বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বাইরে একাধিক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটছে অচিরেই । নিজেদের মধ্যে আলোচনা সফল হলে আগামী মার্চের শেষ দিকে কনভেনশনের মাধ্যমে ‘জাতীয় ঐক্য’ এবং ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে কাদের সিদ্দিকী ও আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বে আরেকটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। জোট গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এ ছাড়া সাবেক এক রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে আরেকটি নতুন ফ্রন্টের প্রক্রিয়া অচিরেই শুরু হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।জোটের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান দুই প্রধান জোটের বাইরে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির বাস্তবতায় এ নতুন জোট গড়ার কাজ চলছে। সূত্র আরো জানায়, জোট গড়ার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে।
নতুন জোট গড়ার লক্ষ্যে সমমনা দলগুলো ইতিমধ্যে নিজেদের মধ্যে একাধিকবার আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে। জাতীয় ঐক্যের ডাকের ড. কামাল হোসেন এবং বি চৌধুরী সিলেট ও রাজশাহীতে মতবিনিময় সভা করেছেন। গণফোরামের প্রশিক্ষণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিকস জানান, সবকিছু ঠিকঠাক চললে বরিশাল ও খুলনার মতবিনিময় সভার পরই মার্চের শেষের দিকে ঢাকায় কনভেনশনের মাধ্যমে এ জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটবে ।
এই জোটে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য ও বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের স্ত্রী ড. শাহেদার গড়ব বাংলাদেশ বিপ্লবী দলও থাকছে বলে জানা গেছে ।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলছি। নাগরিকদের সমস্যাগুলো আমরা তুলে ধরছি। সারা দেশ থেকে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছ থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমাদের বিশ্বাস, দেশের নাগরিকেরা আমাদের কার্যক্রম গ্রহণ করছে।’
রাজনৈতিক দল বা জোট গড়ার বিষয়ে মান্না বলেন, ‘প্রত্যেক নাগরিকের রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা থাকে। আমরাও এর বাইরে নই। সময় হলেই আপনারা জানতে পারবেন।’
সূত্র জানায়, শুরুতে ড. কামাল হোসেন এবং বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় ঐক্যের ডাকে’র অধীনে ছোট দলগুলোর জোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে আাগ্রহী নয়। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আগামী ৯ ফেব্রুয়ারির কাউন্সিলের পর আ স ম আব্দুর রবসহ সমমনা দলগুলো নিয়ে তারা পৃথক জোট করবেন বলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের উচ্চপর্যায় থেকে জানা গেছে।
এই জোটে বিএনপির সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), চরমোনাই পীরের ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, সেকান্দার আলী মনির লেবার পার্টি, সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা সাংবাদিক সাদেক খানের গণশক্তি দলসহ কয়েকটি বামদল এ জোটে শরিক হতে পারে।
শুক্রবার কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আলোচনা হবে কাউন্সিল ও জোটের ব্যাপারে । এ ছাড়া ১৮-দলীয় জোটের কমপক্ষে পাঁচটি দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগে যোগ দিচ্ছেন, এমন আভাসও পাওয়া যায় দলটির শীর্ষমহল থেকে।
নতুন জোটের বিষয়ে আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন বলেন, ‘আপনাদের প্রথমেই একটি বিষয় স্পষ্ট করা দরকার, সেটা হলো তৃতীয় শক্তি মানে গণতান্ত্রিক জনগণের শক্তি। এখানে কিছু দলবল নিয়ে দুই দলেরই একটি দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া নয়। জনগণ দুই দলের প্রতি বিরক্ত। আমাদের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি, শিগগির চূড়ান্ত ফল দেখতে পাবেন।’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক বলেন, ‘রাজনীতিতে তৃতীয় ধারা প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা ২০০৬ সালেও যুক্তফ্রন্ট করেছিলাম। এবার আর পিছু ফেরার অবকাশ নেই। শুক্রবার আমাদের দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা। ৯ ফেব্রুয়ারি ১২০০ প্রতিনিধি নিয়ে আমাদের দলের কাউন্সিল । সেখানে অবশ্যই চমক থাকবে। তার পরেই আমরা নতুন জোটের ব্যাপারে কথা বলব।’
হাবিবুর রহমান আরো বলেন, ‘ঐক্যের ডাক দিলেই তো আর হয় না। ঐক্য হতে হবে জনগণের স্বার্থে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো জোট করব। কারও ডাকে অন্যের ক্রীড়নক হব না।’
অন্যদিকে, সিপিবি-বাসদের নেতৃত্বে আরেকটি জোট গঠন এখন প্রক্রিয়াধীন। তবে, এ জোট আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে এমন আশঙ্কায় অন্য বামদলগুলো এখনো তাদের ডাকে সাড়া দেযনি বলে বামদল সূত্রে জানা গেছে।
সব বামদলকে একটি মোর্চায় এনে পৃথক জোট গঠনের ব্যাপারে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘দেশের জনগণ এখন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে চাইছে না, বিএনপিকেও আর দেখতে চেইছে না।’ তিনি বলেন, ‘ঐক্যের প্রক্রিয়ায় সিপিবি-বাসদ একমত হয়েছে। আমরা সমঝোতায় এসেছি। আশা করি, অল্প কিছুদিনের মধ্যে জোটের কলেবর বৃদ্ধি পাবে।’
জোট গড়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক নেতা জানান, আগামী নির্বাচন নিয়ে অনেক খেলা এখনো বাকি। প্রধান দুই জোটের প্রতি মানুষ ক্ষুব্ধ। দেশী-বিদেশী মিত্ররাও আর এই দুই দলকে দেখতে চাইছে না। তাই যদি তৃতীয় এ জোটে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদও যোগ দেন বা নিজেই নেতৃত্ব দিয়ে নুতন জোট করেন, তাহলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। ওই নেতা দাবি করেন, এরশাদ ইতিমধ্যে সবুজ সংকেতও দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের মুখপাত্র ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ টেলিফোনে বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে ও পরে অনেক ঘটনাই ঘটে। আমরা এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সময়ই বলে দিবে কী করতে হবে।’ তবে জাপা যে করেই হোক দুই জোটের বাইরে থেকে নির্বাচন করবে বলে জানান জাতীয় পার্টির এই নেতা।