বিশেষ প্রতিবেদক : টানা দুইবারের নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। আওয়ামীলীগের মনোনয়নে বিপুল ভোটে প্রথমে ২০০৯ এবং পরে ২০১৪ সালে। সেই যে জনগনের কাতারে চলে আসা তা এখন মিলেমিশে একাকার। এলাকাবাসির সুখদুঃখের ভাগীদার তিনি। বণ্যায়, নদীভাঙ্গনে, অভাব-দারিদ্রতায়, দলীয় দুর্যোগ অথবা বিরোধী দলের জ্বালাও পোড়াও অভিযান রুখতে অথবা ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত দলীয় নেতাকর্মীদের পুনবার্সণে নিমগ্ন থেকেছেন সর্বক্ষন। জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে তৃণমূলে শক্তিশালী করেছেন। স্থানীয় প্রবীণ সাংসদ খন্দকার আসাদুজ্জামানকে সন্মান দেখিয়ে পাশে থেকে উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তেমনি সাংসদের বয়সজনিত দুর্বলতা ঢাকতে নেতাকর্মীদের জন্য অবিরাম ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
বলছিলাম গোপালপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদারের কথা। জন্ম ১৯৫৭ সালের ৯ অক্টোবর গোপালপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহি ঝাওয়াইল ইউনিয়নের কাহেতা গ্রামে এক সভ্রান্ত পরিবারে। জন্মকাল থেকেই আওয়ামী পরিবারের সন্তান। স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগ কর্মী। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ না নিলেও স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের থাকাখাওয়া এবং যুদ্ধে অংশ নিতে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। টাঙ্গাইলের সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অধ্যয়নের সময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ছিলেন মুসলিম ছাত্রাবাসের সম্পাদক। পরে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক। উচ্চশিক্ষা নিতে অনার্সে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রজ্ঞিান বিষয়ে। ছিলেন মহসীন হল শাখার সভাপতি। পরবর্তীতে যোগ দেন মূল দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে।
এরপর আর ঘরে ফেরা হয়নি। রাজনীতির মাঠেই বিচরণ করছেন তিন দশক ধরে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে খন্দকার আসাদুজ্জামানকে নিয়ে মাঠে-ময়দানে কাজ করেন। পরাজিত হন বিএনপি মনোনিত আব্দুস সালাম পিন্টু। তখন থেকেই গোপালপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের নিবেদিত নেতা হিসাবে খ্যাতি তার।
গত বুধবার তিনি গোপালপুর বার্তাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অনেক বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন। সেসব নিয়েই সাজানো হয়েছে এ প্রতিবেদন।
তিনি জানান, ২০০১ সালে বিএনপির আব্দুস সালাম পিন্টু নির্বাচিত হলে গোপালপুরে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হন। বহু বাড়িঘর, দোকানপাট হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের শিকার হয়। শত শত নেতাকর্মী এলাকাছাড়া হন। এ দুর্দিনে আওয়ামীলীগের বড় নেতারা অসহায় কর্মীদের পাশ কাটিয়ে যান। তবে সরে দাড়াননি ইউনুস ইসলাম তালুকদার। তিনি তাদের পাশে থেকেছেন। সহযোগিতা করেছেন। সাহস জুগিয়েছেন। গ্রেনেড হামলায় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা অপচেষ্টার পর আব্দুস সালাম পিন্টুর নির্বাচনী এলাকায় দলীয় কাজকর্ম পরিচালনা কঠিন ছিল। তবুও স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে সবার ভালোবাসা অর্জন করেছেন বলে জানান তিনি। এসবের পুরস্কারও পান ২০০৮ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। পান আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক। এর পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি এ নেতাকে। দলীয় নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা আর আস্থায় সিক্ত হয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। স্থানীয় প্রবীণ সাংসদ খন্দকার আসাদুজ্জামান শারীরিকভাবে একদম দুর্বল হয়ে পড়ায় তাকেই সব দিক সামলাতে হয়। আর তা তিনি করেছেন খুব সাহসের সাথে। যোগ্যতার সাথে।
চলতি জুনের প্রথম সপ্তাহে গোপালপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি এ ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। সেই থেকে তিনি মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
