টেস্ট অভিষেকটা স্বপ্নের মতোই হল তরুণ পেসার আবুল হাসান রাজুর। তবে বল হাতে নয়, ব্যাট হাতে রীতিমত বিশ্ব রেকর্ড করেই টেস্ট আঙিনায় পা রাখলেন এই বাঁহাতি। তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে করেছেন অভিষেকে সেঞ্চুরি। আর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে দশ নম্বরে নেমে টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি করেছেন। দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন মাঠে প্রবেশ করেন স্কোরবোর্ডে রান তখন মাত্র ১৯৩।
উইকেটে সঙ্গী সহঅধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহ। লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে ইনিংসটাকে কতদূর নিয়ে যেতে পারবেন রিয়াদ সবাই যখন এই অংক কষছেন তখনই স্রোতের বিপরীতে হাঁটা শুরু সিলেটের এই তরুণের। এই উইকেটে কিভাবে রান করতে হয় টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের তা শিখানোর পণ করে নেমেছিলেন কিনা কে জানে? সাবধানী শুরুর পর ছাড়ার বল ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি খেলেছেন চোখ ধাঁধানো সব শট। ১৩ টি চারের সাথে ৩ টি ছয় হাঁকিয়ে করেছেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। অন্য প্রান্তে তাঁকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন রিয়াদ। অবিচ্ছিন্ন নবম উইকেট জুটিতে রেকর্ড ১৭২ রান যোগ করে দিন শেষ করেছেন এই দুই ব্যাটসম্যান। রাজু অপরাজিত আছেন ঠিক ১০০ রানে, তাঁর সঙ্গী রিয়াদের সংগ্রহ ৭২।
এর আগে সকালে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলে ফেরা উইন্ডিজ পেসার ফিডেল এডওয়ার্ডস নিজের দ্বিতীয় ও ম্যাচের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই প্যাভিলিয়নের পথ দেখান প্রথম টেস্টে একাদশের বাইরে থাকা বাংলাদেশি ওপেনার নাজিম উদ্দিনকে। দলের রান তখন মাত্র ৫।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে শাহরিয়ার নাফীসকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন তামিম। কিন্তু দলের রান যখন ৬৪ তখন অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে অহেতুক খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি হন ২৬ রান করা নাফীস। এরপর দ্রুত তামিম, নাঈম ও সাকিব ফিরে গেলে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। স্যামির অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল ছেড়ে দিতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান তামিম। প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি পেয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে গিয়েছিলেন কিনা কে জানে? নতুবা অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল কেন স্ট্যাম্পে টেনে আনতে যাবেন বদলে যাওয়া নাঈম? নাফীসকে অনুসরণ করে দ্রুত ফিরে যান সাকিব। দৃশ্যপটে প্রথম টেস্টে মাত্র চার রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করা নাসির। অধিনায়ক মুশফিককে নিয়ে পাল্টা আক্রমণে শুরু করেন ম্যাচ বাঁচানোর লড়াই। আক্রমণটা বেশি করেছিলেন ক্যারিবীয় স্পিনারদের। সুনীল নারাইনকে তো থিতু হতেই দেননি। বাংলাদেশে এসে সব রহস্য যেন উবে গেল এই স্পিনারের। কিন্তু আক্রমণটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হয়েছিলো আরেক স্পিনার পেরমলের। হাফ সেঞ্চুরির পরপরই তাই জারিজুরি শেষ করে দিলেন নাসিরের। মিড অনে তাঁকে এডওয়ার্ডসের ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়েছেন সাজঘরে। সঙ্গী হারিয়ে যেন খেই হারিয়ে ফেললেন মুশফিক। ভালো শুরুর পর হঠাৎ মনোযোগ হারিয়ে তালুবন্দি হলেন রামদিনের। স্কোরবোর্ড বলছে টাইগারদের সম্মিলিত সংগ্রহ তখন ৭ উইকেটে ১৯৩।
রানের খাতা খোলার আগে দলকে ওই স্কোরে রেখেই ফিরে যান দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা সোহাগ গাজী। এর পরই শুরু রাজু উপাখ্যানের।
সকালে প্রথম ঘণ্টায় অবশ্য উইকেট থেকে কিছুটা সহায়তা পেয়েছিলেন ক্যারিবীয় বোলাররা। উইকেট থেকে পাওয়া সুইং কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন শেষ পর্যন্ত পাঁচ উইকেট পাওয়া এডওয়ার্ডস। উইকেট না পেলেও অন্য প্রান্তে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে তাঁকে দারুণ সহায়তা করেছেন প্রথম টেস্টের শেষ ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাওয়া টিনো বেস্ট। তামিমের উইকেটটিসহ দুই উইকেট পেয়েছেন দলপতি স্যামি। বাঁহাতি স্পিনার পেরমেল একটি উইকেট পেলেও দিনশেষে উইকেট শূন্যই রয়ে গেছেন সারাদিনে ১৯ ওভার হাত ঘোরানো সুনীল নারাইন। দিনশেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৬৫/৮।