মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চারপাশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালকে কেন্দ্র করে র্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি এলিট ফোর্স সোয়াত বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মঙ্গলবার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে পুলিশের রমনা জোনের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাসসকে জানান।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার মামলায় রায়ের তারিখ ধার্য করে। এ ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও শাহিনুর ইসলাম।
ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার একেএম নাসির উদ্দিন মাহমুদ সোমবার সাংবাদিকদেরকে বলেন, এ মামলায় উভয়পক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ও যুক্তি-তর্ক শুনানী অন্তে ট্রাইব্যুনাল মামলাটির রায় ঘোষণার বিষয়টি অপেক্ষমান ছিল। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল-২ এ এটি হবে দ্বিতীয় রায়। মঙ্গলবার আব্দুল কাদের মোল্লার মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য কার্যতালিকায় থাকবে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর দ্বিতীয় কোনো আসামীর বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণা করা হবে। তবে জামায়াতে ইসলামীর কোন নেতার বিরুদ্ধে এটিই হবে প্রথম রায়। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর আটক কোন আসামীর বিরুদ্ধেও এটি প্রথম রায়। পৃথক দুইটি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ৯টি মামলার মধ্যে এটি হবে দ্বিতীয় রায়।
এছাড়াও জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার রায়ও ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান রেখেছে ট্রাইব্যুনাল-১।
এর আগে ট্রাইব্যুনাল-২এ গত ২১ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন পলাতক আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে প্রথম রায় ঘোষণা করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও যেকোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঠেকাতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা লক্ষ্যনীয়। সোমবার থেকেই ট্রাইব্যুনালের সবগুলো প্রবেশপথ ও আশেপাশের পুরো এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের মূল প্রবেশপথে অবস্থান নিয়েছে সোয়াত বাহিনীর সদস্যরা। আর র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা রয়েছে শিশু একাডেমীর সামনে দিয়ে ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় গেটসহ সংলগ্ন এলাকায়। এছাড়াও শিক্ষা ভবন, কদম ফোয়ারা, পুরোনো হাইকোর্ট ও দোয়েল চত্ত্বরসহ পুরো এলাকায় আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছে। কাল রায় ঘোষণার দিন ট্রাইব্যুনাল এলাকাসহ রাজধানীর গুরুত্বপুর্ন এলাকা ও সড়কে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো
জোরদার করা হবে বলে ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার বেনজির আহমেদ ট্রাইব্যুনাল এলাকা পরিদর্শনে এসে বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে কাউকে কোনো রকম বিশৃংখলা সৃষ্টি বা আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এখানে চলমান বিচারিক কার্যক্রম নির্বিঘ্ন ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সুরক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করা হয়েছে।’