গোপালপুর বার্তাকে তিনি বলেন, “আমি দীর্ঘ দিন ধরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসাবে রয়েছি। মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। বহুবার বিদেশ ভ্রমণে পর্যবেক্ষণ করেছি গ্রাম হচ্ছে উন্নয়নের ফোকাস পয়েন্ট। তাই উন্নয়ন কোথায় হলে সার্বজনীন ফলাফল পাওয়া যাবে অথবা উন্নয়ন কেন কিভাবে আটকে যায় বা কিভাবে সঠিক উন্নয়নের ছোঁয়া স্পর্শ করা দরকার সে সম্পর্কে পূর্বাপর ধারনা রয়েছে তার। এজন্য শহর নয়-উন্নয়ন হবে গ্রাম থেকে। কারণ গ্রামেই বাস করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। আর তারাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।’’
তিনি বলেন, গোপালপুর ও ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলের অনাবাদী ও পতিত জমিতে শিল্পকারখানা স্থাপনের অনেক সুযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি অনাবাদী ও চরাঞ্চলের ১৫০০ একর জমি চীন এবং এনানটেক্স এর যৌথ উদ্যোগে শিল্প স্থাপনের ব্যবস্থা করিয়েছেন। এতে প্রায় ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হতে যাচ্ছে। ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পাশেই যমুনা ড্রেজিং এবং প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ হতে যাচ্ছে। একনেকে প্রকল্পটি পাশের অপেক্ষায়। এতে গোপালপুর ও ভূঞাপুরের নদী ভাঙ্গা মানুষ উপকৃত হবে। বহু জমি আবাদের আওতায় আসবে।
বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি নিজের ১২ লক্ষ টাকায় জমি কিনে উপজেলার বলাটা গ্রামে সাবস্টেশন নির্মানের ব্যবস্থা করেন। বিদ্যালয়বিহীন সোনামুই গ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরমোহাইল গ্রামে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেচ্ছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লক্ষিপুর গ্রামে দেশরতœ শেখ হাসিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাতুটিয়া গ্রামে শেখ রেহানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আজগড়া গ্রামে শেখ রাসেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
তিনি জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি প্রত্যেক উপজেলা ও ইউনিয়নে দলীয় স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণের কথা বলেছেন। গোপালপুরে তিনি এ কাজ শুরু করেন পাঁচ বছর আগে। উপজেলা আওয়ামীলীগের জন্য ৫৪ লক্ষ টাকা বৈরান নদীর তীরে স্থায়ী নিজস্ব কার্যালয় নির্মাণ চলছে। ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে হেমনগর ইউনিয়ন এবং ৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ঝাওয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ কার্যালয় নির্মাণ হয়েছে। ধোপাকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ অফিসের জন্য সাড়ে তিন লক্ষ টাকার জমি কেনা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব কটি ইউনিয়ন কার্যালয় নির্মাণ করার তোড়জোড় চলছে। দশ বিঘার উপর শেখ হাসিনা বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি অভিমত পোষণ করেন, রাজনৈতিক ভাবে গোপালপুর একটি জটিল জায়গা। কারণ এখানে গ্রেনেড হামলা মামলার মূল আসামী বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু এবং তার ভ্রাতা জঙ্গী নেতা মাওলানা তাজ উদ্দীন তাজুর বাড়ি। এরা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষক। এদের সঙ্গে লড়াই করেই এখানে রাজনীতি করতে হয়। এজন্য আগামী দিনে সাহসী মানুষকে নেতা হয়ে দলকে এগিয়ে নিতে হবে। একজন সাহসী, প্রত্যয়ী ও দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসাবে সাংসদ পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিনি। দলীয় নেতাকর্মীদের কারো সাথে কোনো বৈরী সম্পর্ক নেই। এক দেহে এক প্রাণ নিয়ে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। পরীক্ষিত নেতাকর্র্মীরা সবাই পাশে রয়েছেন। সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এবং আলোকিত গোপালপুর গঠনের কাজে মাঠে নেমেছেন বলে জানান তিনি।