বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইন্সের জন্য দুটি নতুন উড়োজাহাজ কিনতে সম্প্রতি ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঋণের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিমানে এখন একদিকে চলছে তীব্র উড়োজাহাজ সংকট আর অন্যদিকে বছরের পর বছর ধরে এটি চলছে একটি লোকসানী প্রতিষ্ঠান হিসেবে।
২০০৮ সালে মার্কিন বিমান সংস্থা বোয়িং-এর সঙ্গে বিমান নতুন প্রজন্মের ১০টি উড়োজাহাজ কেনার লক্ষ্যে চুক্তি করে। সেই অনুযায়ী বহরে যুক্ত হয় পালকি এবং অরুণ আলো নামে নতুন দুটি বিমান।
চুক্তি অনুসারে, ২০১৩ সালে আরো চারটি এবং ২০১৯ ও ২০২০ সালে পর্যায়ক্রমে আরো চারটি বিমান যুক্ত হবে বিমানের উড়োজাহাজ বহরে।
এরই ধারাবাহিকতায়, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি বিমানকে ১১ কোটি ৮০ লক্ষ মার্কিন ডলার ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, তাদের অ্যাকাউন্টে সংরক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে তারা ঐ অর্থ লন্ডনে সোনালী ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান সোনালী একচেঞ্জ লিমিটেডে জমা করেছে। সেখান থেকে সোনালী একচেঞ্জ বিমানকে ঋণ দিয়েছে।
“এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে নতুন উড়োজাহাজগুলো যেন সঠিকভাবে ব্যবহার হয়। না হলে এই বিনিয়োগ কোন কাজে আসবেনা।”
আর এই অর্থ নতুন দুটি বোয়িং ৭৭৭ ইআর উড়োজাহাজ কেনার কাজে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম মোসাদ্দিক আহমেদ। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।
বাংলাদেশের বিমান ও পর্যটন সংক্রান্ত মাসিক ম্যাগাজিন দ্য বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম মনে করেন রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা হিসেবে বিমানের নতুন উড়োজাহাজ প্রয়োজন রয়েছে।
”তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, নতুন উড়োজাহাজগুলো যেন সঠিকভাবে ব্যবহার হয়। নাহলে এই বিনিয়োগ কোন কাজে আসবেনা।”
বর্তমানে বিমানের বহরে ছয় ধরনের ১৩ টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এদের অধিকাংশই ৩০ বছরেরও বেশি পুরনো।
এই স্বল্প সংখ্যক উড়োজাহাজ দিয়ে বিমান ১৮টি আন্তর্জাতিক রুট পরিচালনা করছে। এর মধ্যে কেবলমাত্র ঢাকা-সিঙ্গাপুর এবং ঢাকা-জেদ্দাহ রুট দুটিতে বিমান লাভ করছে।
বাকী সবগুলো রুটেই বিমানের লোকসান হচ্ছে।
এর মূল কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করেন যে বিমানের পুরনো উড়োজাহাজগুলো জ্বালানিসাশ্রয়ী নয়। আর বিমানের পরিচালনা ব্যয়ের অর্ধেকই জ্বালানি ক্রয়ের জন্য ব্যয় হয় বলে জানিয়েছে বিমানের একাধিক সূত্র।
আর সেই সাথে পরিকল্পনার অভাব আর প্রশাসনিক দুর্বলতাকেও লোকসানের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পরপর দুই বছর মুনাফা করেছিল বিমান।
এরপর ২০১০ সালে ৮০ কোটি টাকা, ২০১১ সালে ২১০ কোটি টাকা এবং ২০১২ সালে ৬২৪ কোটি টাকা লোকসান করে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী এই এয়ারলাইন্স। সুত্রঃ বিবিসি