বাংলার রাজনীতির দুই দিকপাল। গনতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ১৯৪৭ এ ব্রিটিশ রাজত্ব অবসানের শেষ মুহূর্তে অবিভক্ত বাংলা গঠনে উভয়ের ভূমিকা ছিল লক্ষ্যনীয়। ১৯৪৯ এ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা এবং পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষনের বিরুদ্ধে বাঙ্গালী জাতির আন্দোলন ও সংগ্রামে উভয়ের যুগপৎ সাহসী ভূমিকা আজ ঐতিহাসিকভাবে প্রমানিত।
স্বাধীনতার সাড়ে চার দশক পর ইতিহাস বিকৃতির পাশাপাশি রাজনীতির ময়দানে বড় দলের নেতাকর্মীরা যখন পরস্পর কাঁদা ছুড়াছুড়ি ও চরিত্র হননে ব্যস্ত তখন ইতিহাস খুঁড়ে পাওয়া একটি টুকরো ঘটনা তাদের জন্য শিক্ষনীয় হতে পারে।
ঘটনার তারিখ ৩০ মে, ১৯৭২। সদ্যস্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। টাঙ্গাইলের গোপালপর-ভূঞাপুর থেকে নির্বাচিত আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য হাতেম আলী তালুকদার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। হাতে একটি ফাইল। ১৯৬৮ সালে গোপালপুর উপজেলা সদরে প্রতিষ্ঠিত সূতী জিন্নাহ মেমোরিয়াল মডেল হাইস্কুলের নামকরণ পরিবর্তন সম্পর্কিত কাগজপত্র তাতে। ফাইলে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবেদন রয়েছে। আবেদনের সারমর্ম, এলাকার মানুষ পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মেমোরিয়াল নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামে স্কুলটির নামকরণ চায়। নিয়ম অনুযায়ী ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষ নাম পরিবর্তনের আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অনুমোদন চেয়ে স্কুল কর্তৃক্ষকে পত্র দেয়। (স্মারক নং ঢাকা বোর্ড, অ-৪৬/টাং/১৮২৫, তারিখ- ২৪/৪/৭২)।
সাংসদ হাতেম আলী তালুকদার বঙ্গবন্ধুর সামনে পত্রটি উপস্থাপন করেন। অনেক কথার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা বোর্ডের দেয়া সেই পত্রে নিজ হাতে মন্তব্য লিখলেন- ‘‘আমার নামের পরিবর্তে মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবের নাম সন্নিবেশিত করলে আমি অত্যন্ত খুশি হবো।’’ – শেখ মুজিব, ৩০.৫.৭২, প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকার।আর তখন থেকেই সূতী জিন্না মেমোরিয়াল মডেল হাইস্কুল সূতী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উচ্চ বিদ্যালয় নামে নামকরণ হয়।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির বেশ ক’জন সদস্য জানান, বৃহত্তর সূতী এলাকার মানুষের শ্রমে ও ঘামে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হলেও অন্ধ মুসলিম লীগ সমথর্কদের কারণে নামকরণ হয় জিন্নাহ মেমোরিয়াল মডেল হাইস্কুল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মানুষ জিন্নাহ নামকে ঘৃণা করা শুরু করে। তখন এলাকাবাসিরা বঙ্গবন্ধুর সহচর এবং সাংসদ হাতেম আলী তালুকদারের মাধ্যমে স্কুলের নামকরণ পরিবর্তনের আবেদন জানায়। এভাবে এ স্কুলের সাথে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং বঙ্গবন্ধুর নাম স্মৃতিবিজড়িত হয়ে আছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, ঐতিহ্যবাহি এ প্রতিষ্ঠানটি প্রায় আড়াই একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। জেএসসি ও এসএসসিতে প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই ভালো রেজাল্ট করে আসছে। ২০১৪ সালে শিক্ষা বোর্ডের মেধা তালিকায় টপটেন এর মধ্যে সপ্তম স্থান লাভ করে। লেখাপড়ার মান এবং সহশিক্ষা কার্যক্রম অত্যন্ত সুশৃঙ্খল। সুবিশাল খেলার মাঠ, পর্যাপ্ত অবকাঠামোর সমন্বয়ে প্রায় সহস্রারাধিক শিক্ষার্থী এ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। রয়েছে কম্পিউটার ল্যাব, বিজ্ঞাণাগার ও আধুনিক পাঠাগার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেকায়েপ প্রকল্পের ফলাফল জরীপে বিদ্যালয়টি সেরা প্রতিষ্ঠান হিসাবে নগদ অর্থ ও সনদ লাভ করেছে। জেলা প্রশাসণ বেশ কবার প্রতিষ্ঠানকে সেরা প্রতিষ্ঠান হিসাবে সনদ দিয়েছে। তিনি আরো জানান, উপজেলা প্রশাসনের দোরগোড়ায় অবস্থিত এ এতিহ্যবাহী স্কুলটিকে সরকারিকরণ করা হলে এলাকার শিক্ষার্থীরা উন্নত মানের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন
সম্পাদক : www.gopalpurbarta24.com