মন্দা বাজারে মূলধন আটকে গেছে, এমন যুক্তি দেখিয়ে দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনিয়োগ বিমুখ মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো। তবে আইপিও বাজারে অতিরিক্ত আবেদন প্রমান করে ফান্ডগুলোর হাতে বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট অর্থ রয়েছে। তারপরও কি কারণে ফান্ডগুলো বাজারের স্বার্থে অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে না সে বিষয়টি এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
জানা যায়, সর্বশেষ গোল্ডেন হার্ভেস্টের আইপিওতে ১ লাখ ৬ হাজার ৭২টি আবেদনের বিপরীতে ৭৯ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা পড়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত থেকে। যার মধ্যে ৯ হাজার ৫৮টি এলোটমেন্ট দেয়া হবে। এর আগে প্রিমিয়ার সিমেন্টের আইপিওতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কাছ থেকে ১২৭ কোটি ৩২ লাখ ৯৪ হাজার টাকার আবেদন জমা পড়েছিল।
একইভাবে জেনারেশন নেক্সটের বেলায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩০ লাখ শেয়ার। যার বিপরীতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর কাছ থেকে ২ লাখ ৩১ হাজার ৪০০টি আবেদন জমা পড়ে। টাকার অংকে যার পরিমান ১১৫ কোটি ৭০ লাখ।
আর্গন ডেনিমসের আইপিওতে বিভিন্ন মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকার আবেদন জমা দেয়।
সানলাইফের আইপিওতে ক্ষতিগ্রস্ত ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড ক্যাটাগরি মিলিয়ে ১০ লাখ ৬০ হাজার ৪২৯টি আবেদনের সঙ্গে ৭৪৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা জমা পড়েছিল।
এছাড়া এনভয় টেক্সটাইলের আইপিওতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩০ লাখ শেয়ার। ২০ টাকা প্রিমিয়ামসহ কোম্পানির এ পরিমান শেয়ারে আবেদন করতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর লেগেছে কমপক্ষে ৯ কোটি টাকা।
সামিট পূর্বাঞ্চলের আইপিওতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর জন্য বরাদ্দ ছিল ৩০ লাখ শেয়ার। ৩০ টাকা প্রিমিয়ামসহ এ কোম্পানিতে আবেদন করতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর কমপক্ষে ১২ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী একটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড তাদের পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ আইপিও আবেদনের জন্য ব্যবহার করতে পারে। আর তা যে কোম্পানিতে আবেদন করা হবে সে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ১৫ শতাংশের বেশি হবে না।
বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৪১টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মোট পরিশোধিত মূলধন ৩ হাজার ২০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর ১০ শতাংশ হচ্ছে ৩২০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ তালিকাভুক্ত ফান্ডগুলো একটি কোম্পানির আইপিওতে এ পরিমান টাকার আবেদন করতে পারে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুধুমাত্র প্রিমিয়ার সিমেন্টের আইপিওতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের পরিশোধিত মূলধনের প্রায় ৪ শতাংশ পরিমান টাকার আবেদন জমা পড়েছে। একই সময়ে একাধিক আইপিও থাকায় অন্যগুলোতে আবেদনের সক্ষমতা না থাকার কথা থাকলেও মিউচ্যুয়াল ফান্ড কোটায় অতিরিক্ত আবেদন পড়েছে। বরং অনেক কোম্পানির আইপিওতে শুধুমাত্র মিউচ্যুয়াল ফান্ডের জন্য লটারি হয়েছে। যা মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর কাছে যথেষ্ট বিনিয়োগযোগ্য তারল্য রয়েছে বলে প্রমান করে।
এদিকে এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পাগিুলো ফান্ডগুলোর সেকেন্ডারী মার্কেটে বিনিয়োগ না করার যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারেনি। একাধিক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এসেট ম্যানেমেন্ট কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে বিষয়টি তারা কৌশলে এড়িয়ে যান। কি কারণে ফান্ডগুলো শুধু আইপিও বাজারেই বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ রেখেছে সে বিষয়েও তারা কথা বলতে রাজী হয়নি।
বাজারের স্বার্থে ফান্ডগুলোকে তালিকাভুক্ত করা হলেও ক্রান্তিকালে বাজারবিমুখ থাকাকে এসব প্রতিষ্ঠানের অপেশাদারিত্বের পরিচয় বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। মার্চেন্ট ব্যাংকার্সদের মতে, হাতে টাকা রেখেও ফান্ডগুলো বাজারে বিনিয়োগে ফিরছে না। একটি কোম্পানির আইপিওতে ১২৭ কোটি টাকার আবেদন তাই প্রমান করে। ফান্ডগুলো শুধু আইপিওতে বিনিয়োগের মাধ্যমেই তাদের ব্যবসা সবল রাখার চেষ্টা করছে। অথচ সঙ্কটের সময় বাজারকে সাপোর্ট দেবার জন্যই ফান্ডগুলোকে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, গত ২০১০ সালের ধসে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগও আটকে যায়। ধস পরবর্তি মন্দায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতো মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোও বিনিয়োগবিমুখ হয়ে পড়ে। আর কারণ হিসেবে এসেট ম্যানেজাররা বলতে থাকে ধসে তাদের অধিকাংশ মূলধন আটকে গেছে। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তারা বিনিয়োগে ফিরতে পারছে না। টানা দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছে তাদের এ দোহাই। অথচ নতুন কোম্পানির আইপিও আবেদনের সময় ফান্ডগুলোর অতিরিক্ত আবেদনে অর্থের ঘাটতি হচ্ছে না।
বাজার সংশ্লিষ্টরা আরো বলেন, মূলত: সেকেন্ডারী মার্কেটে স্বল্প মুনাফার পাশাপাশি লোকসানের ভয় বেশি থাকার কারণেই ফান্ডগুলোর এ আচরণ হয়ে থাকতে পারে। অর্থাৎ বাজারে স্থিতিশীলতা না থাকার কারণে ফান্ডগুলো আইপিও বাজারের মাধ্যমে ব্যবসা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেকেন্ডারী মার্কেটে ক্রেতা না থাকলে আইপিও বাজারে ব্যবসা করার চিন্তা করা বোকামি। এতে আইপিও আবেদনে জয়ী হলেও বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই ফান্ডগুলোর উচিত হবে প্রাইমারী মার্কেটের পাশাপাশি সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ বাড়ানো। কারণ, বাজারে পর্যাপ্ত ক্রেতা বিক্রেতা থাকা মানেই বাজার স্থিতিশীল হয়ে উঠবে।
সম্পাদক : অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন | নির্বাহী সম্পাদক : কে এম মিঠু
প্রকাশক কার্যালয় : বেবি ল্যান্ড, বাজার রোড গোপালপুর, টাঙ্গাইল -১৯৯০, বাংলাদেশ।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - ২০১৯-২০২৩