আজ || রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
শিরোনাম :
  গোপালপুরে বেগম রোকেয়া দিবস পালনসহ জয়িতাদের সংবর্ধনা       গোপালপুরে নানা আয়োজনে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন       গোপালপুরে স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’র (SEIP) কর্মশালা       গোপালপুরে পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহের এ্যাডভোকেসি সভা       গোপালপুরে কয়েলের আগুনে পুড়ে মারা গেছে কৃষকের ৩ গরু       গোপালপুরে বাল্যবিয়ে বন্ধ করলেন ম্যাজিস্ট্রেট       গোপালপুরে বনায়নের নামে সরকারি অর্থের বৃক্ষচারা গরু-ছাগলের পেটে       গোপালপুরের অদম্য মেধাবী সামির সম্ভাবনার গল্প       গোপালপুরে গর্ভবতী গাভী জবাই করে গোস্ত নিয়ে রেখে গেছে মৃত বাছুর       গোপালপুরে ৫২তম জাতীয় সমবায় দিবস পালন    
 


শেষ বছরে নানা ইস্যুতে বিব্রত সরকার, চার বছরের খতিয়ান

:: বাংলাদেশটাইমস ডেস্ক ::

 

সরকারের পঞ্চম বছরে পর্দাপনের শুরু থেকেই নানান ইস্যুতে বিব্রত সরকারী মহল।

বিগত চার বছরে বহু ক্ষেত্রে সরকারের ব্যাপক সফলতা থাকলেও হলমার্ক জালিয়াতি, পদ্মাসেতু, বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড,যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে জামায়াত শিবিরের তান্ডব, বির্তকিত কর্মকর্তাকে পুলিশ পদক প্রদানের ঘটনায় মূলত:সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ব করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব ঘটনা সরকারের হাজারো সাফল্যকে ম্লান করে দিয়েছে।

প্রতিদিন রাজধানিসহ দেশের কোথাও না কোথাও পুলিশের উপর ,সাধারণ মানুষের উপর জামায়াত শিবিরের হিংসতান্ডবে জনমনে আতংক বিরাজ করছে।

পাশাপাশি জনগণের জানমালের  নিরাপত্তাও এখন হুমকির মুখে। তারা এ তাণ্ডব চালাচ্ছে মূলত যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং এই বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করাই তাদের উদ্দেশ্য। আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও স্থানিয় সরকার প্রাতিমন্ত্রী এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, জামায়াত শিবির ১৯৭১ সালে যেমনি করে প্রথমে পুলিশের উপর আক্রমণ চালিয়ে স্বাধীনতাও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে তাদের অভিষেক করেছিল ঠিক একই কায়দায় এখন আবার পুলিশকে তাদের আক্রমণের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত করে মাঠে নেমেছে। তাদের এ ষড়যন্ত্র এবং তাণ্ডবের জবাব দেবে দেশের জনগণ।

বর্তমান সরকারের শাসনামলে গত চার বছরে খুনগুমের ঘটনা বেড়েছে উদ্বেগ জনক হারে। আবার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কারামুক্তির মতো ঘটনায়ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সমালোচিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় ৭ হাজার ১০০ রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করা হয়। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি, শ্রমিক নেতা আমিনুলসহ সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ হত্যাকান্ডের ঘটনা ছিলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ঘটেছে রামুর বৌদ্ধপল্লীতে সহিংসতা, শিশু পরাগ অপহরণ, বিশ্বজিৎ খুন এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশের মুক্তির মতো চাঞ্চল্যকর সব ঘটনা।

তবে এসব ঘটনার পাশাপাশি চালের মূল্য মোটামুটি স্থিতিশীল থাকা, ঠিক সময়ে পাঠ্যপুস্তক বিরতণ করতে পারা, প্রবৃদ্ধি অর্জন, প্রবাসী আয় বাড়ানো, বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ রাস্তাঘাট উন্নয়নের বিষয়টিকে সাফল্য হিসেবে দেখছেন অনেকেই।

