জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় হবে কাল মঙ্গলবার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দুই এর দৈনিক কার্যতালিকায় এই নথি উঠেছে বলে জানা গেছে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্টার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন।
এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাকের যুক্তি উপস্থাপন শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলায় যেকোনো দিন রায় ঘোষণা হবে বলে জানান।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু হয় ২০১০ সালের ২১ জুলাই। একই বছরের ২ আগস্ট কাদের মোল্লাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর তদন্ত শেষ হয়। ১৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনে। এরপর ২৮ মে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে কাদের মোল্লার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগ গঠনের আদেশে কাদের মোল্লার পরিচিতিতে বলা হয়, ১৯৪৮ সালে ফরিদপুরের আমিরাবাদ গ্রামে কাদের মোল্লা জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় তিনি ছাত্রসংঘে যোগ দেন। একাত্তরে তিনি ছাত্রসংঘের সদস্যদের দিয়ে আলবদর বাহিনী গড়ে তোলেন।
কাদেরের বিরুদ্ধে ছয় অভিযোগ
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মিরপুরের আলোকদি গ্রামে ৩৪৪ জন এবং কবি মেহেরুননিসাকে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
প্রথম অভিযোগে বলা হয়, কাদের মোল্লার নির্দেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে আটক মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে একাত্তরের ৫ এপ্রিল গুলি করে হত্যা করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা তাঁর সহযোগীদের নিয়ে কবি মেহেরুননিসা, তাঁর মা ও দুই ভাইকে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসায় গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেন।
তৃতীয় অভিযোগ অনুযায়ী, ২৯ মার্চ বিকেলে আরামবাগ থেকে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের বাসস্ট্যান্ডে গেলে কাদের মোল্লা ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে ধরে জল্লাদখানা পাম্পহাউসে নিয়ে জবাই করে হত্যা করেন।
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৫ নভেম্বর সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কাদের মোল্লা ও ৬০-৭০ জন রাজাকার রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থানার খানবাড়ি ও ঘটেরচর (শহীদনগর) এলাকায় যান। সেখানে মোজাফফর আহমেদ খান এবং দুজন নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি ও গোলাম মোস্তফাকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে দিনের আলোয় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কাদের মোল্লা ও তাঁর সহযোগীরা ভাওয়াল খানবাড়ি এবং ঘটেরচরে (শহীদনগর) হামলা চালিয়ে শতাধিক নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করেন।
পঞ্চম অভিযোগ অনুযায়ী, ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাদের একটি হেলিকপ্টার মিরপুরের আলোকদি গ্রামের পূর্ব দিকে নামে। কাদের মোল্লা অর্ধশতাধিক অবাঙালি ও রাজাকার নিয়ে গ্রামের পশ্চিম দিক থেকে ঢোকেন এবং এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকেন। ওই ঘটনায় ৩৪৪ জনের বেশি মারা যায়।
শেষ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কাদের মোল্লা ও তাঁর সহযোগী কয়েকজন অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনা মিরপুরের ১২ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর কালাপানি লেনের হযরত আলীর বাসায় যান। কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত আলীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই সঙ্গে তাঁর স্ত্রী আমিনা এবং দুই মেয়ে খাদিজা ও তাহমিনা, দুই বছরের ছেলে বাবুকে হত্যা করা হয়। একই ঘটনায় কাদের মোল্লার ১২ সহযোগী মিলে হযরতের ১১ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করে। হযরতের আরেক মেয়ে মোমেনা ওই সময় আত্মগোপন করে সেই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২০ জুন সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করে। রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী জবানবন্দি দেন ৩ জুলাই। এ পর্যন্ত কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দুজন তদন্ত কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রপক্ষের ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। একই মামলায় আসামিপক্ষের ৬ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলাটি প্রথমে ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারাধীন ছিল। চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল এ মামলা ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হলে নতুন করে অভিযোগের বিষয়ে শুনানি হয়। ২ থেকে ১৬ মে সাত কার্যদিবসে অভিযোগের বিষয়ে শুনানি চলে।
সম্পাদক : অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন | নির্বাহী সম্পাদক : কে এম মিঠু
প্রকাশক কার্যালয় : বেবি ল্যান্ড, বাজার রোড গোপালপুর, টাঙ্গাইল -১৯৯০, বাংলাদেশ।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - ২০১৯-২০২৩