গত কিছুদিন ধরেই বাজারে ভোজ্যতেলের দামে বেশ অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। কিন্তু দেশীয় বাজারে ভোজ্যতেলের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার সিন্ডিকেট ভিন্ন অন্য কোন কারণ নেই বলে জানান সচেতনমহল। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে
১০ থেকে ১৫ টাকা।
মঙ্গলবার বাজারে প্রতিকেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১২৬-১৩০ টাকায়। ১৫ দিন আগেও এই ভোজ্যতেল ১১০-১১২ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া বোতলজাত তীর, মোস্তফা, ভিওলা, রূপচাঁদা, ফ্রেসসহ বিভিন্ন কোম্পানীর তেল প্রতি পাঁচ লিটার ৬৬০-৬৬৫, তিন লিটার ৪০০, দুই লিটার ২৬৫-২৬৮ ও প্রতি লিটার ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজার ও দোকান ভেদে দাম কম বেশীতে বিক্রি হচ্ছে বলে সরেজমিনে দেকা যায়।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত পাম তেলের দাম কমেছে প্রায় ২৩ শতাংশ। অথচ অভ্যন্তরীণ বাজারে উল্টো দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ কেজিপ্রতি খোলা ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১৫ টাকা। জানা যায়, ভোজ্যতেলের আমদানি পরিস্থিতি সন্তোষজনক। আন্তর্জাতিক বাজারে দামও কম। তারপরও দেশীয় বাজারে দাম বাড়ার কোন যৌক্তিক কারণ পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্য মতে, ট্যারিফ কমিশন থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাজারে যে খোলা সয়াবিনের (পাম তেল মিশ্রিত) দাম বেড়েছে গতবছর তার দাম ছিল প্রতি মেট্রিক টন এক হাজার ৪৮ ডলার প্রায়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত পাম তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি মেট্রিক টন ৮০৮ ডলারে। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের দাম কমেছে ২২ দশমিক ৯১ শতাংশ।
এছাড়া জানা যায়, গত জুলাই থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট সাত লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। এরমধ্যে বন্ড থেকে সয়াবিন খালাস হয়েছে এক দশমিক ৬৯ মেট্রিক টন এবং পাম তেল খালাস হয়েছে চার দশমিক ৬৯ মেট্রিক টন। বাকি তেল বন্ডে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। সারা বছর প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন চাহিদা রয়েছে ভোজ্যতেলের। সে অনুযায়ী আমদানি পরিস্থিতি সন্তোজনক। কিন্তু স্থানীয় বাজারে উল্টো দাম বাড়ছে। এ বিষয়ে অনেকের মন্তব্য বাজার মনিটরিংয়ে কিছুটা ঢিলেমি থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সক্রীয় হয়ে উঠেছে। তারা পণ্য মজুদ করে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। তেলের এই সিন্ডিকেট বরাবরের মতোই রয়েছে বলে অভিমত অনেকের।
সরকারি হিসাবে, দেশে প্রতি মাসে পাম ও সয়াবিনের চাহিদা ১ লাখ ৫ থেকে ১০ হাজার টন। চলতি মাসে এ দুটি তেল আমদানি হয়েছে চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কখনও কম এবং কখনও স্থিতিশীল থাকার কারণেই এত বিপুল আমদানি। রোজা ও ঈদের সময় ভোজ্যতেলের চাহিদা দাঁড়ায় ১ লাখ ৬০ থেকে ৭০ হাজার টনে। স্বভাবতই তখন আমদানিও হয় বেশি। বাস্তবতা হল, তেল আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা এই ডেমারেজের ক্ষতিও পুষিয়ে নিতে চান দফায় দফায় তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়ে। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলোর মনিটরিং জোরদার করতে হবে আমদানি, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাইকারি ও খুচরা বাজারে। তা না হলে ভোজ্যতেলের বাজারে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। আর বরাবরের মতোই এর মাশুল দিতে হবে ভোক্তাদের।
এদিকে, সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সচিবের সঙ্গে এক বৈঠকে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা বলেন, হঠাৎ ঘন কুয়াশা ও বেশি শীত কারণে পণ্য পরিবহনে বিলম্ব হওয়ার বাজারে তেলের সাময়িক ঘাটতি হয়েছে। এছাড়া শীতে অন্য ভোজ্যতেল জমাট বাঁধায় সয়াবিনের বাড়তি চাহিদায় দাম বেড়েছে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বাজারে দাম বাড়ালেও দ্রুত তা সহনীয় পর্যায়ে আসবে। কেননা তেলের মজুদের ঘাটতি নেই। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলেও ব্যবসায়ীরা আশ্বস্ত করেন।