শান্ত নদীর জল। মৃদুমন্দ ঢেউ। দূরে গ্রামগঞ্জ। মাথার উপর বিস্তীর্ণ আকাশ। একটু আধটু মেঘ জমে আছে। মাঝ নদীতে নৌকায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছেন মন্ত্রী। এটা কোন গল্প-উপন্যাসের দৃশ্যপট নয়। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ফেসবুক প্রোফাইল কাভারের বর্ণনা। এ ছবিটিতে লাইক পড়েছে ১০৩০টি। লাইকের এ সংখ্যাই বলে দেয় মন্ত্রী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমটিতে কতটুকু জনপ্রিয়।
ডিজিটাল স্লোগানের সরকারে মন্ত্রীরা এনালগ- এমন অভিযোগ শোনা যায় হরহামেশাই। অভিযোগ রয়েছে অনেকেরই নেই ই-মেইল আইডি। থাকলেও নিয়মিত লগ ইন করেন না। তবে সরকারের দু’জন প্রভাবশালী মন্ত্রী রয়েছেন ব্যতিক্রম। যারা শুধু ই-মেইল নয় নিয়মিত ঢুঁ মারছেন সময়ের জনপ্রিয় সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুকে। ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করছেন আবেগ অনুভূতি ও রাজনীতি।
এ তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রিসভায় যোগদানের আগে থেকেই নিয়মিত ব্যবহার করেন ফেসবুক। মন্ত্রী হিসেবে যোগদানের পর স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তির পর আগের মতো আর সক্রিয় থাকবেন না বলে। তবে নিয়মিত স্ট্যাটাস আপডেট না করলেও আপলোড করছেন প্রতিদিনকার সরকারি-বেসরকারি সামাজিক অনুষ্ঠানাদির ছবি। ছবির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। পাঁচ হাজারের বন্ধু কোটাও পূরণ হয়েছে অনেক আগে। এখন অনুরাগী ও শুভাকাঙক্ষীরা সাবস্ক্রাইব করছেন মন্ত্রীকে। সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা প্রায় ১৪৯৩০। সুবক্তা হিসেবে পরিচিত এ নেতা প্রোফাইলে নিজের সম্পর্কে কাহলিল জিবরানের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, ন্যাচার ইজ মাই টিচার/হিউম্যানিটি ইজ মাই বুক/লাইফ ইজ মাই স্কুল। ফেসবুকে আপলোড করা ছবির অ্যালবামগুলো সমৃদ্ধ বিচিত্রসব অভিজ্ঞতার আলোকে। রয়েছে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার সঙ্গে ইফতার পার্টির ছবি থেকে দূর গায়ের বৃদ্ধের সঙ্গে মন্ত্রীর হাসিমাখা ছবি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকাকালীন বর্ণবৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা থেকে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের প্রয়াত নেতা ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে ঢাকায় উঠানো ছবিও রয়েছে এতে।
বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর স্বপ্ন ঝুলে রয়েছে। তবে প্রকল্পর এলাকায় স্পিড বোটে করে পদ্মার জলে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে ভেসে বেড়ানোর সুখকর মুহূর্তগুলো ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে মন্ত্রীর স্মৃতির অ্যালবামে। শিল্প-সংস্কৃতিপ্রেমী হিসেবে তার আলাদা সুনাম রয়েছে। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক ও রাবেয়া খাতুনের ৭৬তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর ছবিগুলোও ভাগাভাগি করছেন বন্ধুদের সঙ্গে। অ্যালবামে ঠাঁই পেয়েছে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত জীবনস্মৃতি গ্রন্থ ‘যে কথা হয়নি বলা’ ও কারাবাসের অনুস্মৃতি নিয়ে লেখা বই ‘যে কথা বলা হয়নি’ বইয়ের প্রচ্ছদও। সোজাসাপ্টা কথায় বিশ্বাসী ওবায়দুল কাদের গত ৭ই নভেম্বর আপডেট করা স্ট্যাটাসে লিখেছেন, লং ওয়ে টু গো। টাইম ইজ টু শর্ট। সবশেষ মঙ্গলবার লিখেছেন, এ লট অব হার্ড ওয়ার্ক লাইজ এহেড অব মি/ মাই সাকসেস এজ মিনিস্টার ইয়েট টু কাম/ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু: মুষ্ঠিবদ্ধ হাত। প্রজ্বলিত মশাল। হলুদ জমিনে লেখা, সমাজ বদলের লক্ষ্যে আরও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের ৪০ বছর। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ফেসবুকের কাভার ফটো এটি। প্রোফাইল পিকচারটি খুব সাদামাটা। পাসপোর্ট সাইজের ছবিতে পরনে রয়েছে চিরচেনা সফেদ পাঞ্জাবি। চোখে গ্লাস। ফেসবুক বন্ধু হিসেবে দেখা গেছে এ মন্ত্রী বেশ সক্রিয় জনপ্রিয় এ যোগাযোগ মাধ্যমে। বন্ধুর সংখ্যা প্রায় ৫০১৫, সাবস্ক্রাইব ৫৩২২/ তথ্যমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এ মন্ত্রী সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ও ছবি আপলোডের ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি ওবায়দুল কাদেরকে। তার রয়েছে মাত্র ১৮টি অ্যালবাম।
ফেসবুকের তথ্য উল্লেখ রয়েছে, পড়াশোনা নটরডেম ও বুয়েটে। দীর্ঘ বাম রাজনীতির অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ এ নেতা জন্মেছেন ১২ই নভেম্বর ১৯৪৬। গত সোমবার তিনি ৬৬ বছরে পদার্পণ করেছেন। জন্মদিনে দূর-দূরান্তের অনুরাগীরা সরাসরি শুভেচ্ছা জানাতে পারেননি। কিন্তু ভার্চুয়াল ওয়ালে ফুল ও কেক দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে ভুল করেননি ভক্ত ও অনুরাগীর দল। ফুল ও বাহারি কেকে ভরে উঠেছে তার ফেসবুকের ওয়াল। সমপ্রতি দেশে জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা নিয়ে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, খালেদা জিয়ার রহস্যজনক নীরবতা জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে উসকানি দিচ্ছে। সারা দেশে জামায়াত-শিবির পরিকল্পিতভাবে ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। এ মন্তব্যে লাইক পড়েছে ২৮৩টা।
নিজ দলের চুয়াডাঙ্গা জেলা সভাপতি দু’বারের উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম পিনুর আকস্মিক মৃত্যুতে শোকাহত মন্ত্রী ফেসবুক ওয়ালে শোক প্রকাশ করতে ভুল করেননি। বিভিন্ন সময় মাঠে ময়দানের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের ছবিও আছে অ্যালবামে। রাজনীতি ও দলীয় বৃত্তের বাইরে ব্যক্তিগত আবেগ ও অনুভূতি শেয়ার করেছেন নানা সময়ে। সরকারের শেষ যাত্রায় মন্ত্রিসভার তরীতে উঠা হাসানুল হক গত ৫ই অক্টোবর দাদা হয়েছেন। নবজাতকের ছবিসহ সে সুখস্মৃতির স্ট্যাটাস শেয়ার করে লিখেছেন, আমি দাদা হলাম ও রীনা দাদি হলো। আমাদের প্রিয় পুত্রবধূ আনিকা ও একমাত্র সন্তান শমিত আজ পুত্র সন্তানের মা ও বাবা হয়েছে। ওদের জন্য দোয়া করবেন।