আজ || বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪
শিরোনাম :
  গোপালপুরে ধোপাকান্দি ইউনিয়ন জাসাসের সম্মেলন ও কমিটি গঠন       গোপালপুরের কৃতি সন্তান ডা. আতিকুল ইসলাম পদোন্নতি পেয়ে অধ্যাপক হলেন       গোপালপুরে মেধাবী শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার দায়িত্ব নিলো ‘ডন লাইট ফাউন্ডেশন’       ছাতিম মানুষের পরম উপকারী গাছ       গোপালপুরে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের র‍্যালি       গোপালপুরে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ       গোপালপুরে শুশুয়া ভিল’র উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি       বিএনপি পরিবারের সদস্য হওয়ায় চাকরি হারিয়েছেন শিক্ষিকা হাফিজা খাতুন       গোপালপুরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে জাতীয় সমবায় দিবস পালিত       মধুপুর অগ্রণী ব্যাংক শাখা নতুন ভবনে স্থানান্তর উদ্বোধন    
 


কলকাতা শাসন করছে মৌলবাদীরা : তসলিমা নাসরিন

রুশদিকে কলকাতায় আসতে দেওয়া হবে না। খবরটি যখন শুনলাম, সত্যি বলতে কি, আমি অবাক হইনি। অবাক হবো কেন, আমাকেও তো আসতে দেওয়া হয় না, শুধু কলকাতায় নয়,  পুরো পশ্চিমবঙ্গেই আমার পা রাখা নিষেধ। সেই যে ২০০৭ সালে আমাকে তাড়ানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে, আজও আমি নিষিদ্ধ সেই রাজ্যে। শুধু আমার উপস্থিতিই  নয়, আমার বইয়ের উপস্থিতিও নিষিদ্ধ। গত বছর কলকাতা বইমেলায় আমার বই ‘নির্বাসন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান   বাতিল করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যে মানুষের বাক স্বাধীনতার ওপর পঁচিশ বছর ধরে হামলা হচ্ছে, যাকে দূর্বিষহ নির্বাসন-জীবন  যাপন করতে বাধ্য হতে হচ্ছে, বাংলায় লিখেও বাংলায় যার ঠাঁই নেই, শারীরিক আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে যাকে, সাত-আটটি মাথার-দাম যার মাথার ওপর, সে কেন এক লেখককে কলকাতার সাহিত্যক-বৈঠকে উপস্থিত হতে বাধা দেওয়ায় চমকে উঠবে!
অবাক হইনি, কিন্তু   রুশদিকে কলকাতার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া তীব্র প্রতিবাদ করছি।  প্রতিবাদ করেছি মকবুল ফিদা হুসেন,   এ কে রামানুজন, জেমস লেইন, রহিন্তন মিস্ত্রি, কমল হাসান-এর মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর যখন আঘাত এসেছে। যখনই ধর্মীয় মৌলবাদীরা কোনও কিছুর দাবি করে, সে দাবি যতই অন্যায় দাবি হোক, সরকারের মধ্যে তা-ই মেনে নেওয়ার একটা প্রবল প্রবণতা লক্ষ করেছি। অনেক সময় মৌলবাদীরা অখুশি হতে পারে বা ঝামেলা পাকাতে পারে এই ভয়ে আগ বাড়িয়ে সরকার-পক্ষ থেকে অনেক অযৌক্তিক এবং অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়। আমার ‘দ্বিখণ্ডিত’ বইটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০০৩ সালে ‘যদি কিছু হয়’ ভয়ে নিষিদ্ধ করেছিলেন।  রুশদিকে কলকাতায় আসতে বাধা দেওয়ার পেছনে সরকারের ওই ‘যদি কিছু হয়’র ভয়ই কাজ করেছে।
কিন্তু এসব আর কতদিন? আর কতদিন মৌলবাদীদের, বিশেষ করে মুসলিম মৌলবাদীদের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকবে সরকার, আর কতদিন ওদের অন্যায় আবদার মাথা নত করে মেনে নেবে? ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ, ভারত   বাংলাদেশও নয়, পাকিস্তানও নয়, ওসব দেশের   নড়বড়ে নাম কা ওয়াস্তে গণতন্ত্রের মত  ভারতের গণতন্ত্র নয়।    ভারত শিল্পে, শক্তিতে, শিক্ষায়, স্থিতিতে আজ উন্নত দেশের কাতারে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ভারত কেন নিজেকে   মুসলিম মৌলবাদীদের স্বর্গরাজ্য  হতে দিচ্ছে! হাতে গোণা কিছু মুসলিম মৌলবাদীকে খুশি করার জন্য অথবা ওদের ভয়ে আজ ভারতের  সংবিধানকে (১৯ক ধারা) অপমান করতে দ্বিধা করছেন না, দেশকে হাজার বছর পেছনে ঠেলে দিতে    আপত্তি করছেন না  নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা।  এর ফলে গোটা মুসলিম সম্প্রদায়, আর গোটা ইসলামই যে অসহিষ্ঞু বলে প্রমাণিত হয়ে গেল, তার দায় কে নেবে!  কেবল নির্বাচনে জেতার হিসেব!  দেশ গোল্লায় যাক, দেশের ভবিষ্যৎ গোল্লায় যাক, আমার নির্বাচনে জেতা চাই। প্রগতিবিরোধী, নারীবিরোধী, অর্বাচিন, অগণতান্ত্রিক, অশিক্ষিত, অসুস্থ, অসভ্য  মৌলবাদীদের দাবি মেনে নিয়ে যারা আজ  সভ্য শিক্ষিত প্রগতিশীল শিল্পী সাহিত্যকদের স্বাধীনতা হরণ করছে, মৌলবাদীদের শক্তি এবং সাহস বাড়াচ্ছে, তারা দেশের এবং দশের শত্রু, এ কথা আমি বলতে পারি, জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বলতে পারি।
মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!