রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ২০১২সালের নয় মাসে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ সাত হাজার কোটি টাকারও বেশি। ১২মাসের হিসাবে তা প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে ব্যাংকগুলোর সূত্রবলছে।
সব মিলিয়ে চার ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ এখন ১৫ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। এ ছাড়াএই চার ব্যাংক এখন পর্যন্ত নয় হাজার ২৬৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন বারাইট-অফ করেছে। সুতরাং, চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এখন ২৪ হাজার ৭৮২ কোটিটাকা। এই অর্থের বড় অংশই আদায় হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অথচ এই অর্থ দিয়েইএকটি পদ্মা সেতু করা সম্ভব ছিল।বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি মালিকানাধীন এই চার ব্যাংকের সমঝোতা চুক্তিআছে। চুক্তির শর্ত হচ্ছে, ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনবে। কিন্তু ঘটনাঘটছে উল্টো। গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ যতটা বেড়েছিল, সেপ্টেম্বরশেষে বেড়েছে আরও বেশি। ডিসেম্বরের হিসাবে আরও বেশি বাড়বে। কেননা, এ সময়েকেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন বিধিবিধানের কারণে নতুন খেলাপি ঋণ তৈরি হবে।বাংলাদেশ ব্যাংক গত এক সপ্তাহে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ওরূপালী ব্যাংকের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে নতুন করে সমঝোতা চুক্তি করেছে। এ সময় ব্যাংক গুলোর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পর্যালোচনাও করাহয়। বৈঠকে ব্যাংকগুলোর সার্বিক পরিস্থিতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।ব্যাংকগুলো এ-যাবৎকালে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ অবলোপন বা রাইট-আপ করেছে, যাখেলাপির হিসাবে যুক্ত হলে পরিস্থিতি রীতিমতো ভয়াবহ হতো। হিসাবে দেখাযাচ্ছে, সোনালী ব্যাংক দুই হাজার ৮৪৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে।জনতা অবলোপন করেছে দুই হাজার ৫৬ কোটি টাকা, অগ্রণী তিন হাজার ৪৭৩ কোটি টাকাএবং রূপালী অবলোপন করেছে ৮৮৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা।জনতা আদায় করেছে ১৭৮ কোটি ৬৬ লাখ, অগ্রণী ১৮৮ কোটি এবং রূপালীব্যাংক মাত্র ২৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা।বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চার ব্যাংকে লোকসানি শাখাও বেড়েহয়েছে ১৮৬টি। অথচ ২০১১ সাল শেষে লোকসানি শাখা ছিল ১৩৬টি। এর মধ্যে ২০১১শেষে জনতা ব্যাংকে লোকসানি শাখা ছিল ৫৮টি, যা হয়েছে ৭৬টি। অগ্রণী ব্যাংকে নয়টি থেকে ৩৪টি ও রূপালী ব্যাংকে চারটি থেকে বেড়ে হয়েছে ১২টি। তবে সোনালীব্যাংকে লোকসানি শাখা ৬৫টি থেকে একটি কমেছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পরিস্থিতিকে খুবই খারাপ উল্লেখ করে বলেছে, লোকসানিশাখা কমাতে না পারলে নতুনভাবে আর কোনো শাখার অনুমতি দেওয়া হবে না।চার ব্যাংকের অবনতি: ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে সোনালী, জনতা ও অগ্রণীব্যাংককে কোম্পানি করা হয়। রূপালী ব্যাংক আগে থেকেই কোম্পানি ছিল। ২০০৪সালে নেওয়া বিশ্বব্যাংকের শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও ব্যাংক আধুনিকীকরণ প্রকল্পেরআওতায় ব্যাংকগুলোতে তিন বছরের জন্য ব্যবস্থাপনা ও ব্যাংকিং কার্যক্রমেরউন্নতিতে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের আওতায় কোম্পানি গঠন করাহয়।
কোম্পানি গঠনের পর বিধিগতভাবে ব্যাংকগুলোর ওপর সরকারের সরাসরি কোনো ভূমিকাথাকতে পারে না। নিয়ম হচ্ছে, বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) ভোটাধিকারপ্রয়োগের মাধ্যমে পরিচালক নিয়োগ হবে এবং পরিচালকেরাই একজনকে চেয়ারম্যাননিযুক্ত করবেন। অথচ কাজটি সরাসরি সরকার করছে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক গুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতাধীনসংস্থায় পরিণত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি থাকলেওকোনো লাভ হচ্ছে না। ব্যাংকগুলো সমঝোতা চুক্তির শর্তপূরণকে খুব বেশি গুরুত্বদেয় না। এতে পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে বলে ব্যাংকিং সূত্রগুলো বলছে।