পুলিশের হিসেব অনুযায়ী চারদলীয় জোট সরকারের প্রথম চার বছরে খুনের ঘটনা ঘটে ১৪ হাজার ৫৫৪টি। আর বর্তমান মহাজোট সরকারের চার বছরে ১৬ হাজারের মতো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গুম হন অন্তত ১৫৬ জন। পুলিশ সদর দপ্তরের হিসেবে গত ১১ বছরের মধ্যে খুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি হয়েছে মহাজোট সরকারের প্রথম বছর ২০০৯ সালে। ওই বছর ৪ হাজার ২১৯টি খুনের ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে চারদলীয় জোট সরকারের ৫ বছরে সর্বাধিক খুনের ঘটনা ঘটে ২০০৬ সালে। ওই বছর ৪ হাজার ১৬৬টি খুনের ঘটনা ঘটে।

গত চার বছরের মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহ, রাজধানীর পুরান ঢাকায় নিমতলী ও সাভারের তাজরীন গার্মেন্টেসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ছিল সারাবিশ্বে আলোচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সহিংস ঘটনায় মেধাবী ছাত্র আবু বকর হত্যা, নরসিংদীর জনপ্রিয় পৌর মেয়র লোকমান হত্যা, যশোরের ঝিকরগাছা বিএনপির সভাপতি নাজমুল ইসলাম হত্যা এবং আমিনবাজারে ছয় ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও দেশব্যাপী আলোচিত হয়।

এছাড়া ২০১০ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুরে র‌্যাবের গুলীতে নিরীহ কলেজছাত্র লিমন হোসেন আহত ও পঙ্গু হওয়ার ঘটনাও দেশ-বিদেশের নজর কাড়ে। ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরকে ধরে নিয়ে খিলগাঁও থানায় আটক রেখে নির্যাতন করে পুলিশ। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভার দুর্ঘটনাও ছিলো আলোচনায়।

সেই সঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পিএসের গাড়িতে ৭০ লাখ টাকা পাওয়াসহ কয়েকজন মন্ত্রীর পদত্যাগ ও দপ্তর বণ্টন নিয়েও আলোচনা ছিলো বেশ মুখরোচক।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের বিপুল ভোটে জয়লাভের পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন গ্রগতিশীল মহাজোট।

গত বছরের আরেকটি আলোচিত বিষয় ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের কর্মসূচি থেকে পুলিশের ওপর কয়েকটি হামলা।

এসব হামলায় পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নেওয়া, গাড়ি পোড়ানো ও আইনমন্ত্রীর গাড়ির বহর আক্রান্ত হয়। এতে পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় জামায়াত-শিবিরের কয়েক শ নেতাকর্মীকে। আসামিদের তালিকায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখর্বল ইসলাম আলমগীরও রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের কথা থাকলেও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত চার বছরে বিনা বিচারে মারা গেছে অন্তত ৪৫০ জন। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ১৫৪, ২০১০ সালে ১২৭, ২০১১ সালে ৮৪ জন এবং ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৬৭ জন। গত বছর ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটে ৫১টি। এর মধ্যে গত ১২ আগস্ট রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে পাঁচ যুবক নিহত হন। এছাড়া সুন্দরবনে জলদস্যু ও বনদস্যুদের সঙ্গে র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এবং নোয়াখালীতে গণপিটুনিসহ পুলিশের গুলি বেশ কয়েকজন ডাকাত  মারা যায়।

অন্যদিকে গ্যাস, বিদ্যুৎ সংযোগ ও সরবরাহে ব্যর্থতা, ব্যাংকের তারল্য সঙ্কটে ঋণ দিতে না পারায় ক্ষুব্ধ ছিলেন ব্যবসায়ীরা। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেপরোয়া ছিলো আওয়ামী লীগের সহযোগী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ ও হামলায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। হামলায় আহত হয় সাধারণ শিক্ষার্থীসহ নিজ দলের নেতাকর্মীরাও। সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ঘটানো হয় অগ্নিসংযোগ। সংঘর্ষ ও হামলার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ছিলো খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সংঘটিত হয় সংঘর্ষ ও হামলা। ভিসি ও প্রো-ভিসির অপসারণের দাবিতে বুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ছিলো। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমান সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত ৫০০টি ছোট-বড় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের ফলে অন্তত ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!