চলতি অর্থ বছরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন হচ্ছে না। তবে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ ভাগের নীচে নেমে আসবে না বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার আগামী ৬ মাসের (জানয়ারি-জুন) জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান এ কথা জানান।
তিনি দাবি করেন, চলতি অর্থ বছরের এ প্রবৃদ্ধি হবে গত দশ বছরের গড় প্রবৃদ্ধির সমান।
নতুন মুদ্রানীতির ভঙ্গি নিয়ে গভর্নর জানান, এবারের মুদ্রানীতির ভঙ্গি হচ্ছে ভারসাম্যপূর্ণ। এ মুদ্রানীতিতে উৎপাদনশীল খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়বে। আর অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে নিরুৎসাহিত করা হবে। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে নতুন এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নররা ছাড়াও সিনিয়র কনসালটেন্ট মো. আল্লাহ্ মালিক কাজেমী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মুদ্রানীতি ঘোষণার পরে প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. আতিউর বলেন, জাতীয় প্রবৃদ্ধি ঠিক কত হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে দেয়া হয়নি। কারণ, নানা করণে দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে পরিস্থিতি বদলে যায়। তবে বছর শেষে যে প্রবৃদ্ধি হবে তা ভারতের চেয়েও বেশি হবে। প্রতিবেশি ভারতে জাতীয় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
মুদ্রানীতি সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে করা হয়েছে, কোনো প্রকার চাপ ছিল না দাবি করে তিনি বলেন, বাজার চাহিদার ভিত্তিতে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
আগামী ৬ মাসের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ শূন্য দশমিক ৫ ভাগ বাড়িয়ে ১৮ শতাংশ থেকে সাড়ে ১৮ শতাংশ করা হয়েছে। ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এজন্য ব্যাংকের তহবিল যোগানোর ব্যয় কমাতে রেপো এবং বিশেষ রেপোর (বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর আপদকালীন ধার) সুদের হার শূন্য দশমিক ৫ ভাগ কমিয়ে আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেন, উৎপাদন প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাজনিত চাহিদা দুর্বলতার ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি সাড়ে সাত ভাগের মধ্যে নামিয়ে আনার জন্য অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণ প্রবাহ কমানো হবে। তবে কাঙ্ক্ষিত হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য উৎপাদনশীল খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো হবে।
প্রসঙ্গত, ভোক্তা মূল্যস্ফীতি স্বস্তিকর নিম্নমাত্রায় পরিমিত ও স্থিতিশীল রেখে সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন প্রয়াসকে সহায়তা দিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও পরিচালনা করে থাকে।
ড. আতিউর জানান, দেশীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সামষ্টিক অর্থনীতির চলমান গতিধারার আলোকে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের অর্থাৎ জানুয়ারি-জুন ২০১৩ সময়কালের জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে।
নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়নের সময়ও বিশেষজ্ঞ ও স্টেকহোল্ডার মহলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মতামত, পরামর্শ ও পর্যবেক্ষণ সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশের গভর্নর।