কে এম মিঠু, গোপালপুর (টাঙ্গাইল) :
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক ‘মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিষ্ট্রার’ এর মাধ্যমে বিশ্ব প্রমান্য ঐতিহ্যর স্বীকৃতি লাভ করায় আগামী ২৫ নভেম্বর (শনিবার) বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী সফল করতে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল ২২ নভেম্বর (বুধবার) বিকেল ৩টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলরুবা শারমিন। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়ম আক্তার মুক্তা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আব্দুস সোবহান তুলা, হাদিরা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, ঝাওয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান রফিক তালুকদার, প্রেসক্লাব সহ-সভাপতি কে এম মিঠু এবং সরকারী-বেসরকারী অফিস প্রধান, শিক্ষক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলরুবা শারমিন অনুষ্ঠান সফল করতে উপস্থিতিদের বিভিন্ন মতামত গ্রহন শেষ করে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া আমাদের জন্য একটি বিরাট অর্জন। বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে এর অন্তর্ভুক্তির মানে হচ্ছে চিরস্থায়ী বিশ্ব ঐতিহ্যের সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা। এই বিরাট অর্জন ও ভাষণের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে, বিশেষত শিক্ষার্থীদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অবহিত করার লক্ষ্যে সারাদেশের ন্যায় আগামী ২৫ নভেম্বর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের তথা সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনসমূহের অংশগ্রহণে সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে থানা ব্রীজ চত্বরে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধ করা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বাধীনতা পক্ষের সকল সংগঠনকে শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণ করে শোভাযাত্রাকে সফল করার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর ইউনাইটেড নেশন এডুকেশন, সায়েন্টিফিক এন্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেস্কো) ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে (ওয়াল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ) বিশ্বে প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। প্যারিসে ইউনেস্কোর প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক ইরিনা বুকোভা এই ঘোষণা দেন। আন্তর্জাতিকভাবে রেজিস্ট্রাকৃত এই তালিকা তৈরির উদ্দেশ্য হলো, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ঐতিহ্যগত প্রামাণ্য দলিলসমূহের সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা। ইন্টারন্যাশনাল এডভাইজারি কমিটি (আইএসি) বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে প্রামাণ্য দলিল রেজিস্ট্রার হবে কিনা বা যোগ্য কিনা তা বিচার বিশ্লেষণ করে থাকে। এই কমিটি এবছর ২৪ থেকে ২৭ অক্টোবর আয়োজিত সংগঠনটির বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে বিশ্বে আন্তর্জাতিক রেজিস্ট্রার্ড মেমোরি হিসেবে মনোনীত করে। বর্তমানে ‘মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রার’ এ সব মহাদেশগুলো থেকে ৪২৭টি প্রামাণ্য দলিল ও সংগ্রহ তালিকাভুক্ত রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভাষণটি স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রস্তুতির দিকে ঝুঁকে পড়তেও উৎসাহিত করে। এটি মুক্তিবাহিনীতে যোগদানকারী মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণের অন্যতম প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেশের বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান চলাকালে প্রচারে বাঙালী জাতির হৃদয় ও মনকে উৎসাহিত করে। এই ভাষণ এদেশের মানুষকে এবং পরবর্তী প্রজন্মগুলোকে অনুপ্রাণিত করছে।