শেষ পর্যন্ত ঢাকা টেস্টে পরাজিত দলের নাম বাংলাদেশই। তবে এই পরাজয় আগের সব পরাজয়ের মত অসহায় আত্মসমর্পণ করে নয়, এবার প্রবল প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়েই হারলো টাইগাররা। প্রায় এক বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে টানা পাঁচ দিন ম্যাচে ভালোভাবে থাকাটাকেই প্রাপ্তি মানছেন টাইগার দলপতি মুশফিক। সেই সাথে অভিজ্ঞতার অভাব এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী শেষ দুই সেশনে ব্যাট করতে না পারাকেই পরাজয়ের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে।
শেষ দিনের শুরুতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাকি চার উইকেট নিয়ে দলকে দারুণভাবে ম্যাচে রাখেন অভিষিক্ত তরুণ স্পিনার সোহাগ গাজী। ২য় ইনিংসে ৭৪ রানে ৬ উইকেট নিয়ে করেন বাংলাদেশের পক্ষে অভিষেক টেস্টে ইনিংসে সেরা বোলিং এর রেকর্ড। ম্যাচে মোট উইকেট নিয়েছেন ৯টি, যা অভিষেকে বাংলাদেশি কোন বোলারের সেরা বোলিং ফিগার।
প্রথম ইনিংসে ২৯ রানের লিডের সৌজন্যে বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাড়ায় ২৪৫, হাতে সময় দুই সেশনেরও বেশি। যেকোনো পরিস্থিতিতেই টেস্টের শেষ দিনে ২৪৫ রান তাড়া করা কঠিন। তবে ঢাকা টেস্টের পিচ আর প্রথম ইনিংসে টাইগারদের দুর্দান্ত ব্যাটিং আশার সঞ্চার করেছিলো। নড়েচড়ে বসেছিলেন উপমহাদেশের রীতি ভেঙ্গে টেস্ট ম্যাচ দেখতে মাঠে আসা প্রায় ১৫ হাজার দর্শক।
তামিম যদি প্রথম ইনিংসের মত উড়ন্ত সূচনা এনে দিতে পারেন তবে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ৪র্থ জয় কেবল সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু কিসের কি? স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে খেলতে গিয়ে রামপলের বলে ধরা পড়লেন উইকেটের পেছনে। স্কোরবোর্ডে রান তখন মাত্র ১০।
এর পরের গল্প কেবলই হতাশার। মিরপুরের যে উইকেটে প্রথম চারদিন মাথা কুটে মরলেন পেসাররা সেখানেই হঠাৎ প্রাণের সঞ্চার করলেন টিনো বেস্ট। গতি আর বাউন্স তাঁর সবসময়ই ছিল। অভাবটা ছিল কেবল লাইন আর লেংথ এর। কাল লাঞ্চের আগে পরে গতি আর বাউন্সের সঙ্গে খুঁজে পেলেন লাইন-লেংথও। আর তাতেই মিরপুরে রীতিমত আগুন ঝরিয়েছেন এই পেসার। সেই আগুনে বাংলাদেশ এমনই পুড়ল যে ১ উইকেটে ৪৪ থেকে ৭ উইকেটে ১১৯ হতে সময় লাগলো এক সেশনেরও কম। তবে অবিবেচকের মত শট খেলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে তাঁকে দারুণ সহায়তা করেছেন জুনায়েদ ও শাহরিয়ার। মাঝে কুখ্যাত বডিলাইন সিরিজের কথা মনে করিয়ে দিয়ে নাঈম আর মাহমুদউল্লাহর শরীরে আঘাত হেনেছেন বেশ কয়েকবার। মাহমুদউল্লাহকেই ধরাশায়ী করেছেন বেশি। পাল্টা আক্রমনে হুক করে ছয় মেরে জবাব ও দিয়েছেলেন তিনি। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। বোল্ড হয়েছেন ওই বেস্টের বলেই। মাত্র ২৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে একাই ধসিয়ে দিয়েছেন বেস্ট। ৫৪.৩ ওভারে ১৬৭ রানে টাইগারদের গুটিয়ে দিয়ে দলকে ৭৭ রানের জয় এনে দেওয়ার পথে ৩ উইকেট নিয়েছেন অভিষিক্ত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেরমল। উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরির সুবাদে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন কেইরান পাওয়েল।