ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হলসহ নব নির্মিত ও নির্মিতব্য বিভিন্ন স্থাপনার উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে বুধবার ক্যাম্পাসে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।” প্রধানমন্ত্রী এদিন ছাত্রীদের জন্য নবনির্মিত সুফিয়া কামাল হল, ছাত্রদের জন্য জগন্নাথ হলের সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ভবন, সমাজবিজ্ঞান ভবন, উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য বঙ্গবন্ধু টাওয়ার, রোকেয়া হলের ছাত্রীদের জন্য ‘৭মার্চ’ নামে ১২তলা একটি ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো কয়েকটি স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, নতুন নির্মিত সুফিয়া কামাল হল ও সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনে দুই হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর আবাসনের সুযোগ হবে। অবশ্য অবকাঠামোগত এই উন্নয়নের পরেও প্রতিবছর দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপিঠে অধ্যয়নের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শত শত শিক্ষার্থী হলে জায়গা পাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০তম বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ৪৯ হাজার ৪৯৫ জন শিক্ষার্থীর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭টি আবাসিক হলে আবাসনের সুযোগ রয়েছে মাত্র ১৮ হাজার ৯১২ জন ছাত্রছাত্রীর। বাকি প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে যাদের ঢাকা শহরের কোথাও বসবাসের সক্ষমতা নেই তারা একটি পর্যায় পর্যন্ত হলগুলোতে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে কাটাতে বাধ্য হয়। একধিক শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ছাত্র সংগঠনের নেতাদের অবৈধভাবে হলের কক্ষ দখল, বহিরাগতদের আশ্রয় দেয়া, আসন বরাদ্দে অনিয়ম, শিক্ষা জীবন শেষেও অনেক শিক্ষার্থীর হলে অবস্থান- এ সব কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। হলগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন কক্ষে ২০ থেকে ৩০ জন পর্যন্ত শিক্ষার্থী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে গাদাগাদি করে থাকছে, যাকে বলা হচ্ছে ‘গণরুম’। কবি জসিম উদ্দিন হলের লোক প্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ এবং গণরুমে থাকতে বাধ্য হওয়ায় প্রথম দুই বছর আমাদের লেখাপড়া চূড়ান্তভাবে ব্যাহত হয়।” এছাড়া অধিকাংশ হলেই ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকায় অনেক মেধাবী ছাত্রকে শীত-বৃষ্টি উপেক্ষা করে হলের মসজিদের বারান্দায় রাত কাটাতে হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। আবার হলগুলোতে ক্ষমতাসীন দল সমর্থক ছাত্র সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং জীবনযাত্রার নিম্নমানের কারণে অনেক শিক্ষার্থী শহরের বিভিন্ন মেস বা হোস্টেলে থাকছেন। এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মাদ ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সব সময়ই শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্য মেটাতে সচেষ্ট থাকি। কিন্তু প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবে শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করতে পারছি না।” আবাসন সঙ্কটের কথা স্বীকার করে উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিবছরই আমরা নতুন নতুন হল, ভবন নির্মাণ করে আবাসন সঙ্কট নিরসনের চেষ্টা করছি।” এর অংশ হিসেবে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও রোকেয়া হলের পাশে আরো নতুন দুটি হল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি অমর একুশে হল, শহীদুল্লাহ হল, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল বর্ধিত করার কাজ চলছে বলে জানান তিনি।