টাপাইন জাতের তুলার আবাদ করাতো। তিন বছর ছয়েক আগে হাইব্রিড জাতের তুলা চাষের প্রবনতা দেখা দেয়। বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি চীন থেকে আমদানী করা হাইব্রিড বীজ চাষীদের মধ্যে বিক্রি শুরু করে। এক কেজি হাইব্রিড বীজের দাম পড়ে আড়াই হাজার টাকা। ফলণ বেশি হলেও স্পর্শকাতর হওয়ায় হাইব্রিড তুলা আবাদে কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন বীজের দাম দশগুণ বেশি। সার, সেচ ও পরিচর্যা লাগে তিন গুণ। পাঁকার পর বোল তাড়াতাড়ি ফেটে যাওয়ায় সংগ্রহে বিপত্তি ঘটে। কোনো কারণে তুলার বাজার দর কমে গেলে কয়েকগুণ লোকসান গুণতে হয় । এ সমস্যা নিরসণের জন্য তুলা উন্নয়ন বোর্ড নিজস্ব গবেষণা কেন্দ্র থেকে এবার সিবি-১৩ এবং সিবি-১৪ দুটি নতুন জাতের উচ্চফলণশীল তুলা বীজ উদ্ভাবন করেছে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নিজস্ব খামারে পরীক্ষামূলক আবাদের পর কটন বোর্ড এ দুটি জাত তৃণমূল পর্যায়ে চাষীদের মধ্যে বিস্তার ঘটায়। ধনবাড়ি ইউনিটের আওতায় পীরগাছা, মমিনপুর, ভবানি টেকি, বাড়ইপাড়া, পাথালিয়া ও চালাষ এবং গোপালপুর উপজেলার সাজনপুর ও পাথালিয়া গ্রামে সিবি-১৪ জাতের আবাদ করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, হাইব্রিডের চেয়ে সিবি-১৪ জাতের ফলণ আশাব্যঞ্জক। পাথালিয়া গ্রামের তুলা চাষী বিকাশ চন্দ্র তন্ত্রী আড়াই একরে তিনটি পৃথক প্লটে হাইব্রিড, সিবি-১৪, ১১ ও ১২ জাতের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে সিবি- ১৪ জাতের ফলণ আশাতীত। এ জাতের প্রতিটি গাছে ৬০/৬৫টি করে বোল রয়েছে। পক্ষান্তরে হাইব্রিডে এবং সিবি-১১ ও-১২ জাতে ৪০/৫০টি করে বোল রয়েছে। সিবি-১৪ জাতের বোলের গড় ওজন ৪৭ গ্রাম। সে হিসাবে বিঘা প্রতি ফলন ১০/১২মণ। হাইব্রিডের চেয়ে সিবি-১৪ জাতের বোল বড়। সংখ্যায় বেশি। আবাদে খরচ ও কম। বীজের দাম কেজি ২০/২৫ টাকা। এ জাতে শুংগা কম। ফলধারি শাখা বেশি। বোল পঁচা রোগ এবং জ্যাসিড় পোঁকার উপদ্রব কম। ফলে কীটনাশক বাবদ খরচ লাগেনা। ধনবাড়ি ইউনিট অফিসার আব্দুল লতিফ জানান, সিবি-১৪ জাত নিয়ে চাষীদের মধ্যে বাড়তি উৎসাহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি আরো জানান, সম্প্রতি ময়মনসিংহ জোনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান মধুপুর উপজেলার পীরগাছা ব্লকের মাঠ দিবসে চাষী করিম সরকার, আবু তালেব ভূইয়া এবং নাজিম উদ্দীন ভূইয়ার তুলা ক্ষেত পরিদর্শন করে সিবি-১৪ জাতের ফলণ দেখে বিস্মিত হন। উল্লেখ্য এবার ময়মনসিংহ ও ঢাকা জোনের আওতায় টাঙ্গাইল জেলার ৬টি উপজেলায় প্রায় তিন হাজার একরে তুলার আবাদ হয়েছে। গত বছর তুলার সংগ্রহ মূল্য ছিল প্রতি মণ ২৫২০ টাকা থেকে ২৬০০ টাকা। এবার আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দর কমে যাওয়ায় দেশেও তুলার সংগ্রহ মূল্য কমে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। গত বারের তুলনায় এবার বাজার দর নেমে প্রতিমণ বড় জোর দুই হাজার টাকায় দাড়াবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান। আর তা সত্যি হলে গরীব কৃষকদের জন্য দুঃসংবাদ।