আজ || রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
শিরোনাম :
  গোপালপুরে মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে গণশুনানি       ভূঞাপুর মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নতুন কমিটি       গোপালপুরে ১৮ বছর পর স্বনামে ফিরলো আব্দুস সালাম পিন্টু কলেজ       গোপালপুরে বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত       ক্ষেতের আইল দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে ভোগান্তিতে শিশু শিক্ষার্থীরা       গোপালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কমিটি গঠন       গোপালপুরে জামায়াতে ইসলামীর পৌর শাখার কর্মী সম্মেলন       ইমনরা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে: টাঙ্গাইল জেলা জামায়াত আমীর        গোপালপুরে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন       ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগকে এদেশের মানুষ মাথা তুলে দাড়াতে দিবেনা : সালাউদ্দীন আহমেদ    
 


ক্ষমতা ও সরকারের নৈতিকতার বলয়ে ঘেরা বিশ্বজিৎদাসের বিচার!

undefined
রাজনীতি যে এত নিষ্ঠুর, মানুষ যে এত নৃশংস এবং একটি ছাত্রসংগঠন যে এমন দানব হতে পারে, তা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে।বিশ্বজিৎ দাস নামের যে যুবকটি বাসা থেকে নিজের কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন, তিনি কি ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করছিলেন, মৃত্যুদূত তাঁর সামনে অপেক্ষা করে আছে। আর সেই মৃত্যুদূতের নাম ছাত্রলীগ।

নির্বাচনী ইশতেহারে ২০০৮ সালে,শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাস মুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আর ছাত্রলীগের ঘোষণা পত্রে ও গঠনতন্ত্রে বলা আছে শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির কথা।তবে গত তিন বছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, খুনোখুনি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এমনকি ধর্ষণের মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে এসব ঘোষণাকে রীতিমতো প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। এখন প্রশ্ন উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নৈতিকতা নিয়েও। শিক্ষাবিদেরা বলছেন, ছাত্রলীগের চরম নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে।সবার পরিচয় প্রকাশিত হওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।পুলিশ চাপের মুখে ছাত্রলীগের ছয় কর্মীকে গ্রেপ্তারে বাধ্য হলেও ‘নিরীহ’ চার ব্যক্তি এখনো এ মামলায় গ্রেপ্তার আছেন।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর প্রথমে ওই ডিসির মুখ থেকে শুনেই ‘বিশ্বজিৎ দাসহত্যায় আটজন গ্রেপ্তার হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য নিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। আটজন গ্রেপ্তারের কথা বলার পর তিনি আবার ১১ জনে রকথা বলেছিলেন; সেই হিসাব এখনো মেলেনি।সেই আটজন কারা, কীভাবে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, এতে দেখা যায়, এঘটনায় প্রথমে যে আট জনকে গ্রেপ্তার করারকথা বলা হয়েছিল, তাদের কোনো নাম-ছবি গণমাধ্যমে আসেনি। এদের কেউ ছাত্রও নয়।বরং প্রথমে পুলিশ তাদের ‘সন্দেহ জনক ঘোরাঘুরির’অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। দুদিন পর এদেরচারজনকে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলারআসামি করা হয়। মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়অন্য চার জনকে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, বিশ্বজিৎহত্যার দুদিন পর ১১ ডিসেম্বর ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়—এমন আট জনকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। প্রথমে তাদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো হয়, এরা বিশ্বজিৎদাস হত্যার আসামি। ওই কর্মকর্তার কথা শুনেই মন্ত্রী গণমাধ্যমের কাছে আটজনকে গ্রেপ্তারের কথা বলেন। কিন্তু ওই দিন মামলা তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই উপকমিশনার কোতোয়ালি থানায় আটক আটজনকে পরে সূত্রাপুর থানায় পাঠিয়ে তাদের বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বলেন। কিন্তুএতে ওয়ারি বিভাগের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত চাপেরমুখে চারজনকে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই চার জনসহ বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় এখন গ্রেপ্তার আছেন ১০ জন।

ফাঁসানো হলো যাঁদের: গ্রেপ্তার দেখানো চার জনহলেন মামুন অর রশীদ (২৪), ফারুক হোসেন (২৩),মোসলেহ উদ্দিন ওরফে মোসলেম (৪০) ওকাজী নাহিদুজ্জামান ওরফে তুহিন (৩২)।অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১১ ডিসেম্বর কোর্টএলাকা থেকে মামুন, ফারুক, মোসলেহ,নাহিদুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। ১২ডিসেম্বর তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।আদালতে দেওয়া কাগজপত্র অনুযায়ী,আসামিরা আদালত এলাকায় সরকার বিরোধী স্লোগানসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্যে সন্দেহমূলক ঘোরাফেরা করছিলেন। এ কারণে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর ১৩ ডিসেম্বর সূত্রাপুর থানার পুলিশ বিশ্বজিৎ হত্যায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখায়। মামুন, ফারুক ও মোসলেহ উদ্দিনের বাসায় যোগাযোগ করা হলে  তাঁদের পরিবার ও অভিযোগ করেন, বিশ্বজিৎকে কারা মেরেছে তা স্পষ্ট। অথচ নিরপরাধ মানুষদের ধরে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।ডিসেম্বর রাতে জানা গেল ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারকরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার সাবেক তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রাপুর থানার এসআই মাহবুবুল আলম আকন্দ জানান, বিশ্বজিৎ হত্যার সময় ওই চারজন ঘটনাস্থলে ছিলেন, এমন তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।কিন্তু তাঁদের তো ১১ তারিখ সন্দেহজনক ঘোরাঘুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একথা বললে মাহবুবুল আলম ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

ছয় আসামি রিমান্ডে: ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলীয় জোটের রাজপথ অবরোধকর্মসূচি চলাকালে বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে ওপিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া অন্য ছয়জন হলেন: রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল, মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, এইচএম কিবরিয়া, জি এম রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওন,সাইফুল ইসলাম ও কাইয়ুম মিয়া। এঁরা সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র ওছাত্রলীগের কর্মী। কাইয়ুম ছাড়া পাঁচজনের ছবি-পরিচয় গণমাধ্যমে এসেছে। তাঁরা প্রত্যেকেই আটদিন করে রিমান্ডে আছেন। বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!