কে এম মিঠু, গোপালপুর :
সমাজে প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম মানেই পরিবারের বোঝা এ প্রচলিত ধারণাকে বদলে দিয়েছে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার আশরাফুল আলম সামি। ১৭ বছর বয়সী মেধাবী সামি বর্তমানে গোপালপুর সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের নিয়মিত ছাত্র। সে উপজেলার কাজীবাড়ী মহল্লার বাসিন্দা মীর সাজ্জাদ হোসেন ও কাকলী পারভিন দম্পতির প্রথম সন্তান।
হাত, পা একেবারেই চিকন। মুখ বাঁকা, স্পষ্ট কথা বলতে পারে না। কিছুটা শ্রবণ শক্তিহীন। সামির জন্ম ২০০৬ সালে। দাঁড়ানোর সক্ষমতা না থাকায় হাতের ওপর ভর করে বসে বসে এগিয়ে চলে। বাবা মীর সাজ্জাদ হোসেন পেশায় গাড়ি চালক। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনিও বর্তমানে কর্মক্ষম নয়। মা কাকলি পারভীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসিতে সামি পেয়েছে জিপিএ ফাইভ। এ পর্যন্ত তিনটি ট্যালেন্টপুলসহ মোট সাতটি বৃত্তি পেয়েছে। রান্নাবান্না, ছোট সাইকেল চালানো, ক্রিকেট ব্যাটিং, কেরাম, কম্পিউটার চালানো ও গাছে ওঠায় পারদর্শিতা ছাড়াও অনলাইনে সার্ভে করে বিগত ৩ মাস প্রায় ৮০ হাজার টাকা আয় করেও সবাইকে চমকে দিয়েছে।
খাতায় লিখে সামি জানায়, আমেরিকান ওয়েবসাইট ফ্রিক্যাশ, সার্ভেজুনকিসহ অন্যান্য সাইটে সার্ভের কাজ করে অনলাইন আয়ের টাকায় একটি ল্যাপটপ, দুটি স্মার্টফোন ও বাসার আইপিএস কিনেছে। স্নাতকোত্তর শেষ করে ভবিষ্যতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে আগ্রহী।
মা কাকলি পারভীন গোপালপুর বার্তাকে বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ছেলেকে নিয়ে ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল। তাই কোলে করে নিয়ে স্কুলে দিয়ে আসতাম। প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে নয়, শুরু থেকেই সাধারণ বিদ্যালয়ে পড়িয়েছি। ছোট থেকেই ছেলের মেধা স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষকদের মুগ্ধ করত। ছেলেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করাতে চাই। সরকার ওর প্রতি সদয় হয়ে যদি আইটি ডিপার্টমেন্ট বা কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি ব্যবস্থা করে দেয় তবেই আমার কষ্ট সার্থক হবে।’
সহপাঠী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও সামি অনেক মেধাবী ছাত্র। হাতের লেখাও সুন্দর। পড়ালেখায় আমরা ওর বিভিন্ন সহযোগিতা পাই। সহপাঠীরা সবাই ওকে ভালো চোখেই দেখি।’
সূতী ভি এম সরকারি পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘সামিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। ওর মা কোলে নিয়ে বিদ্যালয়ে দিয়ে যেত। পরবর্তীতে একাই সাইকেল চালিয়ে আসত। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ওর মেধা আমাকে মুগ্ধ করত। আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন আমরা খুব বেশি খরচ ওর থেকে নিতাম না। আমার বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়ে জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। ওর মেধা অনুযায়ী ভালো কোনো চাকরি পেলে আমি অনেক খুশি হব।’
গোপালপুর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মানিকুজ্জামান বলেন, আশরাফুল আলম আমার কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ওর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও অনেক মেধাবী ছাত্র।