বিদ্যুতের দাম ফের বাড়ানোর বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (পবিবো) প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটারি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।
বৃহস্পতিবার কমিশনের শুনানি কক্ষে গণশুনানিতে মূল্যায়ন কমিটি তাদের এ মতামত দেন।
তবে মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, পবিবোর বর্তমান মূল্যহার বৃদ্ধির কোনো অবকাশ আপাতত নেই। তবে এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।
এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যুতের দাম খুচরা পর্যায়ে প্রায় ১৫ শতাংশ এবং পাইকারিতে ১৭ শতাংশ বাড়ানো হয়।
এরপর পল্লী বিদ্যুত ও অন্যান্য বিতরণকারী সংস্থাগুলো আবারো দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠায় বিইআরসিতে।
গত ২ ডিসেম্বর বিইআরসিতে পাঠানো পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবে গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা বলে ৭০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। ওই প্রস্তাবের ওপরই বৃস্পতিবার গণশুনানির আয়োজন করে বিইআরসি।
শুনানিতে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির উপস্থাপিত প্রতিবেদেনে বলা হয়, “২০১২-১৩ অর্থবছরে পল্লী বিদ্যুতের রাজস্ব চাহিদা থেকে চলতি পরিচালন রাজস্ব বেশি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ট্যারিফ প্রবিধানমালা অনুযায়ী পবিবোর বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধির অবকাশ নেই।”
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে পবিবো বলে, চলতি অর্থবছরে গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা বিদ্যুতের মূল্য না বাড়ালে তাদের বার্ষিক পরিচালন ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় ৬৪৫ কোটি টাকা।
গণশুনানিতে অংশ নেয়া কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলোদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলমও দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।
তিনি বলেন, গ্রামীণ মানুষের আয় কম হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঢাকার চেয়ে পল্লী বিদ্যুতের দাম বেশি। গ্রাহকের কাছ থেকে বিল নিয়ে তারা চলতে পারে না। প্রয়োজনে অন্যান্য সংস্থা থেকে আলাদা পদ্ধতিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে ভর্তুকি দিতে হবে।
গত ২০ সেপ্টেম্বর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসির তখনকার চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন জানান, দাম বৃদ্ধির পরও চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি লাগবে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুতের দাম সাত বার বাড়ানো হয়েছে। এরপরও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর জন্য তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের ওপর চাপ দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।
এদিকে বিইআরসি’র মূল্যায়ন কমিটি তাদের মূলায়নে বিদ্যুতে দাম না বাড়ানোর সুপারিশ করে জানায়, কমিশন কর্তৃক মোট সুপারিশকৃত রাজস্ব চাহিদার পরিমাণ ৮৬,১৬১ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন টাকা।
চলতি পরিচালন রাজস্বের পরিমাণ ৮৭,৩৩৭ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন টাকা। সুপারিশকৃত পরিচালন রাজস্ব থেকে চলতি পরিচালন রাজস্ব ১,১৭৬ দশমিক ১৯ মিলিয়ন টাকা বেশি।
কমিটি জানায় আরইবি’র প্রদত্ত তথ্য এবং কমিশনের ট্যারিফ প্রবিধানমালা অনুযায়ী আরইবি’র বিদ্যমান দাম বাড়ানোর কোন অবকাশ নেই।
গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো: ইমদাদুল হক দ্রই সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ ও মো: দেলোয়ার হোসেন। কশিশনের পক্ষে মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক মো: আবুল কাশেম তাদের মতামত তুলে ধরেন। আরইবি’র পক্ষে পরিচালক (ফাইন্যান্স মনিটরিং এ- ট্যারিফ) মো: বজলুর রহমান উপস্থাপন তুলে ধরেন